করোনার কারণে ২০২০ সালে প্রযুক্তির চাহিদা বেড়েছে। বেশির ভাগ মানুষ তাদের অফিস থেকে শুরু করে জরুরি মিটিং,লেনদেন বা কেনাকাটা সবই করেছে অনলাইনে। শুধু তাই নয়, পুরো বছর জুড়ে বেড়েছে স্মার্টফোন বিক্রি। একই সঙ্গে ইন্টারনেটের ব্যবহারও বেড়েছে পাল্লা দিয়ে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোসহ প্রয়োজনীয় নানা অ্যাপের ডাউনলোডের সংখ্যাও বেড়েছে।
তবে ২০২১ সালে প্রযুক্তিগত এসব পরিবর্তন বজায় থাকবে কি না তা একটি বড় প্রশ্ন। ২০২০ জুড়ে যেসব প্রযুক্তি আলোচনায় ছিল, সেগুলোর ভবিষৎ কি হবে তারই সারসংক্ষেপ এই প্রতিবেদনে আলোচনা করা হলো।
ওয়ার্ক ফ্রম হোম
করোনার জন্য বিশ্বের বেশিরভাগ দেশই এখন লকডাউনের কবলে। এজন্য ২০২০ সালে ঘরে থেকে অফিস করার যে পদ্ধতি চালু করা হয়েছিল, তা এবছরও থাকবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
সিসিজি ইনসাইটের নিরীক্ষা বলছে, ইউরোপ-আমেরিকার ৬০ শতাংশ ব্যবসায়িক নেতারা মনে করছেন, করোনার পরও ২৫ শতাংশ অফিস কর্মীদের বাসায় বসে অফিস করার পদ্ধতি জারি থাকবে। বড় বড় বহু প্রতিষ্ঠানও ইতোমধ্যে কর্মীদের বাসায় থেকে কাজের সুযোগ দিয়েছে এবং এ সুযোগ দীর্ঘ সময় বহাল থাকবে।
ভিডিও কনফারেন্সিং প্ল্যাটফরম
গেল বছর সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয়তা পেয়েছে জুম ভিডিও কলিং অ্যাপ। এছাড়াও মাইক্রোসফট টিম ও অ্যাপলের ফেইস টাইমে মানুষ ঘণ্টার পর ঘণ্টা সময় পার করেছে। করোনার সময়ে দূরে থেকেও ডিজিটাল এসব প্ল্যাটফরম মানুষকে একে অপরের সাথে যুক্ত করে রেখেছে।
ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল এর এক প্রতিবেদন বলছে, মহামারির এ সময়ে বিশ্বে ডিজিটাল রূপান্তরের যাত্রায় সবচেয়ে বেশি প্রভাব ফেলেছে ভিডিও কনফারেন্সিং সেবা জুম। আর ২০২১ সালেও এসব ডিজিটাল সেবা জনপ্রিয়তার তুঙ্গে থাকবে বলেও ধারণা প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞদের।
ফাইভজি নেটওয়ার্ক
২০২০ সালে ফাইভজি নেটওয়ার্ক যোগাযোগের ধরণ অনেকটাই বদলে দিয়েছে। ইতোমধ্যে বিশ্বের ১শ কোটিরও বেশি মানুষ ফাইভজির আওতায় এসেছে। একইসঙ্গে ২০২৬ সালে বিশ্বের ৬০ শতাংশ মানুষ ফাইভজি কভারেজের আওতাভুক্ত হবে এবং ফাইভজি সাবস্ক্রিপশন পৌঁছে যাবে ৩৫০ কোটিতে।
এরিকসন মোবিলিটি রিপোর্টের সর্বশেষ সংস্করণ অনুসারে, ২০২০ সালের মধ্যে ১শ কোটিরও বেশি মানুষ ফাইভজি কভারেজের এলাকায় এসেছে। আর ২০২৬ সালে প্রতি ১০টি মোবাইল সাবস্ক্রিপশনের মধ্যে ৪টি হবে ফাইভজি।
