fbpx

ডালিয়া থেকে শিমু, ১১ মার্চ সিনেমা হলে

Pinterest LinkedIn Tumblr +
Advertisement

বরিশালের মেয়ে ডালিয়া আক্তার ডলি। ১১ বছর বয়সে বাবা বিয়ে ঠিক করলে স্কুল থেকে পাওয়া বৃত্তির টাকা আর কিছু জামাকাপড় নিয়ে ডালিয়া পাড়ি জমায় ঢাকায়। চাচাতো বোনের সহযোগিতায় কাজের ব্যবস্থা হয় একটি গার্মেন্টেসে। প্রথমে নম্বর মেলানোর কাজ করতেন। পরে ডালিয়া কাজ নেন অপারেটরের। এভাবেই বিভিন্ন সময় কাজ বদলে এগিয়ে যেতে থাকেন। একসময় ডালিয়াসহ কয়েকজন মিলে সিদ্ধান্ত নেন ইউনিয়ন করবেন। কিন্তু সে পথ সহজ ছিলো না। নানা বাধা ও হুমকি আসে বন্ধুর সে পথে। তবুও এগিয়ে যান ডালিয়া। একসময় ইউনিয়নের প্রেসিডেন্টও হয়ে যায়।

বছর কয়েক আগে একটি গবেষণায় অংশ নিয়ে প্রচুর ফ্যাক্টরি কর্মীদের সাথে দেখা করেন চলচ্চিত্রকার রুবাইয়াত হোসেন। সেখানেই তার পরিচয় হয় ডালিয়ার সঙ্গে। সে ছিল একটি সংঘের নেত্রী। রুবাইয়াতের মনে হয়েছিল সে যথেষ্ঠ সাহসী, কর্মঠ ও স্পষ্টভাষী। সে তার নিজের বৈবাহিক জীবনে অত্যাচারের শিকার হয়েও একটু সম্মানের জন্য আকাংখা ধরে রেখেছিল। তো, এখান থেকেই চলচ্চিত্র ‘শিমু’ গল্পের শুরু।

ডালিয়ার জীবনেরই নানান সত্যি ঘটনায় অনুপ্রেরণায় আজকের এ চলচ্চিত্র। রুবাইয়াত হোসেন মনে করেন ‘প্রতিকূলতাকে জয় করে সামনে এগিয়ে চলা প্রতিটি সংগ্রামী মানুষের গল্প শিমু। সমতার প্রশ্নে শিমু একজন সম্মুখযোদ্ধা।
শুক্রবার রাজধানীর একটি হোটেলে এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেন চলচ্চিত্র শিমু সংশ্লিষ্টরা। সেখানেই এ কথাগুলো বলেন শ্রমিক নেত্রী ডালিয়া আক্তার ডলি এবং চলচ্চিত্র পরিচালক রুবাইয়াত হোসেন ।এছাড়া অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সৈয়দ মাহবুবুর রহমান।

অনুষ্ঠানের শুরুতে দেখানো হয় চলচ্চিত্র শিমু প্রচারের জন্য নির্মিত কয়েকটি কয়েকটি ভিডিওচিত্র। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন চলচ্চিত্রের পর্দায় ডালিয়ার চরিত্রে অভিনয় করা রিকিতা নন্দিনী শিমু। তিনি বলেন, এই ছবির আগে আমি রুবাইয়াত হোসেনের আন্ডার কনস্ট্রাকশন ছবিতে অভিনয় করি। তখন থেকেই শিমু সিনেমার কাজের ব্যাপারে কথা হচ্ছিল আপার সাথে।ছবির কাজ যখন শুরু হয় তার একমাস আগ থেকে রিহার্সেল করি। তখন ডালিয়া আপা আমাকে কথা বলা, পোশাক, রূপসজ্জাসহ নানা রকম কাজে সাহায্য করেছেন।

