সাইফুল ইসলামের জন্ম ১৯৫২ সালের ১৪ ডিসেম্বর সিরাজগঞ্জে। পূর্ব পাকিস্তান ছাত্রলীগের মিছিল থেকে মুক্তিযুদ্ধে যোগদান। স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে জাসদ-এর রাজনীতিতে যুক্ত ছিলেন। সংবাদমাধ্যমে কাজ করেছেন বহুদিন। বর্তমান পেশা লেখালেখি। প্রকাশিত গ্রন্থ সংখ্যা কুড়ির অধিক। মুক্তিযোদ্ধা সাইফুল ইসলাম এখন সিরাজগঞ্জ গণহত্যা অনুসন্ধান কমিটির আহ্বায়ক।
ইদানিং একটি রাজনৈতিক ধারণা প্রচারিত হচ্ছে, যা অনেকেই এমনকি বামপন্থীরাও সঠিক বলে সায় দিচ্ছেন। যুক্তি দেখাচ্ছেন, হ্যাঁ এভাবেও সমাজ বদল ঘটতে পারে। ধারণাটি হচ্ছে, বিদ্যমান ধর্মীয় রাজনৈতিক শক্তির সঙ্গে যুক্ত হয়ে সরকার উচ্ছেদ করে বর্তমান সমাজের ‘বদল’ ঘটানো।
যুক্তি দিয়ে তারা বলার চেষ্টা করেন, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান, ইসলামসহ বিভিন্ন ধর্ম দরিদ্র মানুষের মুক্তির লক্ষ্যে আন্দোলন শুরু করে এবং পরে ধর্মে রূপান্তর হয়। নিকট অতীতের উদাহরণ দিয়ে তারা বলেন, হাজী শরীয়তুল্লাহ, তিতুমীর প্রমুখ ধর্মের পাশাপাশি দরিদ্র মানুষের মুক্তির লড়াইয়ে নেতৃত্ব দিয়েছেন। কথা সত্য।
১৮৮৫ সালে ভারতবর্ষে প্রথম রাজনৈতিক দল গঠিত হয়। তার আগের সকল আন্দোলন গড়ে উঠেছে ধর্মীয় নেতাদের নেতৃত্বে, সে হিসেবে ধর্মের ইতিহাস শ্রেণিসংগ্রামের ইতিহাসও। তাই এখন কেন নয়? অকাট্য যুক্তি।
কিন্তু এ যুক্তি যারা দেখান তারা রাষ্ট্রকে বুঝতে চান না। অর্থনীতিকে আরও নয়। সেকালের রাষ্ট্র কাঠামো যত দুর্বল ছিল, এখন রাষ্ট্র তার চেয়ে অনেক অনেক শক্তিশালী। সে জানে যে, তাকে নিরপেক্ষতার ভান করে প্রভাবশালীর দয়াদাক্ষিণ্যে টিকে থাকতে হবে। মানে তাদের শ্রেণিস্বার্থ দেখতে হবে। এ কারণে বর্তমান রাষ্ট্র ধার্মিক হতে পারে না। অপরদিকে সেকালের ধর্মীয় নেতারা কৃষকের অনুদান নির্ভর জীবনযাপন করতেন। তাই কৃষকের বিপদে সাড়া দিতেন তারা। এ ধরনের ধর্মীয় নেতাদের সর্বশেষ সংস্করণ মওলানা ভাসানী। এরপরে আর কোনো কৃষকবান্ধব পীর বা ধর্মীয় নেতা আসেননি, বোধ করি আসবেনও না।
এখনকার ধর্মীয় নেতারা রাষ্ট্র নির্ভর। রাষ্ট্রের আনুকূল্য না পেলে এনারা স্ফূরণ ঘটাতে পারেন না। তাই বর্তমান ধর্মীয় নেতাদের নেতৃত্বে যারা সমাজ বদলের কথা ভাবেন, তারা কিসের স্বর্গে বাস করেন তা জানি না।
মতামত বিভাগে প্রকাশিত লেখা লেখকের ব্যক্তিগত ভাবনার প্রকাশ। এর জন্য বিবিএস বাংলা কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়।