fbpx

কার্টুন ও ভাবমূর্তি

Pinterest LinkedIn Tumblr +
Advertisement

লেখক ফিরোজ আহমেদ বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশনের সাবেক সভাপতি। পড়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগে। এখন তিনি গণসংহতি আন্দোলনের রাজনৈতিক পরিষদের সদস্য।

ভাবমূর্তি বিষয়ে অসাধারণ একটি কার্টুন আঁকা হয়েছিল ১৯৯৮ সালে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যৌন নিপীড়নবিরোধী আন্দোলন তখন তুঙ্গে। একই সময় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে চলছিলো ধর্ষণ বিরোধী আন্দোলন। তখনও আওয়ামী লীগ দেশের ক্ষমতায়। কিন্তু এখন যেটা পারছে, তখন সে অবস্থা ছিল না। আঁকিয়েরা তখনও ‘স্বৈরাচার’ এরশাদের আমলের গণতান্ত্রিক তেজ তাই খানিকটা ধারণ করে রাখতে পেরেছিলেন। আসলে আমি মনে করি গণতন্ত্র হলো, মানুষ মাঠে নামতে পারে কি না, তারই মাপকাঠি।

তো ছবিটা ছিল এমন (তখন জীবজন্তু বিষয়ে সংবেদনশীলতা এখনকার চাইতে হয়তো একটু কমই ছিল, অতএব সময়ের গুণে আঁকিয়েকে ক্ষমা করবেন) দাঁত বের করা কতগুলো আক্রমণোদ্যত কুকুর তাড়া করেছে কতগুলো মেয়েকে। মেয়েরা ঊর্ধশ্বাসে পালাচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়ের রাস্তা ধরে, রাস্তায় ছড়িয়ে আছে চপ্পল… পেছনে সেই কুকুরগুলো।
সেই কুকুরগুলোর গায়ে লেখা ছিল ‘ভাবমূর্তি’। ভাবমূর্তি তাড়া করেছে মেয়েদের।

প্রেক্ষাপট খুব পরিস্কার। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন ভিসি বলেছিলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করার জন্য যৌন নিপীড়নবিরোধী আন্দোলনের নামে পরিকল্পিত ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে।

এরপর আর কোন অজুহাত লাগে! যৌন নিপীড়নবিরোধী আন্দোলনের একটি কর্মসূচি শেষ করা নারী-পুরুষ শিক্ষার্থীদের ওপর ডাকসু ভবনের পেছন দিকে ছাত্রলীগ হামলা করে। নৃশংস ছিল সেই হামলা। কার্টুনটি ওই হামলাকেই ইঙ্গিত করা।

খুব পরিস্কার বার্তা। ভাবমূর্তি যখন নাগরিকদের জন্য আতঙ্ক, ভাবমূর্তির শ্বাপদেরা তখন নিপীড়ন কায়েম রাখার পাহারাদার।

খুব পরিস্কার মনে আছে, তখনের ছাত্র ফেডারেশন সভাপতি জোনায়েদ সাকি ভাই বক্তৃতায় নিয়মিত বলতেন, এ কেমন ভাবমূর্তি যেটা যৌন নিপীড়ন চলতে থাকলে ক্ষুন্ন হয় না, ক্ষুন্ন হয় যৌন নিপীড়নের বিরুদ্ধে ছেলেমেয়েরা আন্দোলন গড়ে তুললে? নিপীড়কদের এই ভাবর্মূর্তি রক্ষার কোনো দায় বাংলাদেশের মানুষের নাই। বরং এই সংগ্রামী মানুষগুলোই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকৃত ভাবমূর্তি গড়ে তুলছেন। যে সংগ্রামী ভাবমূর্তির কথা শতবছর পরও মানুষ স্মরণ করবে, স্মরণ করছে।

খুব সম্ভবত কার্টুনিস্টের নাম ছিল কুদ্দুস (যদি না ভুল হয়ে থাকে), পত্রিকাটি ছিল দৈনিক সংবাদ। আমি অত্যন্ত লজ্জিত সেই অসম্ভব শক্তিশালী দৃশ্যায়নটা যিনি ভেবেছিলেন, তার নাম নিয়ে দ্বিধার জন্য। অথচ এ সময়ের সংবাদমাধ্যমে কার্টুন প্রায় নেই বললেই চলে। ব্যতিক্রম নিউএজে’র মেহেদী হক। অথচ এত কিছু ঘটছে দেশে। ভাবতে অবাক লাগে কোথায় আছি!

মতামত বিভাগে প্রকাশিত লেখা লেখকের নিজস্ব ভাবনা। এর জন্য বিবিএস বাংলা কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়।

Advertisement
Share.

Leave A Reply