ঠাকুরগাঁওয়ে গত ৭ বছর ধরে তালবীজ বপণ করে আসছেন (৬৭) বছর বয়সী ইমাম মো.খোরশেদ আলী। পরিবেশ সচেতনতায় তিনি ২০১৪ সাল থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত পর্যায়ক্রমে প্রতিবছর ৫ হাজার করে তালবীজ বপন করেছেন। বর্তমানে তার পরিচর্যায় প্রায় ৩৫ হাজারের বেশি তালের চারাগাছ রয়েছে। একদিকে তালগাছকে বিলুপ্তির পথ থেকে বাঁচিয়ে রাখতে এবং পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় ব্যতিক্রমী উদ্যোগ নিয়েছেন এই প্রবীণ।
ঠাকুরগাঁওয়ের ৭নং চিলারং ইউনিয়নের ইমাম মো. খোরশেদ আলী পেশায় একজন পল্লী-চিকিৎসক। তিনি তালের বিজ রোপণ করতে গিয়ে বিক্রি করেছেন তার পৈতৃক কৃষিজমি। তবুও থেমে থাকেননি খোরশেদ আলী। তালের আঁটি সংগ্রহ করা সহজ ছিল না। বিভিন্ন গ্রামে ঘুরে-ঘুরে তালবীজ সংগ্রহ করতে এতে অনেক শ্রম ও শ্রমিক লেগেছে তার। চিলারং ইউনিয়নের রেলঘুন্টি থেকে আখানগড় রেলস্টেশন পর্যন্ত তার রোপণ করা বীজের সাড়ে ৩ হাজার তালগাছ এখন দৃশ্যমান।
ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার পল্লীবিদ্যুৎ বাজার থেকে বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার কাদসূকা ব্রিজ পর্যন্ত প্রায় ৮ কিলোমিটার এবং কাদসূকা ব্রিজ থেকে চৌরঙ্গী বাজার পর্যন্ত ১০ কিলোমিটার সড়কের দু’ধারে এ মহাযজ্ঞ চালিয়ে গেছেন তিনি। তবে এতে কত টাকা ব্যয় হয়েছে জানতে চাইলে তিনি টাকার হিসাব প্রকাশে অপারগতা প্রকাশ করেন।
পরিবেশ সচেতন খোরশেদ আলী বলেন, মানুষের চলার পথে টাকা-পয়সা বড় কথা নয়। মানুষের মধ্যে স্মৃতি হয়ে থাকতে চাই। পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় গত ৭ বছর ঠাকুরগাঁও জেলার বিভিন্ন স্থানে ও রাস্তার পাশে তাল বীজ বপণ করেছি। নিয়মিত গাছ পরিচর্যার জন্য তিনি পাহারাদার রেখেছেন। তিনি আরও বলেন, প্রতিবছর রাস্তায় ৫ হাজার করে তাল বীজ বপণ করেছি। এ কাজে যারা সহযোগিতা করেছেন তাদের প্রতি আমি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।
দূর্যোগ হতে প্রকৃতি ও পরিবেশ ও মানুষকে রক্ষা এবং পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় তালবীজ বপণে ব্যক্তি উদ্যোগের পাশাপাশি সমাজের বিত্তবানদের এগিয়ে আসার আহ্বান তিনি।
আর এ বছরেই ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কমপক্ষে ১০টি করে বিভিন্ন প্রজাতির গাছের চারা বিনা মূল্যে রোপণের জন্য বিতরণ করবেন বলে জানান তিনি। এ লক্ষ্যে প্রায় ৩০ হাজার গাছের চারা প্রস্তুত করা হচ্ছে বলেও জানান।
এছাড়া সবাইকে কমপক্ষে পাঁচটি করে বিভিন্ন প্রজাতির গাছের চারা রোপণের জন্য আবেদন জানিয়ে খোরশেদ আলী বলেন, সরকারিভাবে বেশি-বেশি গাছের চারা বিতরণের উদ্যোগ নেয়ার জন্য সংশ্লিষ্টদের কাছে জোর দাবি করছি।
এছাড়া ঠাকুরগাঁওয়ে লক্ষাধিক তালের চারা গাছ লাগিয়ে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা ও উন্নয়নে কাজ করবে তিনি বলেও জানান।
ঠাকুরগাঁও বন বিভাগের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম বলেন, খোরশেদ আলীর কাজ সারাদেশে অনন্য নজির হয়ে থাকবে। এ ধরনের কাজ আরো কিছু মানুষ করলে দেশ দশ ও পরিবেশ ও প্রকৃতির উপকারে আসবে। খোরশেদ আলীর মতো তালসহ অন্যান্য গাছ লাগাতে সকলকে এগিয়ে আসার আহবান এই বন কর্মকর্তার।
আর এমন মহৎ উদ্যোগ নেয়ায় খোরশেদ আলীকে সাধুবাদ জানিয়েছেন ঠাকুরগাঁও জেলার জেলা প্রশাসক মো. মাহবুবুর রহমান, এছাড়াও জেলা পুলিশ প্রশাসনসহ বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ।
তালগাছ বজ্রপাত প্রতিরোধসহ বিভিন্ন প্রাকৃতিক দূর্যোগে বিশেষভাবে উপকার করে।