fbpx

চাকরি খুইয়েও কত টাকা পাবেন টুইটারের সাবেক সিইও? 

Pinterest LinkedIn Tumblr +
Advertisement

‘দি বার্ড ইজ ফ্রি’ অর্থাৎ পাখি এখন মুক্ত- জনপ্রিয় মাইক্রোব্লগিং সাইট ‘টুইটার’ কেনার পর নিজের  অ্যাকাউন্টে এই ঘোষণা দেন বিশ্বের শীর্ষ ধনকুবের ইলন মাস্ক। নানা জল্পনা কল্পনা ও সব বিতর্কের অবসান ঘটিয়ে ৪৪ বিলিয়ন ডলারে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমটি কিনে নিলেন টেসলা প্রধান।

২৭ অক্টোবর বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় এক বিবৃতিতে মাস্ক জানান, তিনি টুইটার অধিগ্রহণ করছেন। ‘মানবতার স্বার্থেই’ তার এই পদক্ষেপ।

টুইটবার্তায় মাস্ক লিখেছেন, ‘কেন আমি টুইটার অধিগ্রহণ করলাম সে ব্যাপারে সকলকে জানাতে চাই। এটি আমি আরও অর্থ উপার্জনের জন্য কিনিনি। মানবতার জন্য কিনেছি।’

তার ভাষ্যমতে, ‘মানবতার ভবিষ্যৎ এমন হওয়া উচিত যেখানে সমস্ত পক্ষের স্বাধীন মতামত প্রকাশের একটা ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম থাকবে। সুস্থ পরিবেশে বিতর্ক হবে।’

মাস্ক আরও বলেছেন, ‘বর্তমানে বিপজ্জনক পরিস্থিতি রয়েছে, যেখানে সমাজমাধ্যম কট্টর দক্ষিণপন্থী ও কট্টর বামপন্থীদের কয়েকটি গোষ্ঠীতে ভাগ হতে চলেছে। যা সমাজে ঘৃণা ও বিভাজন বাড়াবে।’

এর পাশাপাশি টুইটারে বিজ্ঞাপন নীতি কী হওয়া উচিত, সে নিয়েও বার্তা দিয়েছেন মাস্ক। তার কথায়, বিজ্ঞাপন সঠিক ভাবে ব্যবহার করা হলে, তা মানুষকে অনেক তথ্য পেতে সাহায্য করবে। অপ্রাসঙ্গিক বিজ্ঞাপন ‘স্প্যাম’বলে বর্ণনা করেছেন তিনি।

এদিকে মালিকানা গ্রহণের পরই তিনি টুইটারের বর্তমান সিইও পরাগ আগারওয়ালসহ টুইটারের প্রধান  আর্থিক কর্মকর্তা নেড সিগাল, আইন ও নীতিমালাবিষয়ক প্রধান বিজয়া গাড্ডেকে চাকরি থেকে ছাঁটাই করেন।

চলতি এপ্রিলে মাস্ক যখন প্রকাশ্যে টুইটার কেনার ইচ্ছা প্রকাশ করেন, তখনই গুঞ্জন উঠেছিল যে মালিকানা বদল হলে পরাগ বরখাস্ত হবেন। কেননা পরাগের সাথে তার একধরনের ‘কোল্ড ওয়ার’ চলছিল।

পরাগ চাকরি হারালে টুইটার থেকে কতটা অর্থ পাবেন, তার একটা হিসাব তখন দিয়েছিল গবেষণা প্রতিষ্ঠান ইকুইলার।

গবেষণা প্রতিষ্ঠানটি বলেছিল, টুইটারের মালিকানা পরিবর্তনের ১২ মাসের মধ্যে যদি পরাগকে চাকরিচ্যুত করা হয়, তাহলে তিনি কোম্পানিটি থেকে আনুমানিক ৪২ মিলিয়ন ডলার বা প্রায় ৪২৮ কোটি টাকার বেশি পাবেন।

