১৭ জানুয়ারি শারীরিক অসুস্থতা জনিত কারণে মৃত্যু হয় কবি ও গীতিকার বিপ্লব চক্রবর্তীর। তাঁর মৃত্যুর তথ্যটি নিশ্চিত করেন নির্মাতা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী।
এই নির্মাতার প্রথম চলচ্চিত্রে ব্যবহার করা হয়েছিল বিপ্লব চক্রবর্তীর লেখা ’মানুষ আমি আমার কেনো পাখির মতো মন’ গানটি। এই গানটি ছাড়াও, ’আমি যারে ভালোবাসি, তারে আবার বাসি না’ গানটিও জনপ্রিয় শ্রোতাদের কাছে।
মোস্তফা সরয়ার ফারকী এক ফেসবুক পোস্টে লিখেন, ’শাহবাগের অস্ত যাওয়া সূর্যের মতোই বিপ্লব দা‘র কথাও কি আমরা প্রায় ভুলেই গেছিলাম। কাল ভোরে মরে গিয়েই কি তবে বিপ্লব দা মনে করিয়ে গেলেন “আমি ছিলাম”?
বিপ্লব দা‘র ভাগ্নের পাঠানো মেসেজে জানলাম বিপ্লব দা‘র এই পৃথিবী ভ্রমণ শেষ হয়েছে। আমাদের সময়টাকে চেনা যাবে না যদি আমাদের বেড়ে ওঠার সময়ের মানুষদের চেনা না যায়। বিপ্লব চক্রবর্তী, আমাদের বেড়ে ওঠার সময়ের এক উল্লেখযোগ্য চরিত্র। “মানুষ আমি আমার কেনো পাখির মতো মন” বা “আমি যারে ভালোবাসি, তারে আবার বাসি না”- এই গানগুলা বিপ্লব দার উজ্জ্বল তারুণ্যে লেখা। “পাখির মতো মন”র কথা ভাবলে মনে হয় কতো আগে বসে বিপ্লব দা উনার পরে যে প্রজন্ম আসবে সে প্রজন্মের ইশারা দিয়ে গেছেন। ব্যাচেলর ছবিতে এই গানটা ব্যবহারের পিছনে আমাদের মূল চিন্তা ছিলো যে এইরকম জেনারেশন ডিফাইনিং গান বিরল। বিপ্লব দা, জাহিদ আহমেদ আরো কতো কতো চরিত্ররা এই মুহূর্তে শাহবাগের ধুলাবালি ঠেলে আমার স্মৃতিতে ভেসে আসতেছে। আর তাদের পেছনে পেছনে আসতেছে রোদ, কড়া রোদ, রোদের নহর, এই শীতের শহরে।’
এই গীতিকবির মৃত্যুতে তাকে নিয়ে স্মৃতিচারণ করে একটি লেখা লিখেছেন কবি টোকন ঠাকুর। লেখাটিতে টোকন বলেন ‘একথা সত্যি, বিপ্লব চক্রবর্তীকে যখন আমরা কাছাকাছি দেখেছি, তখন তাঁর মুখ বেশিরভাগ সময়ই ছিল শ্মশ্রুমণ্ডিত। কখনওই যে তাঁকে ক্লিন অবস্থায় দেখিনি, তাও নয়। আর নাইনটিজের শাহবাগ যেমন ছিল, আজকের তুলনায় লোকজনই তো ছিল কম কম। ভরপুর হাওয়াবাতাস ছিল। চারুকলা ছিল। পাবলিক লাইব্রেরি ছিল। আজিজ মার্কেট ছিল। টিএসসি ছিল। ওদিকে দোয়েল চত্বর এবং উদ্যান ছিল। এতদাঞ্চলে কিছু লোক ছিল যেমন অতিথি অতিথি, কিছু লোক ঘণ্টা দুয়েক, কিছু লোক হাফবেলা হাফবেলা, কিছু লোক সারাদিন, কিছু লোক বিকাল বিকাল, কিছু লোক সন্ধ্যা সন্ধ্যা ছিল। কিছু লোক সারাদিন থাকত, কিছু লোক সারারাত। কেউ কেউ মৌসুমের পর মৌসুম বা বছরের পর বছর কাটিয়ে দিছে। অর্থাৎ এক মৌসুম সে হয়তো একদিনের জন্যেও শাহবাগ অঞ্চলের বাইরে যায়নি। তারা কোথায় ঘুমাত, কোথায় স্নাহাহার করত , সে এক রহস্য হয়ে থেকে যাবে বর্তমান পোলাপানদের কাছে। এরকম কিছু লোক…লোক নয় পাখি; সেই রহস্যের পাখি এসে শূন্যে ওড়াউড়ি করে। তারপর একদিন হয়তো তারা হারিয়েও যায়। জানা যায় না আর, সেই পাখি কোথায় হারায়?
একটু আগে হোয়াটসঅ্যাপে এই ছবিটা পাঠাল সরয়ার। সরয়ারকে এই ছবি নেত্রকোণা থেকে পাঠিয়েছে যে, সে বিপ্লব চক্রবর্তীর ভাগ্নে। বলেছে, ‘মামা আজ মারা গেছে। মামা মাঝেমাঝে আপনাদের কথা বলত। সেই সময়ের শাহবাগের কথা বলত।’ বিষণ্ণতাস্পৃষ্ট গলায় সরয়ার বলল, ‘আচ্ছা, আমাদের সেই বিপ্লব মানে গানের বিপ্লব চক্রবর্তীর মুখে তো দাঁড়িগোঁফ ছিল। এইটা কে?’
এইটা বিপ্লব চক্রবর্তীই। আমি কনফার্ম করলাম। দেখলাম, ফটোগ্রাফার আমাদের বারীন, বারীন ঘোষ। অনেকদিন আগে ঢাকা শহর ছেড়ে নেত্রকোণায় ফিরে যাওয়া বিপ্লব দা’র লেখা একটি গান সরয়ার ওর প্রথম ছবি ‘ব্যাচেলর’এ ব্যবহার করেছিল। সরয়ার, সংবাদটা দিয়ে বিষণ্ণ করে দিলি!
প্রয়াত বিপ্লব চক্রবর্তীর লেখা সেই গানের প্রথম অংশ দিয়েই এই স্ট্যাটাস শেষ করছি_
মানুষ আমি আমার কেন পাখির মতো মন
তাই রে নাই রে করে গেল সারাটি জীবন…’