fbpx

অঙ্গ হারানো মানুষের পাশে ব্র্যাক-শেখ হাসিনা বার্ন ইউনিট

Pinterest LinkedIn Tumblr +
Advertisement

বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ব্র্যাক এবং শেখ হাসিনা ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারির মধ্যে একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়েছে। শনিবার (২৭শে আগস্ট) চুক্তিটির আওতায় দুর্ঘটনায় আক্রান্ত হয়ে হাত-পা হারানো মানুষকে দ্রুত চিকিৎসা দিতে সরকারি-বেসরকারি অংশীদারত্বে (পিপিপি) কাজ করবে প্রতিষ্ঠান দুটি।

এই সমঝোতা স্মারকের আওতায় সংস্থা দুটি একজন দরিদ্র মানুষকে ৫০ শতাংশ কম খরচে আন্তর্জাতিক মানের সেবা দিতে সক্ষম হবে। শেখ হাসিনা ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি প্রতিষ্ঠানে গত বছর (২০২১) ডিসেম্বর মাসে কৃত্রিম অঙ্গ সংস্থাপন চিকিৎসাকেন্দ্র খোলা হয়। এখন পর্যন্ত ৪৫০ জনের বেশি রোগী এখান থেকে সেবা পেয়েছেন। এই কেন্দ্রটি ব্র্যাক লিম্ব অ্যান্ড ব্রেস সেন্টারের দ্বারা পরিকল্পিত এবং পরিচালিত হচ্ছে।

১৯৭২ সালে প্রতিষ্ঠিত ব্র্যাক স্বাস্থ্য ও পুষ্টিসহ মানুষের সার্বিক উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছে। বাংলাদেশে সড়ক দুর্ঘটনা, ডায়াবেটিক গ্যাংগ্রিন, পোড়া রোগী, বারজারস ডিজিজ ও ক্যান্সার– প্রতিবন্ধিত্বের উল্লেখযোগ্য কারণ। ব্র্যাক লিম্ব অ্যান্ড ব্রেস সেন্টার (বিএলবিসি) দীর্ঘদিন ধরে অঙ্গহানির শিকার রোগীদের কম খরচে, মানসম্পন্ন ও ব্যবহারবান্ধব প্রস্থেটিক্স ও অর্থোটিক্স (P&O) সেবা, ফিজিওথেরাপি, কাউন্সেলিং এবং পুনর্বাসন পরিষেবা দিয়ে আসছে।

সমঝোতা স্মারক সই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. এবিএম খুরশিদ আলম, শেখ হাসিনা ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারির পরিচালক অধ্যাপক ডা. মো. আবুল কালাম, জাতীয় সমন্বয়ক ডা. সামন্ত লাল সেন, ব্র্যাকের নির্বাহী পরিচালক আসিফ সালেহ্ এবং সংস্থাটির স্বাস্থ্য পুষ্টি ও জনসংখ্যা কর্মসূচির পরিচালক ডা. মোরশেদা চৌধুরী।

অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. এবিএম খুরশিদ আলম বলেন, “এমন একটি মহৎ কাজের জন্য আমি ব্র্যাককে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। এই লিম্ব এবং ব্রেস সেন্টারটা অনেক মানুষের উপকার করবে। কোনো প্রতিবন্ধকতা ছাড়াই যেন এই সেন্টার চলতে পারে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। আমি বাংলাদেশের ৮টি মেডিকেল কলেজে এই মডেলটা স্থাপন করতে চাই। আমি ব্র্যাককে বলব আপনারা পরিকল্পনা নিয়ে আসুন, আমরা একসাথে কাজ করব। করোনা মোকাবেলায় আপনারা পাশে ছিলেন, এবারও আছেন, সেজন্য আপনাদের ধন্যবাদ জানাই।”

