রাজধানীর মোহাম্মদপুরের ঢাকা উদ্যানে একদল শিশু-কিশোর দুরন্তপনায় মেতে উঠেছে। দলবেধে তারা নিজেদের মতো করে খেলাধুলা করছে। যেখানে পৃথিবীর কোনো বাঁধাধরা নিয়ম নেই। কোনো কিছুর তোয়াক্কা না করেই আপন খেলায় মশগুল এই শিশু-কিশোরের দল।
অথচ এই সময়ে তাদের থাকার কথা ছিল ক্লাসরুমে। কিন্ত করোনা তাদের সে সুযোগ কেড়ে নিয়েছে।
এই চিত্র শুধু মোহাম্মদপুরেরই না, গোটা বাংলাদেশ আজ হার মেনেছে করোনার কাছে। প্রায় দেড় বছর ধরে বন্ধ আছে দেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। ফলে স্কুলভাড়া আর শিক্ষকদের বেতন দিতে না পারায়, অনেকেই স্কুল বিক্রি করে দিতে চাইছেন।
প্রায় ১৭ বছর ধরে স্বল্প আয়ের মানুষের ছেলে-মেয়েদের নিয়ে চলছিল মোহাম্মদপুরের নবীনগর হাউজিংয়ের ফুলকুঁড়ি কিন্ডারগার্টেন অ্যান্ড হাই স্কুল। করোনার কারণে খরচ না দিতে পারায় এখন বাধ্য হয়ে সেটি বিক্রি করে দিতে চান স্কুলের পরিচালক তকবির আহমেদ।
বিবিএস বাংলাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, প্রতি মাসে প্রায় এক লাখ টাকার খরচ হয়। এরই মাঝে চার মাসের বাসা ভাড়া বাকি আছে। এরকম আরও কিছুদিন চললে আমাকে কোথায় হারিয়ে যেতে হবে সেটা আমি জানি না।
তিনি বলেন, ২০০৪ সাল থেকে তিলে তিলে প্রতিষ্ঠানটি গড়ে তুলেছেন। প্লে থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত আড়াইশ শিক্ষার্থী রয়েছে। ১২ জন শিক্ষক ও দু’জন কর্মচারী রয়েছেন। নিম্ন আয়ের মানুষ, বাসাবাড়িতে যাদের বাবা-মা কাজ করে, গার্মেন্ট শ্রমিক, সিএনজি ড্রাইভার, ট্যানারি শ্রমিকের সন্তানরা তার বিদ্যালয়ে পড়ে। তারা কোনোভাবেই করোনাকালে টিউশন ফি দিতে রাজি নয়।
ফুলকুঁড়ি স্কুলে গিয়ে দেখা যায়, শূন্য আঙিনা,নেই কোলাহল। নেই ছুটির ঘণ্টা, শিশুদের ছুটোছুটি আর কলোরব। একসময় যে প্রাঙ্গন ছিল ছাত্রদের আনাগোনায় মুখরিত, সেটি এখন পরিণত হয়েছে শশ্মানে।
তকবির আহমেদ বলেন, গত বছরের মাঝামাঝি স্কুল বিক্রির নোটিশ দিলে, প্রথমদিকে দু’ একজন সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছিলেন। কিন্ত দফায় দফায় লকডাউন বাড়ায় একসময় তারাও এই হাত গুটিয়ে নেন। ফলে ঋণের বোঝা বেড়েই চলেছে।
দীর্ঘদিন ধরে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থী এবং অভিভাবকদের মাঝেও দেখা দিয়েছে উদ্বেগ ও হতাশা। সরকার যাতে তাড়াতাড়ি স্কুল খুলে দেয়- দাবি শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের।
সারা দেশে বর্তমানে প্রায় ৬০ হাজার কিন্ডারগার্টেন স্কুলে প্রায় ১ কোটি শিক্ষার্থী পড়াশোনা করছে। শিক্ষার্থীদের কথা বিবেচনা করে টাকার অভাবে যাতে কোনো স্কুল যাতে বিক্রি না করতে হয়, সেজন্য সরকারের প্রণোদনা দেওয়া উচিত বলে মনে করছেন শিক্ষাখাত সংশ্লিষ্টরা।