সেই সুরেই সুর মিলিয়ে শুক্রবার এনডিটিভি প্রতিবেদনে জানায়, পরাগ আগারওয়াল প্রতিষ্ঠানটি থেকে ৪২ মিলিয়ন ডলার পেতে পারেন।

এদিকে ব্লুমবার্গ বলছে, চাকরি হারানোর পর পরাগ আগারওয়াল পাবেন ৫০ মিলিয়ন ডলার, নেড সেগাল পাবেন ৩৭ মিলিয়ন ডলার আর বিজয়া গাড্ডে পাবেন ১৭ মিলিয়ন ডলার।

অন্য প্রতিষ্ঠানের মতো টুইটারের নীতিমালায়ও চাকরিচ্যুতির পর কর্মীর দেনা-পাওনা মেটানোর নিয়ম রয়েছে। সে হিসেবে সবই পরিশোধ করা হবে তিন কর্মকর্তাকে। একই সঙ্গে এক বছরের স্বাস্থ্যবীমা বাবদ প্রত্যেককে দিতে হবে ৩১ হাজার ডলারের মতো।

২০২১ সালের নভেম্বরে টুইটারের প্রথম ভারতীয় বংশোদ্ভূত সিইও হিসেবে নিয়োগ পেয়েছিলেন পরাগ। তিনি কোম্পানিটিতে প্রথম যোগ দিয়েছিলেন ২০১১ সালে। তিনি ২০১৭ সালে কোম্পানির প্রধান প্রযুক্তি কর্মকর্তা হয়েছিলেন।

তবে টুইটার কিনতে কম নাটকীয়তার আশ্রয় নেননি মাস্ক। এপ্রিলে টুইটার কেনার ঘোষণার পর একপর্যায়ে মাস্ক বেঁকে বসেছিলেন। তিনি টুইটার কেনার চুক্তি থেকে সরে আসার চেষ্টাও করেছিলেন।

অভিযোগ করেছিলেন, টুইটারে থাকা ভুয়া অ্যাকাউন্টের বিষয়ে তাকে পরাগ বিভ্রান্ত করেছেন। বিষয়টি শেষ পর্যন্ত আদালতে গড়ায়। পরে আদালতের বেঁধে দেওয়া সময়ে তিনি টুইটার কেনার আনুষ্ঠানিকতা সারেন।

বিশ্বের সেরা ধনকুবের মাস্ক যে আগাগোড়া একজন ব্যবসায়ী, সেটি বলার অপেক্ষা রাখে না। তাই ৪৪ বিলিয়ন ডলার খরচ করে সেখান থেকে তার ফায়দা তুলবেন না, সেটা বিশ্বাস করার কোনো কারণ নেই। টুইটারকে আরও লাভজনক এবং বিনিয়োগকারীদের জন্য আরও আকর্ষণীয় করে তোলার পরিকল্পনাও সাজিয়েছেন তিনি।

জানিয়েছেন, তার উদ্দেশ্য টুইটারকে একটি সুপার অ্যাপ হিসেবে গড়ে তোলা। যাতে মানি ট্রান্সফার থেকে শুরু করে কেনাকাটা এবং রাইড শেয়ারিং পর্যন্ত সব কিছুরই সমাধান থাকবে। এ পরিস্থিতিতে শেষ পর্যন্ত মেসেজিং অ্যাপ হিসেবে টুইটারের স্বাতন্ত্র্য বজায় থাকবে কি না সে ব্যাপারেও প্রশ্ন ওঠা শুরু হয়েছে। তাই মাস্কের ভাষ্যমতে, টুইটারের বন্দি পাখিটি কি আদৌ আকাশে ডানা মেলে উড়তে পারবে নাকি খাঁচায় ফিরে যাবে, সেটি দেখার অপেক্ষায় গোটা বিশ্ব!

Advertisement
Share.

Leave A Reply