তারা সবাই কাজ করেন সিনেমার ‘এক্সট্রা’ শিল্পী হিসেবে। কেউ নায়ক-নায়িকার পেছনে নাচেন, কেউ ফাইট করেন, আবার কেউ বা ছোট্ট চরিত্রে অভিনয় করেন। সিনেমার কাহিনীর সাথে তাদের উপস্থিতি একেবারেই সংগত। তবু এ পাড়ায় তাদের ‘এক্সট্রা বা অতিরিক্ত’ শিল্পী হিসেবেই ডাকা হয়। কেমন আছেন এই শিল্পীরা?
নাচের দলে কাজ করেন এমন একজন নারী শিল্পী বলেন, ‘ আমরা কী খাই কী লই, কেউ আমাদের খোঁজ নেয় না। এখানে দিন -রাইত আইস্যা ( এফডিসিতে) বইস্যা থাকতে পারি। কেউ ১০ টাকা দিয়াও আমাগো খোঁজ নেয় না। সন্তান, সংসার নিয়া অনেক কষ্টে থাকি। ১৭ বছর ধরে কাজ নাই। এক দিন কাজ পাইলে ১০ দিন বইস্যা থাকতে হয়। এই কষ্ট কওন যায় না।’
তারা জানান, চলচ্চিত্রে মন্দা চলছে ২০০৬ সাল থেকেই। সংসার চালানোর জন্য হন্যে হয়ে একটি কাজের জন্য ছুটতে হয়। মাসে যে কটা কাজ জোটে তাতে ছেলে-মেয়ে নিয়ে দুবেলা খেয়ে পরে বেঁচে থাকাটাই দায়। তার ওপর রয়েছে দালাল চক্র। পারিশ্রমিকের অর্ধেকটাই হাতিয়ে নেয় তারা।
এক শিল্পী জানান, ‘আমরা কষ্ট করি, পরিশ্রম করি কিন্তু পেট ভরে দালালগো। ওরা ঠিকই পার্টি থেকে টাকা নেয়। কিন্তু আমাগো টাকা দেয় কম। যেটা বলতে গেলে পরবর্তীতে ওই পার্টির সাথে কাজ করা যায় না।’
শিল্পীদের দাবি, বড় বড় তারকাদের পারিশ্রমিকের সাথে তাদের পার্থক্য আকাশ পাতাল। এরপরও সরকারি সাহায্যের বড় অংশই চলে যায় তাদের হাতেই।
আরও এক শিল্পী বলেন, ‘আরে ভাই আমরা তো পাঁচশ টাকা -হাজার টাকা করে কাজ করি। সরকার অনেক সহযোগিতা করে। বড়-বড় আর্টিস্টদের বড় বড় টাকা দিছে। ছেলে-মেয়ে আমেরিকা-লন্ডনে পড়া লেখা করছে। তাদের লাখ লাখ টাকা দিছে। আমাদের মতো জুনিয়র আর্টিস্টদের কি চোখে পড়ার মতো। আমরা হইলাম পুঁটি মাছ। আপনি পুঁটি মাছের মুখ ভরাবেন নাকি বোয়াল মাছের?’
তবে দু’একজন আছেন, যারা এই শিল্পীদের কষ্ট বোঝেন। অসময়ে হাত বাড়িয়ে দেন তাদের দিকে। চিত্রনায়ক আলমগীরের কথা বলেন তারা। সব সময়ই জুনিয়র আর্টিস্টদের পাশে থাকেন।
তারা বলেন, জীবনের তাগিদেই অনেকে এখন পেশা বদল করছেন। কিন্তু কাজটাকে ভালোবেসে এখনও যারা আঁকড়ে রয়েছেন, তাদের প্রতিদিনের কষ্ট নিয়েই হতে পারে এক একএকটা সিনেমা।