৭০০০ এরো বেশি দ্বীপ নিয়ে গঠিত ক্যারিবিয়ান দ্বীপপুঞ্জ। নিখুঁত আবহাওয়া, সাদা-বালির সৈকত এবং উজ্জ্বল নীল পানি আর চোখজুড়ানো প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরা দ্বীপগুলো বিশ্বজুড়ে পর্যটকদের কাছে প্রিয় অবকাশের গন্তব্য হিসেবে পরিচিত ।
দ্বীপগুলোর মধ্যে অনেক জায়গায় মিল থাকলেও এগুলোর ইতিহাস, প্রাকৃতিক সম্পদ, ভূ-প্রকৃতি এবং সংস্কৃতির মধ্যে রয়েছে অনেক পার্থক্য। এই অঞ্চলে ইউরোপ, আফ্রিকা এবং বিশ্বের অন্যান্য দেশের কয়েক শতাব্দীর উপনিবেশিক প্রভাব আজও দ্বীপগুলোর সঙ্গীত, শিল্প, রীতিনীতি, ভাষা, খাবার ইত্যাদির মধ্যে তৈরি করে রেখেছে হাজারো বৈচিত্র। এছাড়াও ইতিহাসের নানান গল্প শোনাতে দ্বীপগুলোর অনেক জায়গায় সংরক্ষিত আছে অসাধারণ কিছু প্রাচীন স্থাপত্য।
বেশিরভাগ দ্বীপে বিমানে করে যাওয়ার সুযোগ পাবেন। এরপর ক্যারিবিয়ান গন্তব্যে পৌঁছানোর জন্য নৌকা বা ফেরির মত মজার অংশও থাকবে। প্রতিটি দ্বীপ রূপকথার মতো সুন্দর! আজকে এমন কয়েকটি অনিন্দ্য সুন্দর কযারিবিয়ান দ্বীপের গল্পই থাকছে।
ভার্জিন গোর্দা, ব্রিটিশ ভার্জিন দ্বীপপুঞ্জ
ব্রিটিশ ভার্জিন দ্বীপপুঞ্জের তৃতীয় বৃহত্তম হচ্ছে এই ভার্জিন গোর্দা দ্বীপ । এটী বিখ্যাত তার আদিম সৈকত, ইতিহাস, প্রকৃতির অভয়ারণ্য এবং বাথ – পুল এবং বিশাল গ্রানাইট বোল্ডারের জন্য। সমুদ্রের সাদা-বালির তীরে কাছাকাছি রয়েছে স্প্রিং বে। রয়ছে পাথরের বৃত্তাকার একটি প্রাকৃতিক সুইমিং পুল।
আগ্নেয় দ্বীপটি তার সৈকত, বৃষ্টির বন, ফিরোজা রঙের স্বচ্ছ পানি এবং সুন্দর আগ্নেয় পর্বতগুলির জন্য পরিচিত। এটি ইউনেস্কোর ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট। এছাড়াও এখানকার সবুজ পাহাড়ে হাইকিং করে এখানকার বিচিত্র সব বন্যপ্রাণী এবং বিভিন্ন উদ্ভিদ দেখতে পারবেন। আর দ্বীপটির আসল সৌন্দর্য মূলত সমুদ্রের নীচে। স্কুবা ডাইভিং করে রঙিন গ্রীষ্মমন্ডলীয় মাছ এবং সামুদ্রিক কচ্ছপ দেখতে যেতে পারেন।
গ্রেনাডা
জয়ফল, লবঙ্গ, দারুচিনি, অলস্পাইস, গোলমরিচ এবং ভ্যানিলা সহ মশলা উৎপাদনের জন্য এই সুন্দর দ্বীপটিকে “স্পাইস আইল” ডাকনাম দেওয়া হয়। এর ৭৫ মাইল উপকূলরেখায় সাদা-বালির সৈকত, বৃষ্টির বন এবং জলপ্রপাতগুলোর জন্য বিখ্যাত এই দ্বীপটি। এখানকার প্রাণবন্ত সংস্কৃতি, প্রাচীন ডিস্টিলারি এবং ঐতিহাসিক স্থাপত্য আপনাকে অন্য এক জগতে নিয়ে যাবে। । এছাড়াও ডুবুরিদের সাথে সাগরের নীচে গিয়ে এখানকার প্রবাল প্রাচীর, জাহাজের ধ্বংসাবশেষ এবং পানির নিচের ভাস্কর্য পার্ক উপভোগ করতে পারে।
