fbpx

অনলাইনে নিতে হবে জলমহালের ইজারা

Pinterest LinkedIn Tumblr +
Advertisement

সরকারি হিসাবে দেশে বিভিন্ন আকারের জলমহালের সংখ্যা ৩৮ হাজার ৪৪টি। এসব জলমহালের ইজারার ক্ষেত্রে স্থানীয় ও রাজনৈতিক প্রভাবশালীদের প্রভাব খাটানোর অভিযোগ ওঠে প্রায়ই। আবার জলমহাল ইজারা পদ্ধতি প্রতিযোগিতামূলক না হওয়ায় রাজস্ববঞ্চিত হয় সরকার। এমন প্রেক্ষাপটে আগামী পাঁচ বছরের জন্য জলমহালের ইজারা পেতে অনলাইনে আবেদনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।

গতকাল সচিবালয়ে ভূমি মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত সরকারি জলমহাল ইজারাসংক্রান্ত কমিটির ৬৭তম সভা থেকে নতুন এ সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয়। সভায় ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী বলেন, জেলা ও উপজেলায় সাধারণ আবেদনে জলমহাল ইজারার আবেদন দাখিলের বিধান প্রবর্তন করা হলে জেলা প্রশাসন, উপজেলা প্রশাসন এবং মত্স্যজীবী সমবায় সমিতিসহ সবাই উপকৃত হবে। অনলাইনে জলমহাল ইজারার আবেদন দাখিল করার কারণে মত্স্যজীবী সমিতির সদস্যরা ইজারা প্রক্রিয়ার নানাবিধ জটিলতা এড়াতে পেরেছেন। এছাড়া এ সম্পর্কিত যাতায়াত কমে যাওয়ায় সমিতির সদস্য মত্স্যজীবীদের অনেক অর্থ সাশ্রয় হয়েছে। এজন্য উন্নয়ন প্রকল্পের মতো জেলা ও উপজেলায় আবেদনে অনলাইনে জলমহাল ইজারার আবেদন দাখিলের বিধান প্রবর্তনের জন্য নির্দেশ দেন তিনি।

সভা থেকে জানানো হয়, এরই মধ্যে ৩০ জেলা থেকে ৪৬৮টি আবেদন এসেছে। যার মধ্যে ১০ জেলার ৫৫টি জলমহাল ইজারা চূড়ান্ত করা হয়েছে।

বিল, হাওর, বাঁওড়, নিম্ন জলাভূমি ও নদ-নদীর মত্স্য আহরণের এলাকাকে জলমহাল বলা হয়। ছোট-বড় মিলিয়ে দেশের জলমহালের সংখ্যা প্রায় ৩৮ হাজার ৪৪টি। একটি পাইলট কার্যক্রমে উন্নয়ন প্রকল্পে জলমহাল অনলাইনে আবেদনের মাধ্যমে ইজারা দেয়া হয়েছিল। গতকালের সভার মাধ্যমে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে সব ধরনের জলমহাল ইজারার ক্ষেত্রে অনলাইন বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এর মাধ্যমে ইজারা নিতে আগ্রহীদের মধ্যে প্রতিযোগিতা বাড়বে, হয়রানি বন্ধ হবে পাশাপাশি সরকার রাজস্ব বেশি আদায় করতে পারবে। তাই এসব জলমহাল ইজারা দিয়ে বছরে শতকোটি টাকার বেশি রাজস্ব আদায়ের পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে।

ভূমি মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, সাধারণত ২০ একরের ঊর্ধ্বে সরকারি জলমহাল ইজারার অনুমোদন মন্ত্রণালয় পর্যায়ে দেয়া হয়ে থাকে। তবে বিশেষ ও দর্শনীয় ঐতিহ্যবাহী জলমহালগুলো ইজারা দেয় না মন্ত্রণালয়। এসব জলমহাল থেকে গত পাঁচ অর্থবছরে প্রায় ৪৫২ কোটি ৮০ লাখ টাকার রাজস্ব আদায় করেছে মন্ত্রণালয়। এর মধ্যে ২০১৬-১৭ অর্থবছরে জলমহাল ইজারার মাধ্যমে ৯২ কোটি ৫৩ লাখ, পরের অর্থবছরে ৮৪ কোটি ২৪ লাখ, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ৯৭ কোটি ৬৪ লাখ টাকা আয় হয়। তবে ২০১৯-২০ অর্থবছরে রাজস্ব আদায় ১০১ কোটি ১১ লাখ টাকায় উন্নীত হলেও ২০২০-২১ অর্থবছরে তা ৮২ কোটি টাকায় নেমে আসে। নতুন আবেদনের প্রক্রিয়া চালুর মাধ্যমে চলতি অর্থবছরে আয় শতকোটি টাকায় উন্নীত করতে চায় মন্ত্রণালয়।

