আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, কেস ট্র্যাকিং সিস্টেমের মাধ্যমে সহজেই মামলার হালনাগাদ তথ্য জানা সম্ভব হবে। এতে করে দ্রুততম সময়ে সংশ্লিষ্ট সরকারি অফিসসমূহ প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারবে। ফলে উচ্চ আদালতে বিচারাধীন মামলায় সরকারি স্বার্থ অক্ষুন্ন রাখা সম্ভব হবে। আইন ও বিচার বিভাগের সলিসিটর অনুবিভাগের সাথে সরকারের অন্য দপ্তরের সংযোগের মাধ্যমে একটি আস্থার সম্পর্ক স্থাপিত হবে। অপরদিকে প্রধানমন্ত্রীর স্বপ্নের স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার লক্ষে এই পদক্ষেপ অনেকাংশে সহায়ক হবে।
রোববার সকালে ঢাকায় বিচার প্রশাসন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটে আইন ও বিচার বিভাগ কর্তৃক উদ্ভাবিত অনলাইন কেস ট্র্যাকিং সিস্টেম “সলট্র্যাক http://soltrack.gov.bd” উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এসব কথা বলেন। আইন ও বিচার বিভাগের উপসচিব (অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ) একেএম কামাল উদ্দিন এই কেস ট্র্যাকিং সিস্টেম উদ্ভাবন করেছেন।
আনিসুল হক বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ গড়ে তোলার ঘোষণার সাথে সাথে ৪টি ভিত্তি নির্ধারণ করে দিয়েছেন- স্মার্ট সিটিজেন, স্মার্ট ইকোনমি, স্মার্ট গভর্নমেন্ট এবং স্মার্ট সোসাইটি। প্রত্যেকটি কম্পোনেন্ট একটি অপরটির সঙ্গে সম্পর্কিত। সকল সেক্টরে প্রযুক্তি নির্ভর সেবা প্রদানের পদক্ষেপ হিসেবে স্মার্ট জুডিসিয়ারী প্রতিষ্ঠাও সরকারের একটি অগ্রগণ্য কাজ। সে লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রীর আগ্রহের কারণেই সারাদেশে বিচার বিভাগকে প্রযুক্তিবান্ধব করার জন্য ‘ই-জুডিসিয়ারি’ প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে।
তিনি আশা প্রকাশ করেন প্রধানমন্ত্রীর আইসিটি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয় এর প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধান ও পরামর্শের প্রেক্ষিতে প্রকল্পটি খুব শীঘ্রই আলোর মুখ দেখবে।
আইনমন্ত্রী বলেন, দেশের ভূমি নিবন্ধনে জনবান্ধব ‘ই-রেজিস্ট্রেশন’ কার্যক্রম গ্রহণ এবং সাব-রেজিস্ট্রার অফিসের সাথে সহকারী কমিশনার (ভূমি) অফিসের আন্তঃসংযোগ ছিল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দীর্ঘদিনের লালিত স্বপ্ন। এই স্বপ্ন বাস্তবায়নে সাব-রেজিস্ট্রার অফিস ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) অফিসকে স্ব স্ব প্রশাসনিক এখতিয়ারের মধ্যে রেখে ইতোমধ্যে আন্তঃসংযোগ স্থাপন করা হয়েছে। ২০২১ সালের ১০ জুন হতে ২০২৩ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত উক্ত ১৭টি সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে মোট চৌষট্টি হাজার পাঁচশত বিরাশিটি দলিল ই-রেজিস্ট্রেশন সিস্টেমে নিবন্ধিত হয়েছে। দেশের অবশিষ্ট সাব-রেজিস্ট্রি অফিসসমূহকে একইভাবে ই-রেজিস্ট্রেশনের কার্যক্রম গ্রহণ করা হবে।
তাছাড়া, সারা দেশের বিবাহ নিবন্ধন কার্যক্রমকে ডিজিটাইজড করার জন্য আইন ও বিচার বিভাগ একটি প্রকল্প গ্রহণ করেছে যার মাধ্যমে প্রত্যেক নিকাহ্ রেজিস্ট্রার বিবাহ নিবন্ধনের যাবতীয় তথ্য অনলাইনে ইনপুট দিবেন এবং পক্ষগণ কাবিননামাসহ অন্যান্য ডকুমেন্ট অনলাইন থেকে সংগ্রহ করতে পারবে। এই অনলাইন পোর্টালে প্রকৃত নিকাহ্ রেজিস্ট্রারদের তথ্য সংরক্ষিত থাকবে। ফলে বিবাহ নিবন্ধন কার্যক্রমে স্বচ্ছতা নিশ্চিত হবে।
আইন ও বিচার বিভাগের সচিব মো. গোলাম সাওয়ারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো: মাহবুব হোসেন বিশেষ অতিথির বক্তৃতায় বলেন, সরকারি মামলাগুলো ঠিকমত উপস্থাপন করা হলে বেশির ভাগ মামলায় সরকার জিতে যাবে। কিন্তু বাস্তবতা হলো ঠিক উল্টা। বেশিরভাগ মামলায় সরকার পক্ষ হেরে যায়। হেরে যাওয়ার পর সরকার পক্ষ থেকে আপিল করা হয় এবং তখন কিছু দৌঁড়ঝাপ শুরু হয় এবং একে অপরকে দোষারোপ করা শুরু হয়। তিনি আশা প্রকাশ করেন, আইন ও বিচার বিভাগ কর্তৃক উদ্ভাবিত “সলট্র্যাক http://soltrack.gov.bd” সফটওয়্যারটি একে অপরকে দোষারোপ করার কালচার থেকে বেরিয়ে আসার একটি সুযোগ তৈরি করবে।
