বাংলাদেশ সরকারের অন্যতম মেগা প্রজেক্ট পদ্মা সেতু। স্বপ্নের এই সেতুর মধ্য দিয়ে নদীর দুই পারের মধ্য সংযোগ স্থাপিত হয়েছে। ২০২০ সালের ১০ ডিসেম্বর ৪১তম স্প্যানটি বসানোর মধ্য দিয়ে সকলের কাছে দৃশ্যমান হয় ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের পুরো সেতু। তবে বহুমুখী এই সেতু দৃশ্যমান হওয়ার পর একটার পর একটা দুর্ঘটনা লেগেই আছে।
মাত্র দুই মাসের ব্যবধানে পদ্মা সেতুর পিলারে পাঁচবার ফেরির ধাক্কা লাগার ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে সর্বশেষ ঘটনাটি ঘটেছে শুক্রবার। এর ঠিক চার দিন আগেই সেতুর পিলারের সঙ্গে ধাক্কা লাগার একই ঘটনা ঘটে।
গতকাল সেতুর ১০ নম্বর পিলারে শিমুলিয়া ঘাটগামী কাকলী ফেরি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে আঘাত করে। তীব্র স্রোতের কারণে সেতুর পিলারের সঙ্গে ধাক্কা লাগার কথা বলা হলেও ফেরিটি ওই পথে চলাচলের অযোগ্য বলে দু’দিন আগে ফেরিচালক লিখিতভাবে জানিয়েছিলেন।
শুক্রবার বাংলাবাজার ঘাট থেকে শিমুলিয়া ঘাটগামী কাকলী ও সোমবার সন্ধ্যায় একই গন্তব্যের ফেরি বীরশ্রেষ্ঠ জাহাঙ্গীর পদ্মা সেতুর ১০ নম্বর পিলারে ধাক্কা দেয়ায় কোনো ক্ষতি হয়নি বলে কর্তৃপক্ষ নিশ্চিত করেছে।
এর আগে গত ২৩ জুলাই রাতে রো রো ফেরি শাহজালাল সেতুটির ১৭ নম্বর পিলারে ধাক্কা খাওয়ার পর পিলারের পাইল ক্যাপের উপরিভাগ ও সাইট কিছুটা ক্ষতিগ্রস্ত হতে দেখা গেছে।
এসব ঘটনায় পদ্মা সেতুর কোনো ক্ষতি না হলেও এ ধরনের সংঘর্ষ এড়াতে এরই মধ্যে বাংলাবাজার ঘাট স্থানান্তরের উদ্যোগ নেয়া হবে বলে জানিয়েছেন নৌ-পরিবহন প্রতিমন্ত্রী।
পদ্মা সেতুতে পিলারের সংখ্যা ৪২ টি। যার মধ্যে ৪০ টি পিলার নদীতে এবং দুটি পিলার নদীর তীরে নির্মাণ করা হয়েছে। যে ৪০ টি পিলার নদীতে নির্মাণ করা হয়েছে, এর মধ্যে প্রতি পিলারে ছয়টি করে পাইলিং করা হয়েছে। এদের প্রতিটির দৈর্ঘ্য গড়ে প্রায় ১২৭ মিটার পর্যন্ত। ফলে একটি পিলার থেকে আরেকটির দূরত্ব ১৫০ মিটার।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পিলারের মধ্যে দীর্ঘ দূরত্ব থাকায় স্বাভাবিকভাবে সেতুতে ধাক্কা লাগার কথা নয়। কিন্তু বার বার এই ঘটনার পুনরাবৃত্তি তাদের কাছে রহস্যজনক ঠেকছে।
পদ্মা বহুমুখী সেতু প্রকল্পের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বলছেন, সেতুতে ধাক্কা লাগার ঘটনাটি তাদের কাছেও রহস্যজনক বলে মনে হচ্ছে। সেতুর একটা পিলার থেকে অন্য একটা পিলারের দৈর্ঘ্য ১৫০ মিটার বা ৪৯২ ফুট। যেখানে ফেরি আকারে এর থেকে অনেক ছোট। তাই স্বাভাবিকভাবে সেতুর পিলারে ফেরির ধাক্কা লাগার কথা নয়।
পদ্মা সেতুতে পিলারে কেন ফেরির ধাক্কা লাগছে এমন প্রশ্নের জবাবে তারা বলছেন, এর পেছনে অদক্ষ চালক এবং ফিটনেসবিহীন লঞ্চ অথবা ফেরিই দায়ী। যার সত্যতাও পাওয়া গেছে। পদ্মার তীব্র স্রোতে ফেরি কাকলী চলাচলের অনুপযুক্ত উল্লেখ করে আবেদন করেছিলেন ফেরিচালক বাদল হোসেন।
জানা গেছে, শিমুলিয়া বাংলাবাজার রুটে মোতায়েন করা ১৮টি ফেরির ১৪টিরই ফিটনেস সনদ নেই। বেশির ভাগ ফেরিতে নেই প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা সরঞ্জামাদি। অনেক ফেরির বয়স ৪০ বছর পার হয়ে গেছে।
আইন অনুযায়ী, ৪০ বছরের বেশি বয়সী নৌযানের ফিটনেস সনদ দেয় না বাংলাদেশ নৌ-পরিবহন অধিদপ্তর। পদ্মা সেতুর পিলারে ফেরি শাহজালালের আঘাতের ঘটনায় গঠিত উচ্চপর্যায়ের তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।