Advertisement
করোনা মহামারিতে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে ১৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী এবং সংসদ নেতা শেখ হাসিনা।
মঙ্গলবার বিকেলে স্পিকার ড.শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে একাদশ জাতীয় সংসদের ত্রয়োদশ অধিবেশন (২০২১-২২ সালের বাজেট অধিবেশন) এর সমাপনী ভাষণে একথা বলেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী তার বক্তব্যে বলেন, ‘প্রাথমিক হিসেব অনুযায়ী ২০১৯-২০ এবং ২০২০-২১ অর্থবছরে করোনা ভাইরাসজনিত কারণে দেশের অর্থনৈতিক ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে আনুমানিক ১৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। এ সময় অর্থনৈতিক অভিঘাত থেকে উত্তরণে আমরা ১৫ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলার সমপরিমাণ ২৩টি প্রণোদনা প্যাকেজ প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করে যাচ্ছি।‘
‘তাঁর সরকারের দেয়া প্রণোদনা প্যাকেজগুলো অত্যন্ত সন্তোষজনকভাবে এগিয়ে চলছে,’ উল্লেখ করে সরকার প্রধান বলেন, ২৩টি প্যাকেজের এক লাখ ২৮ হাজার ৪৪১ কোটি টাকার বিপরীতে মে ২১ পর্যন্ত বাস্তবায়ন হার ৭১ দশমিক ৫০ শতাংশ। এ পর্যন্ত ছয় কোটি পাঁচ লাখ ব্যক্তি এবং এক লাখ ছয় হাজার প্রতিষ্ঠান সরকারের এসব উদ্যোগের মাধ্যমে প্রত্যক্ষভাবে উপকৃত হয়েছে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ক্ষতিগ্রস্ত শিল্প ও সেবাখাতের ব্যবসা টিকিয়ে রাখতে ৪১ হাজার কোটি টাকা স্বল্পসুদে ঋণসুবিধা প্রদান করা হয়েছে। এর মধ্যে গত মে পর্যন্ত তিন হাজার ২৮৮ হাজার প্রতিষ্ঠানকে ৩২ হাজার ৫৩৬ কোটি টাকা ঋণ বিতরণ করা হয়েছে। কুটির ও মাঝারি শিল্পের মধ্যে ২০ হাজার কোটি টাকার তহবিলের মধ্যে মে মাস পর্যন্ত ৯৬ হাজার ৬৭৫টি এসএমই প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে ১৪ হাজার ৭৭২ কোটি টাকা স্বল্পসুদে ঋণ বিতরণ করা হয়েছে। যার মধ্যে পাঁচ হাজার ২৫৩ জন নারী উদ্যোক্তা রয়েছেন।‘
কোভিড-১৯ এ সৃষ্ট অর্থনৈতিক সঙ্কট মোকাবিলায় তাঁর সরকার আগেই বিস্তারিত পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে এবং সব কাজ গুরুত্বের সঙ্গে গ্রহণ করেছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সরকার ব্যয় বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সরকার ব্যাংক ব্যবস্থাপনা থেকে স্বল্প সুদে ঋণ সুবিধা প্রদান, সামাজিক সুরক্ষা কার্যক্রম বৃদ্ধি ও বাজারে মুদ্রা সরবরাহ বৃদ্ধি করার উদ্যোগ নিয়েছে যার অন্যতম লক্ষ্য পুনরুদ্ধার কার্যক্রমের মাধ্যমে জনগণকে সুরক্ষা দেয়া এবং সব শ্রেণির মানুষ যাতে সুবিধা পায় সেই ব্যবস্থা করা।‘
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘করোনাভাইরাসের ফলে দেশের আমদানি-রফতানিসহ অর্থনীতির ওপর ব্যাপক প্রভাব পড়ে, বিভিন্ন সেক্টরে এর প্রভাব দেখা দেয়। এই পরিস্থিতি সামাল দেয়ার জন্যই সরকার প্রতিরোধমূলক নানাবিধ সময়োপযোগী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে।‘
করোনা চিকিৎসার সাথে জড়িতদের ক্ষতিপূরণ নিশ্চিত করা হয়েছে জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘করোনা আক্রান্তদের সেবায় সরাসরি নিয়োজিত চিকিৎসক, নার্সসহ স্বাস্থ্যকর্মীদের দুই মাসের সমান বেতনের সমপরিমাণ বিশেষ সম্মানী দেয়া হয়েছে। এতে ২০ হাজার ৫০০ স্বাস্থ্যকর্মীকে ১০৪ কোটি টাকা সম্মানী প্রদান করা হয়েছে। পাশাপাশি করোনা সেবায় সরাসরি সম্পৃক্ত বিভিন্ন সেক্টরের কর্মচারীদের মধ্যে করোনা আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণকারী ১৭৩ জনের পরিবারকে ৬৯ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দেয়া হয়েছে।’
সংসদের চলতি অধিবেশনে করোনার মধ্যে তাঁর সরকারের ৬ লাখ ৩ হাজার ৬৮১ কোটি টাকার বাজেট প্রদান প্রসঙ্গে সংসদ নেতা বলেন, এ বাজেটে করোনার সেকেন্ড ওয়েভ মোকাবেলা, জীবন-জীবিকা সুরক্ষা এবং মহামারির অর্থনৈতিক প্রভাব দৃঢ়তার সাথে কাটিয়ে ওঠার ওপর প্রাধান্য দেয়া হয়েছে। কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টির ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। এই বাজেট বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে দারিদ্র্য বিমোচনসহ আমাদের উন্নয়নের লক্ষ্য অর্জন সম্ভব হবে।’
দেশবাসীর মাথাপিছু আয় এই করোনার মধ্যে বৃদ্ধি পেয়ে দুই হাজার ২২৭ মার্কিন ডলার হয়েছে যা অনেক দেশকে ছাড়িয়ে গেছে, এই ধারাটা আমাদের অব্যাহত রাখতে হবে বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেন শেখ হাসিনা।
এই সময়ে আমাদের রেমিট্যান্স এবং বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বৃদ্ধি পাওয়ার বিষয়টিও স্মরণ করিয়ে দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের অর্থনীতি যথেষ্ট শক্তিশালী এবং এর মধ্যে শ্রীলংকা ২৫০ মিলিয়ন ডলার ঋণ চাওয়ায় তাঁদের সেই ঋণ প্রদানের মাধ্যমে বাংলাদেশ সবসময় আঞ্চলিক সহযোগিতার বিষয়ে যে আন্তরিক সেটা প্রমাণ করেছে।’
(তথ্য ও ছবি সূত্র: বাসস)
Advertisement
