fbpx

কবিরাজ সেজে বাসায় প্রবেশ করে লুট, গলা কেটে হত্যা

Pinterest LinkedIn Tumblr +
Advertisement

ঢাকার আশুলিয়ায় কবিরাজ সেজে বাসায় প্রবেশ করে একই পরিবারের তিনজনকে নৃশংসভাবে গলা কেটে হত্যার ঘটনায় এক দম্পতিকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশের এলিট ফোর্স র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব)।

গ্রেপ্তারকৃতরা হলো- কথিত কবিরাজ ও সিরিয়াল কিলার সাগর আলী (৩১) ও তার স্ত্রী ইশিতা বেগম (২৫)। সোমবার দিবাগত রাতে গাজীপুরের শফিপুর এলাকা থেকে তাদের গ্রেপ্তার করে র‌্যাব-৪ এর একটি দল।গ্রেপ্তারকৃতরা ভুয়া কবিরাজি করতে গিয়ে প্রথমে অর্থের লোভে ও পরে কাঙ্ক্ষিত অর্থ না পেয়ে ক্ষোভ থেকে এ হত্যাকাণ্ড ঘটায়।

আজ মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে রাজধানীর কারওয়ান বাজারের র‌্যাবের মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার প্রধান খন্দকার আল মঈন। গ্রেপ্তারের সময় উদ্ধার করা হয় হত্যাকাণ্ডের সময় ভুক্তভোগী মোক্তারের কাছ থেকে ছিনিয়ে নেওয়া আংটি।

এর আগে গত ৩০ সেপ্টেম্বর সাভারের আশুলিয়া জামগড়া এলাকায় একটি ফ্ল্যাট থেকে স্বামী  (মোক্তার), স্ত্রী ও তাদের ১২ বছরের সন্তানের অর্ধগলিত গলা কাটা মরদেহ উদ্ধার করা হয়। এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় ভুক্তভোগীর ভাই বাদী হয়ে আশুলিয়া থানায় অজ্ঞাতনামা আসামি করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। পরে গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে তাদের জড়িতদের গ্রেপ্তার করা হয়।

খন্দকার আল মঈন সংবাদ সম্মেলনে বলেন, গত ২৮ সেপ্টেম্বর সাগর সাভার বারইপাড়া এলাকার একটা চায়ের দোকানে চা খাওয়ার সময় মোক্তারকে পাশের একটি কবিরাজি ও ভেষজ ওষুধের দোকানে তার শারীরিক সমস্যার বিষয়ে চিকিৎসা নিয়ে কথা বলতে দেখে। সাগর জানতে পারে, মোক্তার ওই দোকানে ভেষজ ও কবিরাজি চিকিৎসা বাবদ ১৫-২০ হাজার টাকা খরচ করেও কোনো উপকার পায়নি। গ্রেপ্তার হওয়া সাগর কৌশলে মোক্তারকে ডেকে নিয়ে আসে এবং কথাবার্তায় জানতে পারে যে মোক্তারের ভেষজ ও কবিরাজি চিকিৎসার প্রতি আগ্রহ ও আস্থা রয়েছে। মোক্তার তার ও তার পরিবারের বেশ কিছু শারীরিক সমস্যার কথাও সাগরকে জানায়।

র‌্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, গ্রেপ্তার সাগর জানায়, তার স্ত্রী একজন ভালো কবিরাজ এবং সে তার সমস্যার সমাধান করে দেবে বলে মিথ্যা আশ্বাস দেয়। একপর্যায়ে সাগর চিকিৎসার জন্য ভুক্তভোগী মোক্তারের সঙ্গে ৯০ হাজার টাকায় চুক্তি করে। সাগর ও তার স্ত্রী ২৯ সেপ্টেম্বর সকালে ওষুধসহ তার বাসায় গিয়ে চিকিৎসা করবে বলে জানায়। তারা পরিকল্পনা করে ভুক্তভোগী মোক্তারের বাসায় গিয়ে ভেষজ ও কবিরাজি চিকিৎসার কথা বলে তার পরিবারের সবাইকে ঘুমের ওষুধ খাইয়ে তাদের অর্থসহ মূল্যবান সামগ্রী লুট করবে। পরিকল্পনামতো গ্রেপ্তার হওয়া সাগর গাজীপুরের মৌচাক এলাকার একটি ফার্মেসি থেকে ১ বক্স (৫০টি) ঘুমের ওষুধ নেন।