গতকালের সভায় জানানো হয়, ১৪২৯-১৪৩৪ বঙ্গাব্দ মেয়াদে উন্নয়ন প্রকল্পে জলমহাল ইজারার জন্য বিভিন্ন জেলার ৪৬৮টি মত্স্যজীবী সমবায় সমিতি লিমিটেড অনলাইনে আবেদন দাখিল করে। নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যে প্রাপ্ত প্রতিবেদনের ভিত্তিতে গতকাল রাজশাহী, পাবনা, নাটোর, জয়পুরহাট, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, রংপুর, গাইবান্ধা, রাজবাড়ী, ঝিনাইদহ ও কিশোরগঞ্জ জেলার মোট ৫৫টি প্রস্তাব এবং বিবিধ তিনটি প্রস্তাব সরকারি জলমহাল ইজারা প্রদান-সংক্রান্ত কমিটির সভায় উপস্থাপন করা হয়। যাচাই-বাছাই করে জেলা প্রশাসকের প্রতিবেদন ও অন্যান্য সার্বিক দিক বিবেচনা করে সরকারি জলমহাল ইজারা-সংক্রান্ত কমিটি ইজারার অনুমোদন দেয়। গতকালের সভায় উপস্থাপিত ইজারা আবেদনের শতভাগই অনলাইনের মাধ্যমে দাখিল করা হয়েছে।

প্রাকৃতিকভাবে মাছের বংশবৃদ্ধি এবং মা মাছ সংরক্ষণের জন্য দেশের বিভিন্ন জেলায় জলমহাল অভয়াশ্রম ঘোষণা এবং নির্বাহী আদেশে ঐতিহ্যবাহী ও দর্শনীয় স্থান হিসেবে চিহ্নিত করায় বেশকিছু জলমহাল ইজারাবিহীন রাখা হয়েছে। বেশ কয়েকটি জলমহাল ঐতিহ্যবাহী ও দর্শনীয় স্থান যেমন দিনাজপুরের রামসাগর, সিরাজগঞ্জের হুরাসাগর। মাছ সংগ্রহের অভয়াশ্রম ঘোষিত জলমহালের মধ্যে উল্লেখযোগ্য সুনামগঞ্জের টাঙ্গুয়ার হাওর ও মৌলভীবাজারের হাকালুকি হাওর।

জানা গেছে, গত ১৫ নভেম্বর জারি করা এক পরিপত্রের মাধ্যমে ভূমি মন্ত্রণালয় অনলাইনে মন্ত্রণালয় পর্যায়ে জলমহাল ইজারার আবেদন দাখিলের সুবিধা চালু করে। বাস্তবায়নাধীন বিভিন্ন প্রকল্পের অধীন সমঝোতা স্মারকের মাধ্যমে স্থানীয় সরকার বিভাগে ২২টি জলমহাল এবং মত্স্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ে ৭৮৩টি খাস পুকুর হস্তান্তর করা হয়।

মন্ত্রণালয়সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ভূমি ব্যবস্থাপনায় ডিজিটাল পদক্ষেপ হিসেবে সায়রাত মহালসহ অন্যান্য ক্ষেত্রে অনলাইনে ডাটাবেজ (ভূমি তথ্য ব্যাংক) তৈরি সম্পন্ন হয়েছে। জলমহাল ইজারার আবেদন গ্রহণের প্রক্রিয়া অনলাইনে চালু হলে জলমহাল ইজারার আবেদন করাসহ ইজারা প্রক্রিয়ার জটিলতা নিরসন সম্ভব হবে। সরকারি জলমহাল ব্যবস্থাপনা নীতি, ২০০৯ অনুযায়ী নিবন্ধিত ও প্রকৃত মত্স্যজীবী সমবায় সমিতি জলমহাল ইজারা পেতে সাধারণভাবে জেলা ও উপজেলায় এবং উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য ভূমি মন্ত্রণালয়ে আবেদন করে। কিন্তু চলমান পদ্ধতিতে আবেদনের সঙ্গে প্রয়োজনীয় কাগজ জমা না দেয়ায় আবেদন বাতিল হয়ে যায়। কিন্তু সব কাগজ জমা দিয়েছেন বলে অনেকে অভিযোগ করেন। আবেদন বিবেচনার জন্য অনুরোধ জানান। এছাড়া জলমহাল ইজারা গ্রহণের জন্য প্রতিযোগিতা, একাধিক সমিতির আবেদন দাখিলে অনেক ধরনের জটিলতার সৃষ্টি হয়।

Advertisement
Share.

Leave A Reply