fbpx

গুগল ম্যাপের স্যাটেলাইটে ফিলিস্তিনের ছবি ঝাপসা দেখায় কেনো?

Pinterest LinkedIn Tumblr +
Advertisement

সম্প্রতি ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকাকে গুগল ম্যাপে ঝাপসা করে রাখা হয়েছে। বিশ্বের সবচেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ এই অঞ্চলের ওপর ইসরায়েলিদের টানা হামলা নিয়ে গবেষণা করতে গিয়ে গবেষকদের কাছে বিষয়টি উঠে এসেছে।

সংবাদমাধ্যম বিবিসির এক প্রতিবেদন এমনটাই জানিয়েছে।

বিবিসি বলছে, গুগল ম্যাপে ইসরায়েল এবং ফিলিস্তিনির অধিকাংশ অঞ্চল ঝাপসা দেখা যাচ্ছে। সেখান থেকে বেশিরভাগ ছবির রেজুলেশন কম দেয়া রয়েছে। কিন্তু স্যাটেলাইট কোম্পানিগুলোর কাছ থেকে এর চেয়ে হাই-রেজুলেশনের ভালো ছবি পাওয়া যায়।

গুগল ম্যাপের স্যাটেলাইটের ছবিতে গাজার রাস্তা, গাড়ি, মানুষ অনেক চেষ্টার পরও শনাক্ত করা যাচ্ছে না। অথচ উত্তর কোরিয়ার মতো একটি রক্ষণশীল, গোপনীয়তা রক্ষা করা শহরে নির্বিঘ্নে রাস্তায় গাড়ি, অলগলি এমনকি প্রতিটি মানুষ স্পষ্টভাবে শনাক্ত করা যাচ্ছে।

গুগল ম্যাপের স্যাটেলাইটে ফিলিস্তিনের ছবি ঝাপসা দেখায় কেনো?

গুগল ম্যাপে ফিলিস্তিনের গাজা এবং উত্তর কোরিয়ার পিয়ংইয়ংয়ের স্যাটেলাইট ছবি।ছবি: বিবিসি

এই স্যাটেলাইটের ছবি যুদ্ধের প্রতিবেদন তৈরিতে বিশেষ ভূমিকা রাখে। এটি ব্যবহার করেই সাংবাদিকরা গাজা এবং ইসরায়েলের ক্ষেপণাস্ত্র হামলার লক্ষ্যবস্তু শনাক্ত করতে চেয়েছিলেন। কিন্ত গুগল আর্থ তাদের হতাশ করেছে। এখানে গাজার স্যাটেলাইট ছবি ঝাপসা এবং নিম্নমানের দেখায়।

১৯৯৭ সালে প্রণীত কাইল-বিঙ্গামান অ্যামেন্ডমেন্টে (কেবিএ) আইনের কারণে ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনের স্যাটেলাইট ছবি বাণিজ্যিকভাবে সরবরাহের অনুমতির ওপর বিধিনেষধ আরোপ করে রেখেছিল মার্কিন সরকার।

সেই আইনে বলা হয়েছিল, মার্কিন সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে ফিলিস্তিন ও ইসরায়েলের কম রেজুলেশনের স্যাটেলাইটের ছবি বিক্রি করতে পারবে। সেখানে প্রতি পিক্সেলে ভূমির দুই মিটারের কম দেখানো যাবে না। অর্থাৎ গাড়ির আকারের কোনো বস্তু বড়জোর দেখা যেতে পারে কিন্ত এর বেশি নয়।

আর যুক্তরাষ্ট্রের বাইরের প্রতিষ্ঠান, যেমন ফ্রান্সের এয়ারবাস ওই অঞ্চলগুলোর উচ্চ রেজুলেশনের স্যাটেলাইট-ছবি সরবরাহ করা শুরু করলে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের ওপর চাপ বাড়তে থাকে।

অবশেষে ২০২০ সালের জুলাইয়ে কেবিএ আইন বাতিল করা হয়। ফলে এখন মার্কিন প্রতিষ্ঠানগুলোও ইসরায়েল-ফিলিস্তিনের উচ্চ রেজুলেশনের ছবি সরবরাহ করতে পারে। তাতে প্রতি পিক্সেলে ৪০ সেন্টিমিটার দেখানো সম্ভব। যেখানে প্রতিটি মানুষ আলাদা করে শনাক্ত করা যাবে।

সাধারণত ম্যাক্সার এবং প্ল্যানেট ল্যাবস নামের বড় দুই সরবরাহকারী ইসরায়েল এবং গাজার উচ্চ রেজুলেশনের ছবি সরবরাহ শুরু করেছে।

