বর্তমান এই ব্যস্ত জীবনে যেমন বাইরের খাবারের দিকে বেশি ঝুঁকে পড়ছে মানুষ আবার সে সব খাবারের প্রভাবে এবং অপিরিমিত খাদ্যাভ্যাসের ফলে অনেকেই মুটিয়ে যাচ্ছেন। সে অবস্থা থেকে পরিত্রাণের জন্য কেউ কেউ দ্রুত ডায়েটের মাধ্যমে নিজেকে ফিট রাখার চেষ্টা করেন। কিন্তু দ্রুত ডায়েট বা ওজন কমাতে গেলে বেশ কিছু সমস্যার সম্মুখীন হতে পারেন।
আসুন জেনে নেই কিছু সমস্যার কথা-
১. গিঁট বাত
দেহে ইউরিক এসিডের পরিমাণ বেড়ে গেলে বিভিন্ন অস্থি-সন্ধি বা জয়েন্টে প্রদাহ এবং ব্যথা হয় একে গিঁট বাত বলে। হঠাৎ ওজন কমে গেলে গিঁট বাতের সমস্যা হতে পারে।
২. শারিরীক একাধিক সমস্যা দেখা দিতে পারে
পিত্তথলির পাথর হওয়ার একটি কারণ হঠাৎ ওজন কমে যাওয়া। তাই এই ধরনের সমস্যায় আপনি পড়তে পারেন যদি দ্রুত ওজন কমে যায়। রক্তে শর্করার বিপাক বা বা কোলেস্টেরলের ভারসাম্য নষ্ট হয়ে, তা থেকে হৃদ্যন্ত্র বা মস্তিষ্কের ক্ষতি হওয়াও অস্বাভাবিক কিছু নয়। খাবারে আমিষ শর্করার ভারসাম্য না থাকলে কিডনি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
৩.শক্তি কমে যাওয়া
কার্বোহাইড্রেট শরীরের শক্তি জোগায়, কর্মক্ষম রাখতে সাহায্য করে। এমনকি দেহের পেশিরও কার্বোহাইড্রেট প্রয়োজন পড়ে ভালো কাজের জন্য। সুতরাং হঠাৎ ওজন কমলে কার্বোহাইড্রেটের পরিমাণ কমে গিয়ে দেহের শক্তি হ্রাস পেতে পারে।
৪. অপর্যাপ্ত পুষ্টি
দেহে পুষ্টির প্রয়োজন হয় সচল থাকতে। শরীরকে ঠিকঠাক রাখতে পর্যাপ্ত পুষ্টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। যদি দ্রুত ওজন কমে পুষ্টির চাহিদা যথাযথভাবে নাও পূরণ হতে পারে। এই অপর্যাপ্ত পুষ্টি শরীরের শক্তি কমিয়ে দিতে পারে। পর্যাপ্ত ক্যালসিয়ামের অভাব হলে হাড়ের দুর্বলতা দেখা দিতে পারে।
৫. শর্করার মাত্রা কমে যাওয়া
ডায়াবেটিসে শরীরের শর্করার পরিমাণ বেড়ে যায়। তবে অনেক সময় এ রোগে শর্করার পরিমাণ অনেক কমে যেতেও পারে, যেটা ভয়ের কারণ হয়। দ্রুত ওজন কমলেও শরীরে শর্করার পরিমাণ হঠাৎ করে কমে যেতে পারে। এতে হঠাৎ করে অজ্ঞান হয়ে যাওয়ার মতো অবস্থা হতে পারে। তাই ভালো হয়, এই বিষয়ে কোনো পুষ্টিবিদের পরামর্শ নিলে।
৬. রক্তচাপ কমে যাওয়া
দ্রুত ওজন কমে যাওয়ার আরেকটি সমস্যা হচ্ছে হঠাৎ রক্তচাপ কমে যাওয়া। দেহের রক্তচাপ কমে গেলে মাথা ঘোরানো, মাথা ঝিমঝিম করা, হঠাৎ পড়ে যাওয়া, অজ্ঞান হওয়া, দুর্বলতা এসব সমস্যা হতে পারে।
৭.ক্ষুধাহীনতা
দ্রুত ওজন কমাতে চাইলে খাবার খাওয়ার প্রতি অনীহা চলে আসতে পারে, খাদ্যভীতি তৈরি হতে পারে। এর ফলে বিপজ্জনকভাবে দেহের ওজন হ্রাস পায়; যা স্বাস্থ্যঝুঁকিতে ফেলতে পারে আপনাকে।
৮. মানসিক চাপ বেড়ে যাওয়া
হঠাৎ করে ওজন কমলে বাড়তি মানসিক চাপ তৈরি হতে পারে। ওজন কমানোর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসেবে অনেকে মানসিক চাপে ভুগে থাকেন। রোগ প্রতিরোধক্ষমতা কমে যাওয়া, শারীরিক দুর্বলতা, ক্লান্তি, খিটখিটে মেজাজ কিংবা বিষণ্নতায় আক্রান্ত হওয়ার আশংকাও বেড়ে যায়।
৯. বজায় রাখা কঠিন
দ্রুত ওজন কমানোর প্রক্রিয়াগুলো খুব সীমাবদ্ধ থাকে। এটি সব সময় বজায় রাখা কঠিন হয়ে পড়ে। ফলে দেহের ভারসাম্য নষ্ট হয়।
১০. খাদ্যাভ্যাসে সমস্যা
ওজন কমানোর চেষ্টা খাবার এড়ানোর মানসিকতা বা খাবার কম খাওয়া খাদ্যাভ্যাসে সমস্যা তৈরি করতে পারে। এটি আপনার স্বাস্থ্যে প্রভাব ফেলে, যা স্বাস্থ্যঝুঁকিতে ফেলতে পারে আপনাকে। তাই এসব সমস্যা এড়াতে বিশেষজ্ঞ একজন পুষ্টিবিদের পরামর্শ নিয়েই ওজন কমানো সবচেয়ে ভালো।
১১। পানিশূন্যতা
দ্রুত ওজন কমলে শরীরে পানিশূন্যতা বা পুষ্টিহীনতা দেখা দিতে পারে। যা শরীরের জন্য মারাত্মক ক্ষতির কারণ হতে পারে। এছাড়া শরীরে পানি কমে যাওয়ার ফলে ত্বক বা চুলের ক্ষতি হয়, চুল অত্যধিক পড়ে যেতে পারে।
ওজন কমানোর সবচেয়ে ভালো উপায় হচ্ছে ক্যালরি মেপে পরিমিত সুষম খাবার গ্রহণ আর প্রচুর তরল খাবারের সঙ্গে নিয়মিত শারীরিক পরিশ্রম বা ব্যায়াম। সঙ্গে দরকার পর্যাপ্ত ঘুম এবং দুশ্চিন্তাহীন জীবনযাপন। অতি দ্রুত অস্বাভাবিক উপায়ে ওজন কমানো হলে নানা সমস্যার কারণ হতে পারে।