fbpx

একজন হুমায়ুন ফরীদি এবং তার রসবোধ!

Pinterest LinkedIn Tumblr +
Advertisement

দেশের এক গণমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে একবার সুবর্ণা মুস্তাফা বলেছিলেন, ফরীদির যে জিনিসটা তাকে বেশি মুগ্ধ করতো সেটা হচ্ছে ফরীদির ‘সেনস অফ হিউমার’। সেসময় সুবর্ণার পাশে বসেছিলেন বর্তমান স্বামী বদরুল আনাম সৌদ। তিনিও মাথা ঝাকিয়ে সুবর্ণার সাথে একমত হয়েছিলেন।

ফরিদী একদিকে যেমন ছিলেন দুর্দান্ত অভিনেতা, তেমনি তার রসবোধ ছিল চমৎকার। মৃত্যু নিয়ে এই অভিনেতার একটি কথা এখনও সবার মুখে মুখে ফেরে। দেশের একটি টেলিভিশন চ্যানেলে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এই অভিনেতা বলেছিলেন, ‘মৃত্যুর মতো এত স্নিগ্ধ, এত গভীর সুন্দর আর কিছু নেই। কারণ, মৃত্যু অনিবার্য। তুমি যখন জন্মেছ, তখন মরতেই হবে। মৃত্যুর বিষয়টি মাথায় থাকলে কেউ পাপ করবে না। যেটা অনিবার্য, তাকে ভালোবাসাটাই শ্রেয়।’

তিনি আরও বলেছিলেন, ‘মৃত্যুকে ভয় পাওয়া মূর্খতা। জ্ঞানীরা মৃত্যুকে ভয় পায় না। মৃত্যুকে আলিঙ্গন করো, গ্রহণ করো, বরণ করে নাও। তাহলে দেখবে জীবন কত সুন্দর।’

হুমায়ুন ফরীদির জন্ম ১৯৫২ সালের ২৯ মে, ঢাকায়। ২০১২ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি তিনি মারা গেছেন। সেই হিসেবে ১১ বছর হুমায়ুন ফরীদি নেই। কিন্তু না থেকেও তিনি কী জীবন্ত এখনও। সামাজিক যোগাযোগ মধ্যমে যেন সেটাই স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। বেঁচে থাকলে এই অভিনেতার আজ বয়স হতো ৭১ বছর। জন্মদিনে তাকে নিয়ে অনেকে অনেক কথা লিখেছে, প্রায় সব  লেখা থেকে স্পষ্ট, ‘অভিনেতা হিসেবে তিনি যেমন শক্তিমান, মানুষ হিসেবেও ছিলেন অনন্য।’

নাটক, চলচ্চিত্র কিংবা মঞ্চ, সবখানেই ছিল হুমায়ুন ফরীদির অবাধ বিচরণ। মঞ্চ দিয়েই শুরু তার পথচলা। প্রথম মঞ্চনাটক কিশোরগঞ্জে মহল্লার নাটকে ১৯৬৪ সালে। প্রথম মঞ্চনাটক নির্দেশনা দেন স্কুলজীবনে—‘ভূত’। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার দিনগুলোতেই ফরীদি সম্পৃক্ত হন ঢাকা থিয়েটারের সঙ্গে। বাংলাদেশ গ্রাম থিয়েটারের সদস্য হিসেবেও অভিনয়ের আলো ছড়িয়ে বেড়ান সারা দেশে। যদিও এর আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তনাট্য প্রতিযোগিতার মধ্য দিয়ে। এখানে তিনি ‘আত্মস্থ ও হিরণ্ময়ীদের বৃত্তান্ত’ নামে একটি নাটক লেখেন, নির্দেশনা দেন এবং অভিনয় করেন। এ নাটকের সুবাদে পরিচয় ঘটে ঢাকা থিয়েটারের নাসির উদ্দীন ইউসুফ বাচ্চুর সঙ্গে। মূলত এখান থেকেই হুমায়ুন ফরীদির অভিনয়যাত্রা। ঢাকা থিয়েটারের মধ্য দিয়ে হুমায়ুন ফরীদির মঞ্চযাত্রা শুরু হয়।

টেলিভিশনে অভিষেক ঘটে আফজাল হোসেন ও রাইসুল ইসলাম আসাদের সুবাদে। সেলিম আল দীনের রচনা এবং নাসির উদ্দীন ইউসুফ বাচ্চুর নির্দেশনায় ধারাবাহিক নাটক ‘ভাঙনের শব্দ শুনি’ দিয়ে আলোচনায় আসেন ফরীদি। এ একসময় বাংলাদেশ টেলিভিশনে প্রচারিত বিখ্যাত ‘সংশপ্তক’ নাটকে ‘কানকাটা রমজান’ চরিত্রে অভিনয় করে

তার অভিনীত ছবির তালিকায় আরও আছে ‘দহন’, ‘একাত্তরের যীশু’, ‘দূরত্ব’, ‘ব্যাচেলর’, ‘জয়যাত্রা’, ‘শ্যামল ছায়া’, ‘মায়ের অধিকার’, ‘অধিকার চাই’, ‘ত্যাগ’, ‘মায়ের মর্যাদা’, ‘মাতৃত্ব’ ও ‘আহা!’। এসব ছবিতে অভিনয় করে এ দেশের চলচ্চিত্রাঙ্গনে এক উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন আনেন তিনি। ২০০৪ সালে ‘মাতৃত্ব’ ছবির জন্য জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পান ফরীদি। ২০১৮ সালে পেয়েছেন মরণোত্তর একুশে পদক।

ফরীদি রোমান্টিক। ব্যক্তিগত জীবনে বেলি ফুলের মালা দিয়ে ফরিদপুরের মেয়ে মিনুকে বিয়ে করেন তিনি। এ সংসারে তাদের একটি কন্যাসন্তান রয়েছে। পরে তিনি বিয়ে করেন প্রখ্যাত অভিনেত্রী সুবর্ণা মুস্তাফা। ২০০৮ সালে তাদের বিচ্ছেদ হয়।

Advertisement
Share.

Leave A Reply