ম্যাক্সার এক বিবৃতিতে বলেছে, মার্কিন আইনের সাম্প্রতিক পরিবর্তনের ফলে ইসরায়েল এবং গাজার উচ্চ রেজুলেশনের (প্রতি পিক্সেলে ৪০ সেন্টিমিটার) ছবি সরবরাহ করা হচ্ছে। আর প্ল্যানেট ল্যাবস বিবিসিকে জানিয়েছে, তারা এখন ৫০ সেন্টিমিটার রেজুলেশনের ছবি সরবরাহ করে থাকে।

তবে অনুসন্ধানী প্রতিবেদকেরা সাধারণত বিনামূল্যে পাওয়া যায় এমন মানচিত্র সেবার ওপর নির্ভর করে থাকেন। কিন্ত বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই তারা এই ছবি পান না।

বেলিংক্যাট নামের একটি ব্রিটিশ অনুসন্ধানী সংবাদমাধ্যমের সাংবাদিক অ্যারিক টলার টুইটারে লিখেছেন, গুগল আর্থের সর্বশেষ ছবি ২০১৬ সালের, সেগুলো একদম বাজে মানের। সিরিয়ার বেশ কিছু গ্রামীণ অঞ্চল জুম করে দেখছি, অথচ ওই ছবিগুলো যখন তোলা হয়, তারপর অন্তত ২০ বার উচ্চ রেজুলেশনের স্যাটেলাইট ছবি তোলা হয়েছে।

এই ছবি নিয়ে গুগল ও অ্যাপলের সঙ্গে যোগাযোগ করে বিবিসি। প্রতিষ্ঠান দুটির মানচিত্র সেবায় স্যাটেলাইট ছবি দেখানো হয়।

অ্যাপল জানিয়েছে, তারা শিগগিরই উচ্চ রেজল্যুশনের ছবি দেখানোর জন্য কাজ শুরু করেছে। আর গুগল বলেছে, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে তারা স্যাটেলাইট ছবি কিনে থাকে। উচ্চ রেজল্যুশনের ছবি পেলে তারা হালনাগাদ করার কথা ভাববে।

ঠিক এই মুহূর্তে তেমন কোনো পরিকল্পনা তাদের নেই বলেও জানিয়েছে তারা।

তবে ফিলিস্তিনের প্রতি গুগলের এই আচরণ নতুন নয় বলে জানিয়েছে খলিজ অনলাইন। ফিলিস্তিনকে অপছন্দের তালিকায় রাখা তাদের পুরাতন অভ্যাস বলেও জানিয়েছে তারা।

এর আগে ২০১৬ সালেও ‘গুগল ম্যাপ’ থেকে ফিলিস্তিনের নাম মুছে ফেলে সেখানে ফিলিস্তিনকে ইসরাইলের অংশ হিসেবে দেখানো হয়। তখন সমালোচনার তোপে পড়ে গুগল। গুগল তাদের মানচিত্র সংশোধনের আশ্বাসও দিয়েছিল তখন।

তবে গুগল ম্যাপ আজও সংশোধন করা হয়নি; ফিলিস্তিন ও অবৈধ রাষ্ট্র ইসরাইলের সমগ্র ভূখণ্ডকেই ইসরাইল হিসেবে চিহ্নিত করে রেখেছে গুগল কর্তৃপক্ষ- এমনটি জানিয়েছেন মধ্যপ্রাচ্যের বিশ্লেষকরা।

আরবি গণমাধ্যম আল খালিজের কয়েকজন সাংবাদিক। তারা বলছে, গুগলের আরেকটি জনপ্রিয় পরিষেবা গুগল ট্রান্সলেটে ‘জেরুজালেম’-এর ভাষান্তরের সময় তাদের ইসরায়েল প্রীতির দিকটি ফুটে ওঠে। বিশ্বের উল্লেখযোগ্য কয়েকটি ভাষায় জেরুজালেম নগরী ‘জেরুজালেম’নামে পরিচিত হলেও এর প্রাচীন আরবি নাম ‘আল কুদস’।

এর আগে গুগল ট্রান্সলেটে যে কোনো ভাষা থেকে ‘জেরুজালেম’ শব্দটির আরবি অনুবাদ করলে তা ‘আল কুদস’ নামে অনুবাদ করা হতো। কিন্ত ডোনাল্ড ট্রাম্পের ডিল অব দ্য সেঞ্চুরি ঘোষণার পর থেকে গুগল ট্রান্সলেট এখন আর জেরুজালেমের অনুবাদ আল কুদস করছে না।

এই আরবি শব্দটিকে সরিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলিদের উচ্চারিত ‘জেরুজালেম’ শব্দকেই পবিত্র এই নগরীর নতুন আরবি নাম হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে চাইছে গুগল।এটি পরোক্ষভাবে ইসরাইলের প্রতি পক্ষপাতিত্বের একটি প্রমাণ বলেও জানিয়েছেন তারা।

Advertisement
Share.

Leave A Reply