fbpx

নতুন কর আইন : তালা ভেঙে তল্লাশি, বিদেশে গেলেও দিতে হবে হিসাব

Pinterest LinkedIn Tumblr +
Advertisement

সম্প্রতি জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) আয়কর আইন ২০২২–এর খসড়া প্রকাশ করেছে। যেখানে কর অবকাশ সুবিধা কমানোর কথা বলা হয়েছে। একইসঙ্গে কর্মকর্তাদের তালা ভেঙে তল্লাশির ক্ষমতা প্রদান করা হচ্ছে। পাশাপাশি বিদেশে গেলে এনবিআরকে সম্পদের হিসাবও দিতে হবে বলে আইনে শর্ত জুড়ে দেওয়া হয়েছে।

বর্তমানে ১৯৯৪ সালের আয়কর অধ্যাদেশের যে আইন কার্যকর রয়েছে, সেখানে প্রথম বছর শতভাগ কর অবকাশ সুবিধা মেলে। এরপর থেকে প্রতিবছর ১০ শতাংশ হারে কর অবকাশ সুবিধা কমতে থাকে। প্রথম বছর থেকে দশম বছর পর্যন্ত বার্ষিক আয়ের ওপর ১০ থেকে ৯০ শতাংশ কর ছাড় পাওয়া যায়।

কিন্ত নতুন আইন অনুযায়ী, শতভাগ কর অবকাশ তথা ট্যাক্স হলিডে সুবিধা থাকছে না। প্রথম বছর থেকেই কিছু কর দিতে হবে। এই আইনে শতভাগ কর অবকাশ সুবিধা তুলে নেওয়া হচ্ছে। ফলে প্রথম দুই বছরে মোট আয়ের ১০ শতাংশের ওপর কর দিতে হবে।

আয়কর আইনের খসড়া অনুযায়ী, একটি শিল্প ও সেবা প্রতিষ্ঠান চালুর পর প্রথম দুই বছর আয়ের ওপর ৯০ শতাংশ কর অবকাশ সুবিধা পাবে। ব্যবসা শুরুর তৃতীয় ও চতুর্থ বছর ৭৫ শতাংশ; পরের তিন বছর অর্থাৎ পঞ্চম, ষষ্ঠ ও সপ্তম বছর ৫০ শতাংশ এবং এর পরের তিন বছর তথা অষ্টম, নবম ও দশম বছর ২৫ শতাংশ হারে কর অবকাশ সুবিধা মিলবে।

তবে একটি শিল্প ও সেবামুখী প্রতিষ্ঠান আগের মতোই ১০ বছর কর অবকাশ সুবিধা পাবেন। নতুন আইন কার্যকর হলেও এটি পরিবর্তন করা হচ্ছে না।

সাধারণত কর অবকাশ সুবিধার তালিকায় থাকা খাতগুলোর প্রতিষ্ঠান উৎপাদন ও সেবা কার্যক্রম শুরুর বছর থেকে কর অবকাশ সুবিধা পায়। প্রথম বছর থেকে প্রতিষ্ঠান যত আয় করবে, বছরভিত্তিক আনুপাতিক হারে কম কর মওকুফ পাবেন।

বর্তমানে ৩১টি খাত কর অবকাশ সুবিধা পায়। এর আগে যার সংখ্যা ছিল ২৬টি। চলতি ২০২১–২২ অর্থবছর থেকে আরও পাঁচটি খাত যুক্ত হয়েছে। এগুলো হলো- গাড়িশিল্প, কৃষিপণ্যের শিল্পায়ন, হোম অ্যাপ্লায়েন্স, হাসপাতাল ও হালকা প্রকৌশল। এই খাতগুলো সাধারণত উদ্যোক্তারা নিয়ন্ত্রণ করে থাকেন।

জানা গেছে, নতুন এই আইনে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার অনুমতি সাপেক্ষে এনবিআরের সহকারী কর কমিশনারের নিচে নয় এমন কর্মকর্তা কোনো করদাতার আয় অনুসন্ধানে তল্লাশি বা জব্দ করতে পারবেন। যে কোনো ভবন, স্থান, জাহাজ, যানবাহন বা বিমানে ঢুকেও আয় সম্পর্কিত রেকর্ড, অর্থ, মূল্যবান ধাতু, গয়না ও অন্যান্য মূল্যবান সামগ্রী বা বস্তু তল্লাশি করা যাবে। এমনকি কোনো দরজা, বাক্স, লকার, সেফ, আলমারি এসব খোলার চাবি পাওয়া না গেলে সেগুলো ভেঙে প্রবেশ বা তল্লাশি করতে পারবেন কর কর্মকর্তারা।

শুধু তাই নয়, ইলেকট্রনিক রেকর্ড ও সিস্টেমে সংরক্ষিত তথ্য, ছবি বা অন্য কোনো উপাত্ত উদ্ধার করতে পাসওয়ার্ড নিরাপত্তা ভেঙেও প্রবেশ করতে পারবেন কর কর্মকর্তারা। আয়সংক্রান্ত তথ্য কপি করতে পারবেন। জব্দ করা কাগজপত্র, দলিল ইত্যাদি ১৮০ দিন পর্যন্ত সংরক্ষণে রাখতে পারবেন তদন্তকারী কর্মকর্তা। তবে সম্পদ জব্দের ৯০ দিনের মধ্যে আয় অনুসন্ধানের উদ্যোগ নিতে হবে। এছাড়া অভিযুক্ত ব্যক্তিকে শুনানির সুযোগ দিতে হবে।

শুধু চিকিৎসা ও ধর্মীয় উদ্দেশ্য ছাড়া ব্যক্তিগতভাবে বিদেশে ঘুরতে বা ভ্রমণ করতে গেলেই আয়কর রিটার্ন জমার সময় ঘটিবাটিসহ সব সম্পদের বিবরণী দাখিল করতে হবে। নতুন আয়কর আইনের খসড়ায় এ শর্ত দেওয়া হয়েছে।

শর্ত অনুযায়ী, নতুন আয়কর আইন পাস হলে আপনার করযোগ্য আয় থাকুক কিংবা না থাকুক, দেশের বাইরে গেলে আপনাকে বাধ্যতামূলকভাবে ফ্ল্যাট-জমি, আসবাব, ব্যাংক ব্যালান্সসহ যাবতীয় সম্পদের তথ্য জানাতে হবে।

কর শনাক্তকরণ নম্বরের (টিআইএন) সঙ্গে জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) ও পাসপোর্ট অফিসসহ বিভিন্ন সরকারি দপ্তরের সঙ্গে স্বয়ংক্রিয় সংযোগ থাকায় এখন আর কেউ বিদেশ ভ্রমণ করে তা লুকাতে পারবেন না।

Advertisement
Share.

Leave A Reply