শ্রমিকনেত্রী ডালিয়া আক্তারের জীবনের সত্য ঘটনা থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে নির্মিত চলচ্চিত্র শিমু মুক্তি পাচ্ছে ১১ মার্চ। প্রথমদিন থেকেই ছবিটি প্রদর্শিত হবে স্টার সিনেপ্লেক্স, যমুনা ব্লকবাস্টার, নারায়ণগঞ্জের সিনেস্কোপ, চট্টগ্রামের সিলভার স্ক্রিনসহ সাভার, গাজীপুর এবং রাজশাহীর সিনেমা হলে।
অনুষ্ঠানে রুবাইয়াত হোসেন আরো জানার বেশ কয়েকটি আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে অংশ নিয়ে সাতটি আন্তর্জাতিক পুরস্কার পেয়েছে চলচ্চিত্র শিমু। এছাড়াও আরেকটি ভালো লাগার মতো বিষয় হলো ছবিটির ওয়ার্ল্ড প্রিমিয়ার হয় টরন্টো চলচ্চিত্র উৎসবে। এরপর ছবিটি প্রদর্শিত হয় বিএফআই লন্ডন চলচ্চিত্র উৎসবে। এছাড়া বিভিন্ন আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে সমাদৃত ও পুরস্কৃত হয়েছে ছবিটি। এছাড়া ২০১৯ এর ডিসেম্বরে ফ্রান্স, ডেনমার্ক, কানাডা ও পর্তুগালের বিভিন্ন সিনেমা হলে বাণিজ্যিকভাবে মুক্তি পায় ছবিটি। এরপর ২০২০ আমেরিকার বিভিন্ন হলে প্রদর্শনের পর ছবিটির বাণিজ্যিকভাবে দেখানো হয় ম্যাক্সিকো, চীন, সিঙ্গাপুর, অস্ট্রেলিয়া, তুরস্ক ও জার্মানীর সিনেমা হলে। আর বাংলাদেশে মুক্তির পরপরই আগামী এপ্রিল ছবিটি মুক্তি পেতে যাচ্ছে জাপানের বিভিন্ন সিনেমা হলে।

রুবাইয়াত হোসেন আরো জানান, বাংলাদেশে নারীর ক্ষমতায়নে ও আত্মনির্ভরশীলতা অর্জনে পোশাকশিল্পের যে ভূমিকা আছে তার আলোকে দৃঢ়চেতা নারী পোশাক শ্রমিকদের সংগ্রাম ও সাফল্যের গল্প বলা হয়েছে ছবিতে। ৮ মার্চ আন্তর্জাতিক নারী দিবসকে সামনে রেখে দেশের সিনেমা হলে মুক্তি পাচ্ছে চলচ্চিত্রটি। শুধু তাই নয় ছবিটির মূল কুশলীদের অধিকাংশই ছিলেন নারী। চিত্রগ্রহণে সাবিন ল্যাঞ্চেলিন, শব্দগ্রহণে এলিশা আলবার্ট, এবং শিল্প নির্দেশনায় জোনাকি ভট্টাচার্য্যের নাম উল্লেখযোগ্য।

বাংলাদেশের খনা টকিজ ও ফ্রান্সের লা ফিল্মস দ্য এপ্রেস-মিডির ব্যানারে নির্মিত শিমু ছবিটির প্রযোজক ফ্রঁসোয়া দক্তেমা ও আশিক মোস্তফা এবং সহ-প্রযোজক পিটার হিলডাল, পেদ্রো বোর্হেস, আদনান ইমতিয়াজ আহমেদ ও রুবাইয়াত হোসেন। আর ছবিটির পরিবেশনা ও আন্তর্জাতিক বিক্রয় প্রতিনিধি ফ্রান্সের পিরামিড ফিল্মস।

চলচ্চিত্রটিতে বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেছেন রিকিতা নন্দিনী শিমু, নভেরা রহমান, দীপান্বিতা মার্টিন, পারভীন পারু, মায়াবি মায়া, মোস্তফা মনোয়ার, শতাব্দী ওয়াদুদ, জয়রাজ, মোমেনা চৌধুরী, ওয়াহিদা মল্লিক জলি, সামিনা লুৎফা প্রমুখ। দুটি অতিথি চরিত্রে অভিনয় করেছেন মিতা চৌধুরী ও ভারতের শাহানা গোস্বামী।

Advertisement
Share.

Leave A Reply