fbpx

অস্তিত্ব সংকটে পরিবেশ বন্ধু!

Pinterest LinkedIn Tumblr +
Advertisement

পরিবেশের পরিচ্ছন্নতাকর্মী শকুন। বৃহৎদাকার এই পাখিটি নিয়ে অনেক অশুভ মিথ থাকলেও এর আছে মহান সব গুণ। প্রকৃতির সমস্ত মৃত প্রাণী খেয়ে, পরিবেশকে দূষণ থেকে রক্ষা করাই যেন তার প্রথম এবং প্রধান দায়িত্ব।

বনে, বাদাড়ে এবং গৃহস্থালির প্রাণী মরে বাতাস ও পরিবেশকে দূষিত করার পাশাপাশি পানিতে ছড়ায় কলেরাসহ নানা রোগ-জীবাণু। শকুনের পাকস্থলি মৃত প্রাণীর সাথে সেসব জীবাণুও হজম করতে সক্ষম। এমনকি মৃত প্রাণীর হাড় পর্যন্ত হজম করার ক্ষমতা রাখে এটি।

৯০ দশকের দিকে হঠাৎ করেই প্রকৃতিতে শকুনের সংখ্যা কমতে শুরু করে। আর তার পরিমাণ এতোটাই ভয়াবহ ছিলো যে, আকাশে কোন শকুন উড়তে দেখা গেল না অনেকদিন। নড়েচড়ে বসলো পরিবেশ সংরক্ষণের সংগঠনগুলো।

বাংলাদেশ বার্ডস ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা ইনাম আল হক বিবিএস বাংলার সাথে আলাপকালে বলেন, ‘শকুন যে বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে এটা বুঝতেই আমাদের অনেক দেরি হয়ে গেছিলো। সত্তর বা আশির দশকে পুরো ভারতবর্ষে ২৩ প্রজাতির প্রায় ৫ কোটিরও বেশি শকুন ছিল। ৯০ দশকে বিনা নোটিশে তা কমে দাঁড়ালো মাত্র ২০ হাজারে। অর্থাৎ প্রায় ৯০ ভাগ শকুন বিলুপ্ত। গত তিন দশকে বাংলাদেশে মারা গেছে প্রায় ৯৯ শতাংশ শকুন। দেশের ৬ প্রজাতির শকুনের মধ্যে কোনমতে টিকে থাকলো মাত্র আড়াইশো বাংলা শকুন।’

পক্ষীবিশারদ ইনাম আল হক বলেন, ‘শকুন যেহেতু মৃত প্রাণী খায়, তাই এটি বিলুপ্ত হওয়ার পেছনের কারণ খুঁজতে আমেরিকার এক প্রাণীবিজ্ঞানী মৃত প্রাণীদের উপর একটি গবেষণা শুরু করলো। তাতে দেখা গেল, গবাদি পশু বিশেষ করে গরুকে দেওয়া ব্যাথানাশক ওষুধ ডাইক্লোফেনাক যেসব মৃত পশুদের শরীরে প্রয়োগ করা ছিল, শকুন সেসব গরুর মাংস খেয়েই মারা গেছে। এটি আরও প্রমাণের জন্য দুটো শকুনের শরীরে ডাইক্লোফেনাক সরাসরি প্রয়োগ করলো আমেরিকার ওই বিজ্ঞানী। ঘণ্টাখানেকের মধ্যেই শকুন দুটো মারা গেলো। এবং পোস্টমর্টেম রিপোর্টে দেখা গেল, মৃত শকুনের যকৃত চুনের মতো সাদা হয়ে অকেজো হয়ে গেছে। তখনই প্রমানিত হল, শকুন বিলুপ্তের পেছনে গবাদি পশুকে দেওয়া ডাউক্লোফেনাকই দায়ী। এরপর নড়েচড়ে বসলো দেশের পরিবেশ সংরক্ষণের কাজ করা সংগঠনগুলো।’

বাংলাদেশ সরকার ২০১০ সালে শকুনের জন্য ক্ষতিকারক ওষুধ ডাইক্লোফেনাক নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। ২০২১ সালে সারাদেশে কিটোপ্রোফেন নিষিদ্ধ হয়। ২০১৩ সালে শকুন রক্ষার জন্য করা হয়েছে জাতীয় কমিটি। পশু চিকিৎসকেরা মেলোক্সিক্যাম নামে একটি ব্যথানাশক ওষুধ ব্যবহারের পরামর্শ দিয়েছে খামারিদের। যা ডাইক্লোফেনাকের মতোই ব্যাথা কমাবে কিন্তু শকুনের জন্য ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াবে না।

২০১৪ সালে সুন্দরবন ও সিলেট বিভাগকে শকুনের জন্য নিরাপদ এলাকা হিসেবে ঘোষণা করেছে সরকার। এসব এলাকায় শকুনদের নিয়মিত খাবার সরবরাহ, প্রজনন ও নিয়মিত পর্যবেক্ষন করছে বন অধিদপ্তর ও ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনজারভেশন অফ নেচার আইইউসিএন।

আইইউসিএন এর প্রধান শকুন গবেষক সীমান্ত দীপু বলেন, ‘সুন্দরবন ও হবিগঞ্জের রেমাকালেঙ্গা এলাকা দু’টিকে শকুনের জন্য অভয়াশ্রম ঘোষণা করার পর, সেখানে নিয়মিত নজরদারি চালিয়ে যাচ্ছে আইইউসিএন। প্রতি মাসে আমরা দুটো গরু কেটে দিচ্ছি সেসব স্থানে। কতটি শকুন এখনো বেঁচে আছে এবং তাদের প্রজনন বাড়ছে কিনা, সেসব পর্যবেক্ষণ করছি। গোপন ক্যামেরা স্থাপন করে আমরা শকুনের স্বাস্থ্যগত অবস্থাটাও দেখছি। এছাড়া অসুস্থ শকুনের চিকিৎসা করে তাদের গায়ে নাম্বার প্লেট বসিয়ে ছেড়ে দিচ্ছি। যেনো পরবর্তীতে তাদের শারীরিক কন্ডিশন আমরা বুঝতে পারি। শকুনের জন্য ক্ষতিকর ডাইক্লোফেনাক বন্ধ হবার পরেও আবার কোন কোম্পানি গবাদি পশুর জন্য ক্ষতিকর ব্যাথানাশক ওষুধ বাজারে আনছে কিনা, সেদিকেও আমরা নিয়মিত নজর রাখছি।’

শকুনকে বিলুপ্তির হাত থেকে বাঁচাতে সেপ্টেম্বরের ১ম শনিবার আন্তর্জাতিক শকুন সচেতনতা দিবস হিসেবে পালন করে আসছে সারা বিশ্ব। শকুন পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করতে যে কাজটি করতে পারে, তা আর অন্য কোন প্রাণী করতে পারে না। তাই শকুন রক্ষার কোন বিকল্প নেই। শকুন শুধু প্রকৃতির পরিচ্ছন্নতাকর্মীই না, এটি আমাদের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যেরও অংশ।

Advertisement
Share.

Leave A Reply