fbpx

দিনবদলের ঢাকায় নয়াপঞ্জিকা

Pinterest LinkedIn Tumblr +
Advertisement

শহর ঢাকায় সুর্যের দিন হাসে। রাতও আসে অস্তাচলে। আকাশছোঁয়া ইটপাথর কিংবা বেতাল করা তারের জঞ্জাল; তাদের সাধ্যাতীত দিবারাত্রির কাব্য ঘুচিয়ে দেয়া। তাই প্রিয় রাজধানীর পঞ্জিকায় কেবল নয়, প্রকৃতির বুকেও বদল থাকে। তা দেখতে থাকা চাই চোখের মতো চোখ, মনের মতো মন। চোখই যে মনের কথা বলে! অবশ্য মন নয়, হাওয়ার নতুন নিশানা বেশি টের পায় দেহ। ত্বকের ভাঁজে ভাঁজে ছাপ রেখে চলে ঋতু। মাথার ওপর পাখা নাকি লেপকম্বলের কালে আছি, তা বুঝতে আমাদের দিনতারিখের হিসাব মেলাতে হয় না। শহরের ঘুপচিগলিতে থেকেও বাঙালি তাই গ্রীষ্ম-বর্ষা-শরৎ-হেমন্ত-শীত-বসন্ত বের করে ফেলতে পারে।

দিনবদলের ঢাকায় নয়াপঞ্জিকা

ঢাকার পথ। চিত্রকর্ম : শফিউদ্দিন আহমেদ

কান পাতলেই কোকিলের সুর। চোখ মেললেই রঙিন পলাশ। এসব এখনো বর্তমান দেয়ালের নগর ঢাকায়। চারুকলার উৎসব ছাড়াও এভাবে বসন্ত বসত করে এখানে। আর গ্রীষ্মে তো আজো কৃষ্ণচূড়ার বুকে আগুন লেগে থাকে। তখন যেতে পারি আমরা চন্দ্রিমা উদ্যানের পায়ে চলা পথ ধরে। বর্ষাও আসে রাজধানীর বুকে পিচঢালা পথের জলমগ্নতায়। হাতে বর্ষাতি নিয়ে সংসারী নাগরিক আসেন ঘরের বাইরে। নয়তো রিকশাচালক নীল পলিথিন তো মেলাবেনই।

দিনবদলের ঢাকায় নয়াপঞ্জিকা

টুংটাং রিকশার শহর। ছবিসূত্র: পিটার’স ব্লগ

রাজকীয় শাপলা বিলে শরৎ আসার ফুসরত আজ আর নেই হয়তো রাজধানী ঢাকায়। কিন্তু প্রকৃতিপ্রেমীরা ঘরের টবে কিংবা ছাদের চৌবাচ্চায় লালন করছে জাতীয় ফুল। আর শরৎ, সেতো থাকেই আকাশে-বাতাসে। দূরদিগন্তের নীলিমা ক্যামেরার কবিদের ঠিকই হাতছানি দিয়ে ডাকে। এদিকে নগরের হবু আবাসনের বালুকায় কেমন কেমন করে যেন চরের মতোই দখলদারি নিয়ে নেয় কাশবন। সেখানে গিয়ে দুদণ্ড সময় কাটায় যুগলরা। দম নেয় পৃথিবীর পুরাতন প্রেমিক-প্রেমিকারা। খেলা করে নবীন কিশোর। এসব ছবি শরৎ নিয়ে আসে অন্তর্জালভিত্তিক সমাজমাধ্যমে।

নগরে হয়তোবা নবান্ন নেই। তবুও আছে হেমন্ত। দুঃসহ গরমের সমাপনী আঁচ করা যায় সহজেই। বইতে শুরু করে কিছুটা হিমহিম হাওয়া। সন্ধ্যে না হলেও শিশিরের শব্দের মতোন সকাল আসে। উদ্যানের সবুজ ঘাসের দেশে তার সাক্ষাৎ মেলে বেশি। তখনো রমনায় আসে না পাতাঝরার দিন। শুকনো পাতায় হাঁটার মচমচে অনুভূতি পেতে চাইলে সেখানে যেতে হবে শীতেরবেলায়। এই সময়েই লেপে-কম্বলে-শীতবস্ত্রে পৌষমাস আনতে তৎপর বণিকের দল। তাই শহর ঢাকার অভিজাত বিপণি এবং পথের পসরাই জানিয়ে দেয় মাঘের আগমনিও।

দিনবদলের ঢাকায় নয়াপঞ্জিকা

উদ্যানে ঝরা পাতা । ছবি : জামাল হাফিজ

সবটা মিলে বঙ্গাব্দের বেলায় গ্রাম্যতা, নাগরিকতা একাকার। সেখানে ঘঁটি বা বাঙাল- কারোরই লাগে না কোনো পঞ্জিকা। সবই আঁকা আছে বাংলার প্রাণ-প্রকৃতি, আকাশে-বাতাসে। কিন্তু যাপিত জীবনের হিসাব তো উপনিবেশের নেতিবাচক থেকে বিশ্বগ্রামের ইতিবাচক পথ নিয়েছে। তাই ঈশায়ি নতুন সাল আসা বড় ঘটনা বটে। সেই তারিখ লিখে রাখে মুঠোফোন। তবু বর্ষপঞ্জির প্রয়োজন ফুরায় না। শহরের ঘরে ঘরে দেয়ালে দেয়ালে পেরেক থেকে খুলে নেয়া হয় বিদায়ী বছরের পঞ্জি, যত্নের হাতে সেখানে ঝুলিয়ে দেয়া হয় নতুন বছরের প্রতিটি বার-মাস-তারিখ। তাই দিনবদলে ঢাকার দেয়ালে নয়াপঞ্জিকা চাই আমরা। চাই নতুন সূর্যের দিনও। একত্রিশ রাতের উৎসবমুখরতা থাকুক বছরজোড়া। ঈশায়ি সৌরবর্ষ সবার সেই প্রত্যাশা পূরণ করবে- এই আশা নিয়ে থাকি।

তায়েব মিল্লাত হোসেন: লেখক ও সাংবাদিক

Advertisement
Share.

Leave A Reply