বহুজাতিক কোম্পানি ও অতি সম্পদশালী ব্যক্তিদের কর ফাঁকির কারণে বাংলাদেশ বছরে প্রায় সাড়ে ১৪ কোটি ডলারের সমপরিমাণ কর রাজস্ব হারাচ্ছে বলে ‘দ্য স্টেট অব ট্যাক্স জাস্টিস ২০২১’ শিরোনামে এক বৈশ্বিক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে। বাংলাদেশি টাকায় এর পরিমাণ প্রায় এক হাজার ২৩৭ কোটি টাকা, যা বার্ষিক কর রাজস্বের প্রায় এক শতাংশের ও মাথাপিছু প্রায় এক ডলারের সমান।
প্রতিবেদনটি যৌথভাবে প্রকাশ করেছে কর ন্যায্যতার বৈশ্বিক জোট ‘ট্যাক্স জাস্টিস নেটওয়ার্ক’ ও গ্লোবাল ইউনিয়ন ফেডারেশন পাবলিক সার্ভিসেস ইন্টারন্যাশনাল।
প্রতিবেদনে এই কর হারানোর প্রভাব এবং এই রাজস্ব হারানোর ফলে বাংলাদেশের কতটা সামাজিক ক্ষতি হচ্ছে, তারও একটা হিসাব দেওয়া হয়েছে।
যেখানে বলা হয়েছে, এই কর দিয়ে ৮৩ লাখ ৬৯ হাজার ৯৯১ জনকে বা মোট জনসংখ্যার ৫ দশমিক ৩ শতাংশকে করোনাভাইরাসের টিকা দেওয়া যেত। বাংলাদেশে এই অর্থের পরিমাণ স্বাস্থ্য খাতের মোট বরাদ্দের ১৪ দশমিক ৫২ শতাংশ।
প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশ বছরে যে প্রায় ১৪ কোটি ৪০ লাখ ডলারের সমপরিমাণ কর রাজস্ব হরাচ্ছে, তার মধ্যে ১১ কোটি ৮০ লাখ ডলারের জন্য দায়ী বহুজাতিক করপোরেশন এবং ২ কোটি ৬০ লাখ ডলারের জন্য ধনী ব্যক্তিরা। বিদেশে বাংলাদেশের নাগরিকদের মোট সম্পদের পরিমাণ ১৭০ কোটি ডলার, যা বিদেশে থাকা মোট বৈশ্বিক সম্পদের দশমিক শূন্য ২ শতাংশ।
এই অর্থ মোট জিডিপির দশমিক ৬ শতাংশ। নাগরিকদের বিদেশে রাখা এই সম্পদ থেকে বাংলাদেশ বছরে ২ কোটি ৫৭ লাখ ডলারের কর রাজস্ব হারাচ্ছে।
ট্যাক্স জাস্টিস প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, কর রাজস্ব হারানোয় দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান তৃতীয়। এই তালিকায় ভারত (১৬৮৩ কোটি ডলার) ও পাকিস্তানের (৭৫ কোটি ৯০ লাখ ডলার) প্রথম ও দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে। শ্রীলঙ্কা ও আফগানিস্তান যথাক্রমে ৭ কোটি ৭৯ লাখ ও ৫ কোটি ২ লাখ ডলার হারিয়েছে। নেপাল (৩ কোটি ৮৩ লাখ ডলার) ও ভুটান (২ কোটি ৭১ লাখ ডলার)।
কর রাজস্ব হারানোয় সবচেয়ে ভালো অবস্খানে রয়েছে মালদ্বীপ (৩১ লাখ ৯০ হাজার ডলার)। এই দ্বীপ দেশে করপোরেট কর ফাঁকির ঘটনা নেই বলে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।
‘দ্য স্টেট অব ট্যাক্স জাস্টিস ২০২১’ নামের এই প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, বৈশ্বিক করফাঁকির কারণে দেশগুলো ৪ লাখ ৮৩ হাজার কোটি ডলারের কর রাজস্ব হারাচ্ছে, যা দিয়ে গোটা বিশ্বের মানুষকে তিন বার করোনা টিকা দেওয়া সম্ভব।