fbpx

অনবদ্য পর্যটনতীর্থ হতে প্রস্তুত ভোলার মনপুরা

Pinterest LinkedIn Tumblr +
Advertisement

দ্বীপ জেলা ভোলা থেকে বিচ্ছিন্ন মনপুরা উপজেলা। এ উপজেলার দক্ষিণ সাকুচিয়া ইউনিয়নের রহমানপুরকে ঘিরে পর্যটকদের পদচারনা দিন দিন বাড়ছে। এখানে মেঘনা আর বঙ্গোপসাগরের মিলনস্থলে ঢেউয়ের তোড়ে পলি জমে জেগে উঠেছে প্রায় এক কিলোমিটার দীর্ঘ বালির সৈকত। এর পাশেই আছে মাথা উঁচু করে থাকা সারি সারি কেওড়া গাছের সবুজ সমারোহ আর ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল। বনে হরিণের ছুটে চলা আর সৈকতে অতিথি পাখির উড়ে বেড়ানো পর্যটকদের মুগ্ধ করছে।

অনবদ্য পর্যটনতীর্থ হতে প্রস্তুত ভোলার মনপুরা

এখানে সমুদ্র, আকাশের সঙ্গে আছে অতিথি পাখির উড়াল। ছবি : ট্রাভেলমেট ডটকমডটবিডি

স্থানীয়রা এ উপকূলের নাম দিয়েছে ‘দখিনা হাওয়া সি বিচ’। যেখানে একই সঙ্গে দেখা মিলবে নীল আকাশ, অনন্য সমুদ্রের জলরাশি, চিরহরিৎ ম্যানগ্রোভ বন, হরিণ, নানা প্রজাতির অতিথি পাখি আর সূর্য উদয় এবং সূর্যাস্তের অপরূপ দৃশ্য। রাতের অন্ধকারে এ ‘দখিনা হাওয়া সি বিচ’ ভিন্ন রূপ ধারণ করে। এসময় তাবুতে রাত কাটানো, সাথে ক্যাম্প ফায়ার, বন্ধু-বান্ধব, স্বজনদের নিয়ে হৈ হুল্লোড় আর বারবিকিউ পার্টির মজাই আলাদা।

প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের জন্য সাগর মোহনার মনপুরা দ্বীপের খ্যাতি রয়েছে অনেক আগে থেকেই। সেই সঙ্গে নতুন করে যুক্ত হয়েছে সাগরের ঢেউয়ে গা ভাসানোর সুযোগ।

অনবদ্য পর্যটনতীর্থ হতে প্রস্তুত ভোলার মনপুরা

লঞ্চ নিয়ে পর্যটকরা আসছেন এ সৈকতে। ছবি : ট্রাভেলমেট ডটকমডটবিডি

এই ‘দখিনা হাওয়া সি বিচ’কে ঘিরেই মনপুরা হতে পারে দেশের অন্যতম পর্যটন স্পট। এবছর শীত মৌসুমের শুরু থেকে এই পর্যটন স্পটে মানুষের ঢল নামে। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত হতে দলবেঁধে, অনেকে লঞ্চ রিজার্ভ করে এই সমুদ্র সৈকতের সৌন্দর্য উপভোগ করতে ছুটে আসছেন প্রতিদিন। পিকনিক স্পট হিসেবেও বিভিন্ন সংগঠন এই বিচটিকে বেছে নিয়েছে। সৈকতের সৌন্দর্য উপভোগ করার পাশাপশি পর্যটকদের বিশ্রাম নেয়ার জন্য অর্ধশতাধিক ছাতা ও বেঞ্চ বসানো হয়েছে। আছে ছনের তৈরি একাধিক গোলঘর, বৈঠকখানা, দোলনা। পাশাপশি পর্যটকদের সুরক্ষায় ব্যবস্থা করা হয়েছে লাইফ জ্যাকেটেরও।