গ্রেপ্তারকৃতদের জিজ্ঞাসাবাদে আরো জানা যায়, ২৮ সেপ্টেম্বর রাতে সাগরের সঙ্গে তার আত্মীয়ের মোবাইল ফোনে কথা বলে শর্ত মোতাবেক চিকিৎসার ৯০ হাজার টাকা দেওয়ার ব্যাপারে মোক্তার আশ্বাস প্রদান করে। সে মতে পরদিন সকালে সাগর ও তার স্ত্রী গাজীপুরের মৌচাক থেকে মোক্তারের বাসায় যান। বাসায় গিয়ে তার পরিবারের সঙ্গে পরিচয়ের পর সাগরের স্ত্রী ঈশিতা তাদের সমস্যার কথা শুনে এবং ইসবগুলের শরবতের সঙ্গে চেতনানাশক ওষুধ মিশিয়ে তাদের ভেষজ ও কবিরাজি চিকিৎসার ওষুধ বলে খাওয়ায়। পরে মোক্তার, তার স্ত্রী ও তার ছেলে ঘুমের ওষুধের প্রভাবে ঘুমিয়ে পড়লে সাগর ও তার স্ত্রী মিলে প্রথমে মোক্তারের কক্ষে গিয়ে মোক্তারের হাত ও পা বাঁধে, পরে মোক্তারের স্ত্রীর হাত-পা বাঁধে। তারা মোক্তারের মানিব্যাগ, তার স্ত্রীর পার্স ও বাসার অন্যান্য স্থানে অর্থ ও মূল্যবান সামগ্রীর জন্য তল্লাশি করে মাত্র পাঁচ হাজার টাকা পায়। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে মোক্তারের গলায় উপর্যুপরি কোপ দিয়ে হত্যা করে। পরে ছেলে ও স্ত্রীকে একই বঁটি দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করে। তাদের সবার মৃত্যু নিশ্চিত করে মোক্তারের হাতে থাকা আংটিটি নিয়ে যায়। পরে উভয়ে ভিন্নপথে রিকশাযোগে গাজীপুরের মৌচাকে তার শ্বশুরবাড়ি (ভাড়া বাসায়) আসে এবং সেখানেই অবস্থান করতে থাকে।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, মোক্তার হোসেন ও তার স্ত্রী সাহিদা বেগম আশুলিয়ার একটি পোশাক কারখানায় কাজ করতেন। তার সন্তান মেহেদী হাসান জয় স্থানীয় একটি স্কুলে সপ্তম শ্রেণিতে পড়াশোনা করতেন। মোক্তার ও তার স্ত্রী চাকরির উদ্দেশ্যে সন্তানসহ বেশ কিছুদিন ঠাকুরগাঁও থেকে সাভারের আশুলিয়া এলাকায় এসে বসবাস শুরু করেন।

এদিকে সাগর মাদকাসক্ত ছিল এবং সে বিভিন্ন পেশার আড়ালে চুরি ও ছিনতাই করত বলে জানা যায়। এর আগেও সে ২০২০ সালে টাঙ্গাইলের মধুপুরে ২০০ টাকার জন্য একই পরিবারের চারজনকে চেতনানাশক ওষুধ খাইয়ে একই কায়দায় গলা কেটে হত্যা করে। হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় র‌্যাব-১২ তাকে গ্রেপ্তার করে। পরে প্রায় সাড়ে তিন বছর কারা ভোগ করে ২০২৩ সালের জুন মাসে জামিন পেয়ে গাজীপুরের মৌচাক এলাকায় তার শ্বশুরের ভাড়া বাসায় কিছুদিন অবস্থান করে। দীর্ঘদিন জেলহাজতে থাকায় এবং তার আর্থিক অবস্থা ভালো না থাকায় সে রাজমিস্ত্রি, কৃষি শ্রমিকসহ বিভিন্ন পেশার আড়ালে ঢাকা, সিলেট ও টাঙ্গাইলে অবস্থান করে এবং সুযোগ বুঝে চুরি ও ছিনতাই করত বলে জানা যায়।

Advertisement
Share.

Leave A Reply