শুভ মহাষষ্টী।
পূজার শুরুর দিনেই একটা কথা বলি, যদিও অনেকেই জানেন বিষয়টি। ‘সনাতন ধর্ম’ সবচেয়ে পুরোনো ধর্ম বিশ্বাস। কিন্তু এরপরও যুগের সাথে মানিয়ে নিতে অনেক আচার, প্রথাকে সংস্কার করা হয়েছে। মানুষের মঙ্গলের জন্যই এই সংস্কার। যেমন ধরুন ‘সতিদাহ’ প্রথা। এখনকার সময়ে এটা একেবারেই ভয়াবহ একটা বিষয় হলেও আগেকার দিনে কিন্তু এটাকেই সঠিক বলে মনে হত। ‘বলিপ্রথা’তেও কিন্তু পরিবর্তন এসেছে। ইশ্বরের নামে জীব হত্যা সেই ভাবে এখন হয় না আর। জানিনা, এর জন্য রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘বিসর্জন’ নাটকের বড় প্রভব ছিল কিনা!
এবার আসি দুর্গা পূজায়। এক সময়ের লোকায়িত দেবী, বনদেবী, সাধারণের দেবী – এখন অবশ্য অভিজাতদের আরাধ্য। সে ইতিহাস অনেক বড়। এই লেখার বিষয়টা অন্য।
দুর্গা পূজার সাকালে অঞ্জলি দেয়া হয়। এই মন্ত্রের শুরুটা-
ওঁ আয়ুর্দ্দেহি যশো দেহি ভাগ্যং ভগবতী দেহি মে |
পুত্রান দেহি ধনং দেহি সর্বান কামাংশ্চ দেহি মে।
আমরা অনেকেই হয়তো শুধু মাত্র ‘মন্ত্র’ উচ্চারণ করতে হয় বলে করি। এর অর্থ খতিয়ে দেখি না। একটু খেয়াল করে দেখুন দ্বিতীয় লাইনে আছে ‘ পুত্রান দেহি’ অর্থাৎ পুত্র সন্তানের জন্য প্রার্থনা। একজন নারী শক্তিকে পূজা করছি আর সেখানে কেবল ‘পুরুষ’ হয়ে উঠছে কাঙ্খিত। ভীষণ পরস্পর বিরোধী এই মন্ত্র, সেই সাথে পুরুষতান্ত্রিক। সেকালের সমাজ ব্যবস্থার জন্য এটা হয়তো উপোযগী ছিল। এখনকার সময়ে এসেও কি লিঙ্গ বৈষম্যের এই মন্ত্র পাঠ করবো? এতে কি অবচেতন মনেই পুরুষতান্ত্রিক মনোভাব ঢুকে যাচ্ছে না?
শুরুই করেছিলাম পরিবর্তনের কথা বলে। সময়োপযোগী করতে এই মন্ত্রেও কিন্তু পরিবর্তন আনা যায়।
যদি মন্ত্রটা এমন হয়,
‘ওঁ আয়ুর্দ্দেহি যশো দেহি ভাগ্যং ভগবতী দেহি মে |
সন্তানান দেহি ধনং দেহি সর্বান কামাংশ্চ দেহি মে। ‘
শুধু একটি শব্দ আর্থাৎ ‘পুত্রান’ -এর জায়গায় ‘সন্তানান’ শব্দটি জুড়ে দিলেই কিন্তু পুত্র-কন্যা দুজনের জন্যই কামনা জানানো হল। আর দুর্গার কাছে তো সব সন্তানেই কাম্য।
বেদ-পুরাণ বা সনাতনধর্ম বিশ্লেষকরা এর জন্য হয়তো নানা মতান্তর দিবেন। কিন্তু আপনি ভেবে দেখুন আপনি কি করবেন।
আমি যদি অঞ্জলি দেই, তাহলে
‘‘ওঁ আয়ুর্দ্দেহি যশো দেহি ভাগ্যং ভগবতী দেহি মে |
সন্তানান দেহি ধনং দেহি সর্বান কামাংশ্চ দেহি মে।”
এটাই উচ্চারণ করবো।
মেইল: [email protected]