আর ২০২১ সালে তরঙ্গ নিলাম পরিকল্পনায় বাংলাদেশ, ভিয়েতনাম ও মালয়েশিয়ার মতো দেশগুলোয় পরের বছরে ফাইভজি নেটওয়ার্ক চালুর বিষয় বিবেচিত হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
ফোল্ডেবল ফোন
বিগত বছরে কিছু স্মার্টফোন নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান বেশ কয়েকটি ফোল্ডেবল ফোন এনেছে। ইতোমধ্যেই অ্যাপলসহ আরও কয়েকটি কোম্পানি ফোল্ডেবলের পেটেন্ট নিয়েছে।
২০২১ সালে ফোল্ডেবল ফোনের আরও মডেল আসবে বলে ধারণা করা হচ্ছে ।
ফাইভজি স্মার্টফোন
২০২১ সাল থেকে ফাইভজি স্মার্টফোনের বাজার আবার ঘুরে দাঁড়াবে বলে আশাবাদী প্রযুক্তিবিদরা। বাজার গবেষণা প্রতিষ্ঠান ক্যানালিসের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।
২০২১ সালে ফাইভজি স্মার্টফোনের বাজার ৯ দশমিক ৯ শতাংশ বাড়তে পারে বলে গবেষকরা জানিয়েছেন। এছাড়া প্রায় ১৩০ কোটি ইউনিটের বেশি স্মার্টফোন বিক্রি হবে বলেও তাদের প্রত্যাশা।
পণ্য ডেলিভারিতে রোবট
মার্কিনী প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান অ্যামাজনের ব্যবসা বেড়েছে লকডাউনের সময়। প্রতিষ্ঠানটি পণ্য ডেলিভারির জন্য রোবটের পরীক্ষামূলক ব্যবহার চালিয়েছে। মূলত ছোট একটি ট্রাকের মাধ্যমে তারা এ পরীক্ষা চালায়। এ রোবটের নাম দেওয়া হয়েছে স্কাউট। ওয়াশিংটনের পায়ে হাঁটা পথে রোবটটির পরীক্ষামূলক ব্যবহার হচ্ছে।
আপাতত অ্যামাজন ডেলিভারি কাজে ৬ টি রোবট ব্যবহার করছে বলে জানা গেছে। এগুলো মানুষের ‘হাঁটার গতিতে’ পণ্য নির্দিষ্ট ঠিকানায় পৌঁছে দেবে। ধারণা করা হচ্ছে, ২০২১ সালে ওয়্যারহাউসগুলোয় তারা পণ্য বহন ও প্যাকিংয়ের জন্য রোবটের ব্যবহার বাড়াবে।
হোম অটোমেশন
একটি বাড়ির হিটিং সিস্টেম, লাইটিং সিস্টেম এবং সিকিউরিটি কন্ট্রোল সিস্টেমসহ সংশ্লিষ্ট ডিভাইসগুলোকে স্মার্ট উপায়ে নিয়ন্ত্রণ করাকে হোম অটোমেশন বলা হয়।
আশা করা হচ্ছে, ২০২১ সালে এর জনপ্রিয়তা আরও বৃদ্ধি পাবে। এছাড়া স্মার্ট স্পিকার, ভয়েস কমান্ড দিয়ে ঘরের লাইট ফ্যান অন বা অফ করা- এ ধরনের প্রযুক্তির ব্যবহারও বাড়বে আগের চেয়ে বহুগুণ।
টেক ইভেন্ট
করোনার জন্য বছরজুড়েই সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার নির্দেশ ছিল। ফলে ২০২০ সালের প্রায় সব টেক সম্মেলন বাতিল হয়েছে।
আর ২০২১ সালে বার্সেলোনা মোবাইল কংগ্রেস-এর আয়োজন হবে গরমকালে। করোনা ভয়াবহতা থেকে কিছুটা মুক্তি পেলে হয়তো অন্য টেক ইভেন্টগুলোও আয়োজিত হবে।