করোনা মহামারির মধ্যে ঢাকায় বেড়ে গেছে এডিস মশার সংক্রমণ। আর এই মশার উপস্থিতির কারণে সংক্রমণের বেশি ঝুঁকির মধ্যে পড়ে গেছে রাজধানী ঢাকার চারটি এলাকা। এ চারটি এলাকা হলো, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) লালমাটিয়া ও ইকবাল রোড এবং ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) সায়েদাবাদ ও উত্তর যাত্রাবাড়ী।
বৃহস্পতিবার (৬ মে) স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের (ডিজিএইচএস) প্রকাশিত এক জরিপের ফলাফলে এ তথ্য উঠে এসেছে। গত ২৯ মার্চ থেকে ৭ এপ্রিল পর্যন্ত ঢাকা দুই সিটি করপোরেশনের ৬৯টি ওয়ার্ডের ৭০টি স্থানে জরিপটি চালানো হয়। যা পরিচালিত হয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার জাতীয় ম্যালেরিয়া ও এডিস বাহিত রোগ নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির আওতায়।
জরিপে নির্মাণাধীন ভবনের মেঝেতে জমে থাকা পানিতে সবচেয়ে বেশি এডিস মশার লার্ভার উপস্থিতি পাওয়া গেছে। এছাড়া, প্লাস্টিকের ড্রাম, বালতি, পানির ট্যাংক, পানির মিটারের গর্ত, ফুলের টব ও ট্রে, প্লাস্টিকের বোতল এবং লিফটের গর্তে এডিস মশার লার্ভার বেশি মাত্রায় উপস্থিতি পাওয়া গেছে।
কীট বিশেষজ্ঞ ও বাংলাদেশ প্রাণিবিজ্ঞান সমিতির সাবেক সভাপতি মঞ্জুর চৌধুরী এ বিষয়ে জানান, এপ্রিল ও মে মাসে ঢাকায় পাঁচ থেকে ছয় বার বৃষ্টি হওয়ায় এডিস মশার প্রজননের অনুকূল পরিবেশ তৈরি হয়েছে। করোনা সংক্রমণ রোধে চলমান বিধি-নিষেধ এই ডেঙ্গুর বিস্তার রোধে ইতিবাচক ভূমিকা রাখতে পারে উল্লেখ করে তিনি বলেন, মূলত স্কুল-কলেজ থেকে ডেঙ্গু বেশি ছড়ায় এবং তরুণ প্রজন্ম এ রোগে বেশি আক্রান্ত হয়। কিন্তু আশার খবর হলো, করোনার প্রকোপে গত বছর থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় এবং লকডাউনের নিষেধাজ্ঞার মধ্যে চলাচলে বিধি-নিষেধ দেওয়ায় ডেঙ্গু সংক্রমণ ছড়ানোর ক্ষেত্রে বাধা তৈরি হচ্ছে। তারপরও ডেঙ্গুর ঝুঁকি রয়েছে এবং এর বিস্তার রোধে কর্তৃপক্ষকে যথাযথ পদক্ষেপ নিতে হবে বলেও জানান মঞ্জুর চৌধুরী।
ডেঙ্গুর প্রকোপ নিয়ে ডিএনসিসি মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম জানান, বিভিন্ন স্থানে এরইমধ্যে অভিযান চালানো হচ্ছে। পাশাপাশি, গত বছরের অভিযানে যেসব বাড়িতে ডেঙ্গু শনাক্ত করা হয়েছিল, তাদের মালিকদের সবার মোবাইলে এডিস মশার সংক্রমণ রোধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য এসএমএস পাঠানো হয়েছে।
মেয়র আরও জানান, ডিএনসিসির ৫৪টি ওয়ার্ডের জন্য ৫৪ জন পরিদর্শক নিয়োগ দিয়ে তাদেরকে প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে এবং এখন তারা মাঠ পর্যায়ে কাজ করছেন। বর্তমানে ডিএনসিসিতে দু’জন কীট বিশেষজ্ঞ রয়েছেন। আরও ১০ জন কীট বিশেষজ্ঞের জন্য সরকারের কাছে আবেদন করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।
এদিকে ডিএসসিসি’র স্বাস্থ্য কর্মকর্তা মীর মুস্তাফিজুর রহমান জানান, তাদের পক্ষ থেকে তিনটি ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে এখন এডিস মশা নিধন অভিযান চালানো হচ্ছে। লকডাউনের মধ্যেও জোন ও ওয়ার্ড পর্যায়ে কাজ অব্যাহত রয়েছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি। এডিস মশা নিয়ন্ত্রণে ডিএসসিসি মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সাথে গত সপ্তাহে বৈঠক করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার নির্দেশনা দিয়েছেন বলে জানান মুস্তাফিজুর রহমান।