ব্র্যাকের নির্বাহী পরিচালক আসিফ সালেহ্ বলেন, “আমাদের প্রতিষ্ঠাতা স্যার ফজলে হাসান আবেদ একজন সামাজিক উদ্যোক্তা ছিলেন। তিনি মৃত্যুর আগ পর্যন্ত বলে গেছেন নতুন নতুন সামাজিক সমস্যার সমাধানে যদি ব্র্যাক কাজ না করতে পারে তাহলে এর থাকার কোনো দরকার নাই। সেই মানসিকতা থেকেই ব্র্যাক সবসময় সামাজিক সমস্যা সমাধানের মডেল তৈরি করে। আজকে যে মডেলটা উদ্বোধন করতে যাচ্ছি তার মাধ্যমে সরকারের অবকাঠামো ব্যবহার করে আমরা একটা সার্ভিস দিচ্ছি। এই সার্ভিস মানুষের সামর্থ্যের মধ্যে রাখতে আর কত সহজে মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়া যেতে পারে, সেই জায়গাতে আমরা সফল হতে পারছি। এখানে যখন আমাদের কাজ করতে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল আমরা সেটিকে ইতিবাচকভাবে নিয়েছিলাম। এই মডেলটাই আমরা সব জায়গায় ব্যবহার করতে চাই। এই সেক্টর নিয়ে আমি খুবই আশাবাদী কারণ আপনাদের আগ্রহ আছে, আমাদেরও আগ্রহ আছে”।

তিনি আরও বলেন, “কীভাবে এটাকে একটা সামগ্রিক ব্যবস্থায় পরিণত করা যায়, কীভাবে বেসরকারি খাতগুলোকে নিয়ে আসা যায়, সেদিকে ভাবতে হবে। আগামী দিনগুলোতে একসাথে কাজ করলে সফলতা আসবে। পাশাপাশি সড়ক দুর্ঘটনা বা যেকোনো দুর্ঘটনা প্রতিরোধে একসাথে কাজ করতে হবে। আমি আশা করি এই মডেল আগামীতে অন্যান্য অংশীদারত্বের মডেল হিসেবে দৃষ্টান্ত স্থাপন করবে।”

ব্র্যাকের স্বাস্থ্য পুষ্টি ও জনসংখ্যা কর্মসূচির পরিচালক ডা. মোরশেদা চৌধুরি বলেন “আমরা এই প্রাইভেট-পাবলিক অংশীদারত্ব করেছি কারণ আমরা দরিদ্র মানুষের উপকারে আসতে চাই। দ্রুত তাদের সেবা দিতে চাই। আগে আহত ব্যক্তিকে এক জায়গায়, আবার অন্য চিকিৎসার জন্য আরেক জায়গায় নেয়া হতো। আমরা চেয়েছি সব যেন এক ছাদের নিচেই ব্যবস্থা করা যায়।”

শেখ হাসিনা ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারির জাতীয় সমন্বয়ক সামন্ত লাল সেন বলেন, “ব্র্যাকের লিম্ব এবং ব্রেস সেন্টারটি এখানে চালু করতে পেরে আমি নিজেকে সৌভাগ্যবান মনে করি। আমরা এখন দ্রুত অনেক মানুষকে চিকিৎসা দিতে পারব। ব্র্যাকের নেটওয়ার্ক ব্যবহার করতে পারলে আমরা আরো রোগী আনতে পারব চিকিৎসাসেবা দেওয়ার জন্য।”

ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক আবুল কালাম বলেন “আপনারা জানেন বৈদ্যুতিক শকে আহত হয়ে প্রতি বছর অনেক মানুষ অঙ্গ হারাচ্ছে। আমরা প্রতি বছর ৩০০ থেকে ৩৫০ জন মানুষের অঙ্গ স্থাপনের কাজ করি। ব্র্যাকের প্রস্তাবটা আমাদের কাছে তাই গুরুত্বপূর্ণ ছিল। গেল আট মাসে আমরা ৪৫০ জন মানুষকে সেবা দিতে পেরেছি। তাই ব্র্যাককে আন্তরিক ধন্যবাদ।”

Advertisement
Share.

Leave A Reply