প্রথম আলোর জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক রোজিনা ইসলামের বিরুদ্ধে ‘অফিশিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্ট’ আইনে দায়ের করা মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছে ব্রডকাস্ট জার্নালিস্ট সেন্টার (বিজেসি)। একইসঙ্গে রোজিনার নিঃশর্ত মুক্তি ও তাঁকে হেনস্তাকারীদের শাস্তির আওতায় আনার দাবি জানিয়েছে সংগঠনটি।
বুধবার রাজধানীর কারওয়ান বাজারের সার্ক ফোয়ারার চারপাশে অবস্থান কর্মসূচি পালন করে বিজেসির সদস্যরা। এসময় তারা ৪ দফা দাবি তুলে ধরে। দাবিগুলো হলো-
১. অবিলম্বে সাংবাদিক রোজিনা ইসলামের মামলা প্রত্যাহার ও নিঃশর্ত মুক্তি দিতে হবে। একইসঙ্গে তাকে নির্যাতন ও হেনস্তাকারীদের শাস্তির আওতায় আনতে হবে,
২. সাংবাদিক নিপীড়ন বন্ধ করে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ও সংবাদকর্মীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে,
৩. ব্রিটিশ আমলের অফিশিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্ট বাতিল করতে হবে এবং
৪. ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের সাংবাদিকতা পরিপন্থি অংশ বাতিল করতে হবে।
আগামীকাল রোজিনার জামিন না হলে কঠোর আন্দোলনের কথা জানায় সংগঠনটি। রোজিনা ইসলামকে মুক্তি না দেওয়া পর্যন্ত সাংবাদিকরা যাতে ঘরে ফিরে না যান, উপস্থিত গণমাধ্যমকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানান বিজেসির নেতারা।
বিজেসির চেয়ারম্যান রেজোয়ানুল হক রাজা বলেন, সরকারের পক্ষ থেকে যে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে, তা কতটুকু কার্যকর হবে, এটা নিয়ে সবার মনে প্রশ্ন আছে। কেননা বুধবারের গণমাধ্যমে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে যে বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়েছে, তাতেও রোজিনা ইসলামকে দোষী হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। স্বাধীন তদন্ত কমিশন গঠন করে সুষ্ঠুভাবে তদন্ত করার আহ্বান জানান তিনি।
বিজেসির সদস্যসচিব শাকিল আহমেদ বলেন, সাংবাদিকেরা গণমাধ্যমের বিভিন্ন সংকটে এক সুরে কথা বলছেন না বলেই রোজিনারা বারবার গ্রেপ্তার হচ্ছেন। বিভিন্ন নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন। সাংবাদিকদের পরস্পরের হাত ধরে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার অঙ্গীকার করতে হবে। বছরের পর বছর ধরে যেসব অন্যায় চেপে বসে আছে, তা দূর করতে হবে।
বিজেসি ট্রাস্টি ইশতিয়াক রেজা বলেন, ‘সচিবালয়ে যেখানে মানুষের সবচেয়ে নিরাপদ থাকার কথা সেটা এখন হয়ে উঠেছে টর্চার সেল। রোজিনার উপর হামলা আসলে রাষ্ট্রের মালিকের ওপর চাকরের হামলা, এটা হেফাজতে নির্যাতন।‘
এসময় তিনি তদন্ত করে রোজিনা ইসলামের ওপর যে নির্যাতন করা হয়েছে, সে চিত্র তুলে আনতে মানবাধিকার কমিশনের প্রতি আহ্বান জানান।
বিজেসির নেতাকর্মীদের পাশাপাশি অবস্থান কর্মসূচিতে অংশ নেন সাবেক প্রধান তথ্য কমিশনার গোলাম রহমান। রোজিনা ইসলামের ঘটনায় আইনের অপপ্রয়োগ হয়েছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
উল্লেখ্য, গত সোমবার প্রথম আলোর জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক রোজিনা ইসলামকে সচিবালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগে প্রায় ছয় ঘণ্টা আটকে রেখে হেনস্তা করা হয়। রাতে রাজধানীর শাহবাগ থানায় অফিশিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্টে করা মামলায় তাঁকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। মঙ্গলবার সকালে রোজিনা ইসলামকে আদালতে তোলা হলে আদালত তাঁর বিরুদ্ধে রিমান্ড আবেদন নাকচ করে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। বুধবার রোজিনার বিরুদ্ধে মামলাটি পুলিশের গোয়েন্দা শাখায় (ডিবি) হস্তান্তর করা হয়েছে।