ঈদকে কেন্দ্র করে দেশের ব্যাংকগুলোতে নগদ টাকার চাহিদা বেড়ে গেছে। ফলে নগদ টাকার সংকট দেখা গেছে অনেক ব্যাংকে। এই সংকট কাটাতে এক ব্যাংক অন্য ব্যাংকের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে। ফলে কলমানিতে আগের চেয়ে রেকর্ড বেড়েছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকে তাই ধার দেওয়ার পরিমাণ বাড়ছে। এমন পরিস্থিতিতে ঈদের আগে টাকা ধার দিতে বিশেষ ব্যবস্থা নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। আর সব ক্ষেত্রে সুদহার এখন আগের চেয়ে বাড়তি।
ব্যাংক কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ডলার কেনার কারণে বড় অঙ্কের টাকা কেন্দ্রীয় ব্যাংকে চলে যাচ্ছে। ঈদের আগে সরকারি-বেসরকারি সব প্রতিষ্ঠানে বোনাস দিতে হচ্ছে। আবার মাস শেষ হওয়ার আগেই অনেক প্রতিষ্ঠান কর্মীদের বেতন বুঝিয়ে দিচ্ছে। এছাড়া ঈদে এবার লম্বা ছুটি। এজন্য অনেকেই আগেভাগে বাড়িতে যাচ্ছেন। তাই ব্যাংক থেকে টাকা তুলে নিচ্ছেন। সব মিলিয়ে নগদ টাকার চাহিদা বেড়ে সংকট তৈরি হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যমতে, গত জানুয়ারিতে ব্যাংকগুলোয় উদ্বৃত্ত তারল্য ছিল ২ লাখ ১১ হাজার ৫০৬ কোটি টাকা, ফেব্রুয়ারিতে কমে হয় যা ২ লাখ ৪ হাজার ৬৩৫ কোটি টাকা। মার্চে এই অর্থের পরিমাণ আরও কমেছে।
তবে এত টাকা থাকার পরও ব্যাংকগুলো ধার করছে। কারণ ব্যাংকগুলোর কাছে নগদ টাকা আছে খুবই কম। উদ্বৃত্ত তারল্যের সিংহভাগ ব্যাংকগুলো ট্রেজারি বিল-বন্ডে বিনিয়োগ করেছে। কারণ পাঁচ বছর মেয়াদি বন্ডে এখন ৭ শতাংশ সুদ দিচ্ছে সরকার।
এছাড়া ব্যাংকগুলোর হাতে গত জানুয়ারিতে নগদ অর্থ ছিল ২৯ হাজার ৬৭৪ কোটি টাকা, ফেব্রুয়ারিতে কমে যা হয় ২৬ হাজার ২৭৫ কোটি টাকা। এই টাকা দিয়ে দৈনন্দিন কার্যক্রম মেটানো কঠিন, এজন্য ব্যাংকগুলো টাকা ধার করছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলছে, বুধবার ব্যাংকগুলো কলমানিতে ৮ হাজার ৮৮০ কোটি টাকা হাতবদল করেছে। এতে গড় সুদহার ছিল ৪ দশমিক ৭৫ শতাংশ। গতকাল ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো ১৫৯টি লেনদেন সম্পন্ন করে। গতকাল যে লেনদেন হয়, তা ছিল গত ৯ দিনের মধ্যে সর্বোচ্চ।
জরুরি পেমেন্টগুলো করার জন্য ব্যাংকগুলো সহযোগী ব্যাংক থেকে স্বল্প মেয়াদে, সাধারণত একদিন থেকে এক সপ্তাহ মেয়াদের জন্য অর্থ ধার করে থাকেন। এই আন্তঃব্যাংক ধারকে কলমানি বলে। কলমানি রেট গড়ে সাধারণত ৩ দশমিক ৫০ শতাংশ থেকে ৪ দশমিক ৫০ শতাংশ এর মধ্যে থাকে।
বুধবার সবচেয়ে বেশি টাকা ধার দিয়েছে ব্যাংক এশিয়া। ব্যাংকটি একদিনে ২ হাজার ২০০ কোটি টাকা ধার দিয়েছে। এরপরই সোনালী ব্যাংক দিয়েছে ১ হাজার ৬০০ কোটি টাকা, আইএফআইসি ব্যাংক দিয়েছে ৯০০ কোটি টাকা।
কলমানি থেকে এদিন সবচেয়ে বেশি টাকা ধার করেছে দি সিটি ব্যাংক। ব্যাংকটি এক দিনে ৯৫৩ কোটি টাকা ধার করেছে। রূপালী ব্যাংক ধার করেছে ৭৩০ কোটি ও মার্কেন্টাইল ব্যাংক ৬৮১ কোটি টাকা।