fbpx

ছফার সঙ্গে দফারফা – ০১

Pinterest LinkedIn Tumblr +
Advertisement

আহমদ ছফার সঙ্গে তার জীবনের শেষ এক যুগ প্রায় প্রতিদিনই আড্ডা দেওয়ার সুযোগ পেয়েছি। দুপুরে, না-হলে বিকালে, নইলে সন্ধ্যায়। হয় আজিজ মার্কেটের দোতলায় তার টোলে, নয় বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্রের গলিতে, তার বাসায়। আমাদের তখন লেখালেখির উঠতি বয়েস। একদিন ছফা ভাই বললেন, ‘এই তুমি আহমাদ মোস্তফা কামালকে চেনো?’
বললাম, ‘চিনি। কেন, কি ব্যাপার? ও আমার বন্ধু।
ছফা বললেন, ‘ওর একটা ছোটগল্প পড়লাম পত্রিকায়। পড়ে মনে হলো, বাংলা ভাষার ছোটগল্প নতুন ভঙ্গিতে বাঁক নিচ্ছে। আহমাদ মোস্তফা কামালের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিও তো! আমাদের আর দাদাদের গল্পে বাজার সয়লাব দেখতে হবে না এই মানের গল্প যদি বাংলাদেশের ৫ জনও লেখে।’

একদিন ছফা বললেন, ‘তোমার সঙ্গে নাকি ধ্রুব এষের ওঠাবসা আছে?
বললাম, ‘আছে।’
ওর সঙ্গে আমাকে একটু আলাপ করিয়ে দিও, ও তো বাংলা বইয়ের প্রচ্ছদে নিজের একটা ভাষা প্রতিষ্ঠা করে ফেলেছে। খুব গুণী ছেলে। ওকে বোলো, ওর পা ধরে আমি সালাম করব আর মরার আগে দুইমাস ওর বাসায় থেকে তারপর মরে যাব।’

সত্যি, আহমদ ছফা বাংলাদেশে কেউ ভালো কিছু করছেন দেখলেই আনন্দিত হতেন, তাকে নিয়ে উদাত্ত চিত্তে গর্ব করতেন।

একদিন, একটি কারণে আমি রাগ করি ছফা ভাইয়ের ওপর। এরপর তিনদিন যাইনি ছফার টোলে। মোবাইল ফোন তো তখন আসেনি। তাই তিনদিন পর আমার কাজিন রিপনের কাছে আমি খবর পাই, ছফা খুজছেন আমাকে। ছফা আমাকে পাবেন কীভাবে? আমি আজিজেই যাইনি তিনদিন। তারপর গেলাম। গেলে, ছফা তার ঘরে কিছুক্ষণ চুপচাপ থেকে ফাইনালি দেখি, তার মুখে অভিমান, চোখে অশ্রু। বললাম, ছফা ভাই, মানে ও সব বাদ। কোনো রাগ নেই আমার মনে। সেই জন্যেই তো এলাম। আপনাকে তো আমি প্রেম করি।’
ছফা কান্না-আটকানো গলায় বলছেন, ‘আসোনি কেন? সেদিন বকেছি বলে? তোমাকে আমি একটু বকতেও পারব না?’

এরপর ছফা যা বললেন, শুনে আমি হা হা করে হাসতে থাকি তার অভিমানের মধ্যেই। তিনি বলছেন, ‘শোনো, যদি তুমি কোনোদিন বিখ্যাত কেউ হও, আত্মজীবনী তো লিখবাই?’
বললাম, ‘লিখলে আপনার কি?’
ছফা বললেন, সেই আত্মজীবনীতে আমার জন্যে এক প্যারা তুমি কিছু লিখবা না?’
আমি হাসতে থাকি। ছফা বলেন, ‘হাসছো কেন? আমি কি হাসির কথা কিছু বলেছি?’

ছফার সঙ্গে দফারফা – ০১

টোকন ঠাকুর, কবি ও নির্মাতা

Advertisement
Share.

Leave A Reply