অনবদ্য পর্যটনতীর্থ হতে প্রস্তুত ভোলার মনপুরা

পর্যটকবান্ধব হয়ে উঠছে ভোলার দখিনা হাওয়া সি বিচ। ছবি : আবদুল মালেক

স্থানীয়দের সাথে আলাপ করে জানা যায়, দক্ষিণ সাকুচিয়া ইউপি চেয়ারম্যান অলিউল্লা কাজল ও তার সহধর্মিণী সাথী কাজলের উদ্যোগ ও ব্যাক্তিগত অর্থায়নে দখিনা হাওয়া সি বিচটির শোভা বর্ধণের কাজ শুরু হয়। কয়েক মাস আগেই পর্যটক আকর্ষণের জন্য এই সি বিচের আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয়। পরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ অন্য অনেক মাধ্যমে পর্যটকদের আকর্ষণ করতে শুরু হয় প্রচার-প্রচারণা। এছাড়াও ঘুরতে আসা পর্যটকদের নিরাপত্তাসহ অন্যান্য সুবিধা দেওয়ার জন্য ২০ সদস্যের স্থানীয় একটি তরুণ সংগঠন স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে কাজ করে যাচ্ছে।

অনবদ্য পর্যটনতীর্থ হতে প্রস্তুত ভোলার মনপুরা

নতুন পর্যটন কেন্দ্র পেতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। ছবি : ট্রাভেলমেট ডটকমডটবিডি।

ভোলা সদর থেকে ঘুরতে আসা ফরহাদ হোসেন জানান, এ সি বিচে এসে সৌন্দর্য তাকে মুগ্ধ করেছে। তিনি বলেন, ‘আমরা অনেক বন্ধু মিলে এখানে এসেছি। অনেক ভালোই লাগল।’

ভোলার বোরহানউদ্দিন থেকে ঘুরতে আসা আবির হোসেন বলেন, ‘স্বপরিবারে এখানে ঘুরতে এসেছি। অনেক ভালো লাগলো এখানকার প্রাকৃতিক পরিবেশ। এখানে অতিথি পাখির কিচিমিচি শব্দও উপভোগ করা যায়।’

ভোলার মনপুরা উপজেলার চেয়ারম্যান সেলিনা আকতার চৌধুরী জানান, স্বেচ্ছাসেবীদের মাধ্যমে দখিনা হাওয়া সি বিচের শোভাবর্ধণের পাশাপাশি সরকারি অনুদানে বিচের পাকা গেইট নির্মাণের কাজ চলছে। এর শোভা বর্ধর্ণের জন্য ইতিমধ্যে জেলা প্রশাসকের কাছে ১ কোটি ২০ লাখ টাকার একটি প্রকল্প পাঠানো হয়েছে। প্রকল্পটি অনুমোদন পেলে ‘দখিনা হাওয়া সি বিচ’ কে বাংলাদেশের অন্যতম একটি পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলা সম্ভব হবে।

মনপুরা উপজেলার নির্বাহী অফিসার শামীম মিয়া মনপুরায় পর্যটনের অপার সম্ভবনা আছে বলে উল্লেখ করে বলেন, ‘জেলা প্রশাসন থেকে গত বছরের সেপ্টেম্বরে ভোলার উন্নয়ন পরিকল্পনা নিয়ে প্রতিবেদন পাঠানো হয়েছে। সেখানে মনপুরা উপজেলাকে পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তোলার প্রস্তাব রয়েছে। মার্চের মধ্যে এই উপজেলাকে শতভাগ বিদ্যুতের আওতায় আনা হবে। এছাড়াও ঘুরতে আসা পর্যটকদের হয়রানি থেকে মুক্ত রাখার জন্য পুলিশ প্রশাসনসহ জন প্রতিনিধিদের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।’

তাহলে শুধু কক্সবাজার, কুয়াকাটা নয়। সমুদ্র ডাকছে দেশের দক্ষিণের দ্বীপ রাজ্য ভোলায়ও। এক্ষুণি সাড়া দিন এর ডাকে।

সংবাদ প্রেরক : আবদুল মালেক

Advertisement
Share.

Leave A Reply