ডমিনিকা
নাম শুনে ডোমিনিকান রিপাবলিকের সাথে গুলিয়ে ফেলবেন না আবার। ক্যারিবীয় ডোমিনিকা দ্বীপটি এর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, নদী, রেইন ফরেস্ট, পাহাড় এবং জলপ্রপাত ের জন্য বিখ্যাত। দ্বীপের একটি অনন্য বৈশিষ্ট্য ফুটন্ত লে। এটি একটি প্লাবিত আগ্নেয়গিরির ফিউমারোল যা নীচের গলিত ম্যাগমা থেকে বুদবুদ তৈরি করে। দ্বীপের উত্তর উপকূলে প্রধান শহর হল ক্যালিবিশি। একটি প্রাচীন মাছ ধরার গ্রাম । সমুদ্রতীর থেকে রেইন ফরেস্ট মাত্র এক মাইল দূরে অবস্থিত।
সেন্ট বার্টস
দ্বীপটি আপস্কেল রিসোর্ট , ভিলা, বুটিক এবং ভিজিটিং ইয়টের জন্য পরিচিত। সেন্ট বার্টস সাদা-বালির সৈকত, লেগুন এবং খাঁড়ি সহ আট-বর্গমাইলের একটি ছোট দ্বীপ। দ্বীপের চারপাশের অগভীর প্রবাল প্রাচীরগুলিকে রক্ষা করে । সমুদ্রের নীচের রঙিন সামুদ্রিক জীবন দেখতে চাইলে এই দ্বীপে যাওয়া উচিত । দ্বীপটির রাজধানী গুস্তাভিয়া অসাধারণ একটি মনোরম বন্দর যেখানে প্রচুর প্রমোদতরী, ঐতিহাসিক ভবন এবং রেস্তোরাঁ রয়েছে।
তুর্কি এবং কাইকোস
ব্রিটিশ ওভারসিজ টেরিটরি অব তুর্কস অ্যান্ড কাইকোস দুটি দ্বীপ অঞ্চল নিয়ে গঠিত । এখানে মোট ১০০ টি দ্বীপ রয়েছে যার নয়টিতে জনবসতি আছে। এখানকার দুর্দান্ত আবহাওয়ার জন্য দ্বীপগুলো পরিচিত। দ্বীপগুলোতে গ্রেস বে বীচ বা নরম সাদা বালি, শান্ত সমুদ্র এবং একটি বিস্তৃত ব্যারিয়ার রিফ আছে । কায়াকিং, পালতোলা, স্নরকেলিং এবং প্যাডেলবোর্ডিং এখানে খুবই জনপ্রিয় ।
অ্যাঙ্গুইলা
পূর্ব ক্যারিবিয়ানে অবস্থিত, অ্যাঙ্গুইলা দ্বীপটি। এখানে আছে ১৭৮৫ সালের একটি প্ল্যান্টেশন হাউস। এই দ্বীপের পূর্ব দিকে আছে শোল বে এবং পশ্চিম দিকে মিডস বে এবং রেন্ডেজভাস বে ।
নেকার দ্বীপ এবং মস্কিটো দ্বীপ
স্যার রিচার্ড ব্র্যানসনের ব্যক্তিগত দ্বীপগুলি ক্যারিবিয়ানদের সবচেয়ে বিখ্যাত দ্বীপগুলোর মধ্যে কয়েকটি। ভার্জিন গোর্ডার এক মাইল উত্তরে নেকার দ্বীপে রয়েছে প্লাস ভিলা, জমকালো ল্যান্ডস্কেপিং এবং বিভিন্ন ধরনের বন্যপ্রাণী, যা সংরক্ষণবাদীদের একটি দল যত্ন করে রাখে । মোস্কিটো দ্বীপ জুড়েই রয়েছে স্বচ্ছ, নীল জলে ঘেরা প্রাকৃতিক সৌন্দর্য। অতিথিদের জন্য বিশেষ এস্টেট ।
