টুঙ্গীপাড়ার বাইগার নদীতে সাতার কেঁটে বড় হয়েছেন ‘খোকা’ ডাকনামের মুজিব। শৈশব থেকেই তিনি ছিলেন মানুষ ভজনে রত। বাঙালির দু:খ তাঁকে ভাবাতো। নিজের রাষ্ট্র বাঙালি পায়নি সহস্র বছরের সংগ্রামেও। আর একে বাস্তবে রূপ দিয়েছেন স্বাপ্নিক বঙ্গবন্ধু। তাঁর জীবন, তাঁর যৌবন, তাঁর সংগ্রাম, তাঁর বুলেটে নিথর হওয়া – সবই ছিল বাঙালির তরে। এ মুজিব চিরঞ্জীব তাই বাঙালি মননে। এ মহামানবের জন্ম শতবর্ষে তাই আন্দোলিত বাংলা। চলছে নানা কর্মসূচি। তেমনই এক মহোত্তম কর্মযজ্ঞের নাম ‘শস্যচিত্রে বঙ্গবন্ধু’।
বগুড়ার শেরপুর উপজেলার আমিনপুরে ১০০ বিঘা ধানক্ষেতে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে ‘শস্যচিত্রে বঙ্গবন্ধু’ নামের এক শ্যামল ক্যানভাস। যেখানে জমিনে শস্যের মাধ্যমে আঁকা হয়েছে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নান্দনিক প্রতিকৃতি। সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা যায়, সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে এ অনবদ্য উদ্যোগ ‘গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস’র স্বীকৃতি পাবে।
সংবাদমাধ্যম আরও জানায়, এ শস্যক্ষেত মঙ্গলবার (৯ মার্চ) পরিদর্শন করেছেন ‘গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস’র প্রতিনিধিদল। গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসের বাংলাদেশের প্রতিনিধিদলের দুই সদস্য হলেন, শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক কামাল উদ্দিন আহাম্মদ এবং বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্যাথলজি বিভাগের অধ্যাপক এমদাদুল হক চৌধুরী।
পরিদর্শন শেষে প্রতিনিধিদলের সদস্যরা সংবাদমাধ্যমকে জানান, শস্যক্ষেতে বিশাল ‘ক্যানভাসে’ ফুটিয়ে তোলা জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নান্দনিক প্রতিকৃতিটি বিশ্ব রেকর্ড গড়তে যাচ্ছে।
এখন ‘গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস’এ স্বীকৃতি পাচ্ছে চীনের ৭০ বিঘার শস্যচিত্র। সে রেকর্ড ভাঙতে যাচ্ছে ১০০ বিঘায় আঁকা ‘শস্যচিত্রে বঙ্গবন্ধু’।
গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসের প্রতিনিধি দলের প্রধান অধ্যাপক কামাল উদ্দিন আহাম্মদ সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ‘শস্যচিত্রে বঙ্গবন্ধুকে যেভাবে ফুটিয়ে তেলা হয়েছে, স্কেচে তৈরি বঙ্গবন্ধুর ছবির সঙ্গে শতভাগ মিল রয়েছে। স্কেচে ব্যবহৃত রঙের সঙ্গেও শতভাগ মিল রয়েছে। শস্যের ভ্যারাইটিও রয়েছে নির্দিষ্ট স্থানে সুনির্দিষ্টভাবে। ড্রোন থেকে তোলা ছবিও শতভাগ ঠিক আছে।’
আরেক পরিদর্শক অধ্যাপক এমদাদুল হক চৌধুরী সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ‘গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসে নাম লেখাতে দুই রঙের শস্য দিয়ে প্রতিকৃতি ফুটিয়ে তুলতে হয়। আমিনপুর মাঠে সবুজ ও বেগুনি রঙের শস্য দিয়ে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। গিনেস বুকে নাম লেখাতে শস্যের রং অবশ্যই প্রাকৃতিক হতে হয়, আমিনপুর মাঠের দুই ধরনের শস্যের রং-ই প্রাকৃতিক পাওয়া গেছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসে সবগুলো শর্তই এখানে পরিপূর্ণভাবে মানা হয়েছে। ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসের সনদ প্রদানের ক্ষেত্রে যা যা দরকার, সবই আছে এখানে।’
বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে ‘শস্যচিত্রে বঙ্গবন্ধু’ উদ্যোগটি ‘শস্যচিত্রে বঙ্গবন্ধু জাতীয় পরিষদ’ এর। এই পরিষদের আহ্বায়ক আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম।
বাহাউদ্দিন নাছিম সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ‘শস্যচিত্রে বঙ্গবন্ধু’ একটি ভিন্ন ধারার, ভিন্ন মাত্রার অনন্যসাধারণ, নান্দনিক একটি কাজ। এর মাধ্যমে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে বিশ্বজুড়ে অনন্য সম্মানের সঙ্গে তুলে ধরা হয়েছে। বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী এবং স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে এটি হবে সবচেয়ে দুর্দান্ত, সবচেয়ে নান্দনিক এবং সবচেয়ে বড় কাজ।
তিনি আরও বলেন, ‘শস্যচিত্রে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসে নাম লেখানোর মাধ্যমে আমরা বিশ্ববাসীকে জানাতে চাই, বাঙালি বিশ্বাসঘাতক ও অকৃতজ্ঞ নয়। বঙ্গবন্ধু শুধু কৃষক ও বাঙালির নেতা নন, জাতির পিতা। সেটা গিনেসের রেকর্ড গড়ে ইতিহাস গড়তে চাই। বাংলাদেশকে বিশ্ববাসীর কাছে জাগ্রত করতে চাই।’
উল্লেখ্য, ক্রপ মোজাইক ফিল্ড ওয়ার্ল্ড রেকর্ডে এরইমধ্যে ব্রিটেন, জাপান, ভারতের রেকর্ড ভেঙে বর্তমানে চীন অবস্থান করে নিয়েছে। তবে কোনো দেশই শস্যচিত্রে জাতির জনককে তুলে ধরতে পারেনি। গিনেস বুকে নাম লেখানোর মাধ্যমে অনন্য ইতিহাস গড়বে বাংলাদেশ।
যে বাংলার মাটির প্রতিটি কণায় মুজিব জীবন্ত, সেখান থেকে শুরু বিশ্বজয়ের পালা। গর্বিত তাই মুজিব ভক্ত বাঙালি।