কোজুমেল, মেক্সিকো
এই দ্বীপটি ইউকাটান উপদ্বীপের পূর্ব উপকূলে অবস্থিত । কোজুমেল দ্বীপ মেসোআমেরিকান রিফে অবস্থিত যা বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম ব্যারিয়ার প্রাচীর। রিফের চারপাশে স্বচ্ছ জলে স্নরকেলিং এবং ডাইভিং করে হাইকাররা ইকো বিচ পার্কে ৩৬০-ডিগ্রি ভিউ নিতে আসে ।
মার্টিনিক
মার্টিনিক সেন্ট লুসিয়ার উত্তরে অবস্থিত । একটি সক্রিয় আগ্নেয়গিরি দ্বীপের প্রাকৃতিক বিস্ময়গুলির মধ্যে একটি। দ্বীপের চমত্কার সৈকত, রেইন ফরেস্ট এবং পর্বত দর্শনার্থীদের হাইকিং, কায়াকিং এবং দ্বীপের সুরক্ষিত পার্কল্যান্ড ঘুরে দেখার মতো রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতা দেয়। ঐতিহাসিক জাহাজের ধ্বংসাবশেষ
এবং দ্বীপের বিচিত্র সামুদ্রিক জীবন মার্টিনিকের অন্যতম আকর্ষণ। এখানকার সামুদ্রিক খাবার এবং সী-ডায়ভিং-ও অনেক বিখ্যাত।
বার্বাডোজ
ক্যারিবিয়ান দ্বীপপুঞ্জের সবচেয়ে পূর্ব দিকে অবস্থিত বার্বাডোস দ্বিপটি ৪০ টিরও বেশি সাদা-বালির সৈকত নিয়ে গঠিত । এই দ্বীপের বাতাস কাইটসার্ফিংয়ের জন্য নিখুঁত। এবং এখানে জেট স্কিইং, কায়াকিং, প্যাডেলবোর্ডিং, গভীর-সমুদ্রে মাছ ধরা এবং সার্ফিংয়ের খুবই জনপ্রিয়।
মার্কিন ভার্জিন দ্বীপপুঞ্জ
পুয়ের্তো রিকো থেকে প্রায় ১০০ মাইল দূরে এই দ্বীপপুঞ্জটি তিনটি প্রধান দ্বীপ নিয়ে গঠিত। এগুলো হচ্ছে সেন্ট টমাস , সেন্ট জন এবং সেন্ট ক্রোইক্স । শুল্ক-মুক্ত কেনাকাটার জন্য পরিচিত মার্কিন ভার্জিন দ্বীপপুঞ্জ। দর্শনার্থীরা প্রবাল প্রাচীর, ম্যানগ্রোভ এবং রঙিন সামুদ্রিক জীবন দেখতে এখানে আসে। এছাড়াও সেন্ট ভার্জিন আইল্যান্ডস ন্যাশনাল পার্কে সৈকত, হাইকিং ট্রেইল এবং ঐতিহাসিক ধ্বংসাবশেষ রয়েছে।
বাহামাস
বাহামার ৭০০ টিরও বেশি দ্বীপ রয়েছে । প্যারাডাইস আইল্যান্ডে নামে বিখ্যাত দ্বীপপুঞ্জটি নির্জন গোলাপী বালির সৈকত এবং ঐতিহাসিক স্থাপত্যর নিয়ে অনন্য। এখানে একটি অসাধারণ সংরক্ষিত সামুদ্রিক অঞ্চল যা এখানকার বিচিত্র সমুদ্র জীবন রক্ষা করে। এই দ্বীপপুঞ্জ মাছ ধরা, পালতোলা, নৌবিহার এবং মনোমুগ্ধকর ঔপনিবেশিক শহরগুলির জন্য পরিচিত।