দেশের মানুষকে করোনাভাইরাস প্রতিষেধক টিকার আওতায় আনা সম্ভব হচ্ছে। তাই করোনাভাইরাস পরিস্থিতি উন্নতি হবে আশা করে মাধ্যমিক (এসএসসি) ও উচ্চ মাধ্যমিক (এইচএসসি) পর্যায়ের পরীক্ষা যথাক্রমে নভেম্বরে ও ডিসেম্বরে নেওয়ার পরিকল্পনা করছে সরকার।
আজ ১২ আগস্ট বৃহস্পতিবার এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে সরকারের এই পরিকল্পনার কথা জানান শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি।
শিক্ষামন্ত্রী বলেন, স্বাস্থ্যবিধি মেনে সীমিত পরিসরে সংক্ষিপ্ত সিলেবাসের মাধ্যমে নভেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহে এসএসসি পরীক্ষা ও ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে এইচএসসি পরীক্ষা নেওয়া হবে।
এসময় তিনি জানান, গত বছর নভেম্বর, ডিসেম্বর, জানুয়ারিতে দেশে করোনা সংক্রমণের হার কমে এসেছিল। এছাড়া এ বছর টিকা প্রদান আবার শুরু হয়ে গেছে, দেশব্যাপী টিকা প্রদান চলবে এবং ব্যাপক হারে রেজিস্ট্রেশনও চলছে। তাই পরীক্ষা নেওয়ার এই পরিকল্পনার নাও পেছাতে পারে।
তিনি বলেন, ‘আমাদের টিকারও এখন কোন ঘাটতি থাকছে না। আশা করি, আগামী কয়েক মাসের মধ্যে ব্যাপক সংখ্যক জনগোষ্ঠীর মধ্যে টিকা প্রদান সম্ভব হবে। আমরা আশা করছি, নভেম্বর-ডিসেম্বরে সংক্রমণ হার হয়তবা গত বছরের মতো বা তারও চেয়ে কম হবে।’
তবে কোভিড-১৯ পরিস্থিতি অনুকূল হলে সীমিত পরিসরে স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে সংক্ষিপ্ত সিলেবাসের আলোকে গ্রুপভিত্তিক শুধুমাত্র ৩টি নৈর্বাচনিক বিষয়ের ওপর পরীক্ষার সময় ও নম্বর দুটিই হ্রাস করে পরীক্ষা গ্রহণ করা সম্ভব হবে বলেও জানান দিপু মনি।
সে অনুযায়ি এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার জন্য নভেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহ এবং এইচএসসি ও সমমানের জন্য ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহ সম্ভাব্য তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে।’
করোনাভাইরাসের কারণে গত বছরের মার্চ থেকে দেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। পরিস্থিতির উন্নতি না হওয়ায় কয়েক দফা উদ্যোগ নিয়েও খোলা হয়নি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান।
যেভাবে পরীক্ষা নেওয়া হবে
বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনায় শিক্ষার্থীদের গ্রুপভিত্তিক তিনটি নৈর্বাচনিক বিষয়ের ওপর অ্যাসাইনমেন্টের মাধ্যমে শিখন ফল অর্জনের বিষয়ে পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।
পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্যই অ্যাসাইনমেন্টগুলো দেওয়া হবে ।
এসএসসি বা সমমানের অ্যাসাইনমেন্ট ১৮ জুলাই থেকে দেওয়া শুরু হবে। প্রতি সপ্তাহে দুটি করে ১২ সপ্তাহে মোট ২৪টি অ্যাসাইনমেন্ট দেওয়া হবে। প্রতিটি নৈর্ব্যচনিক বিষয়ের ওপর ৮টি করে অ্যাসাইনমেন্ট করতে হবে শিক্ষার্থীদের।
২৬ জুলাই থেকে এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষার্থীদের অ্যাসাইনমেন্ট দেওয়া শুরু হবে। সপ্তাহে দুটি করে ১৫ সপ্তাহে মোট ৩০টি অ্যাসাইনমেন্ট দেওয়া হবে।
এইচএসসির ৩টি নৈর্বাচনিক বিষয় এবং যেহেতু দুটি করে পত্র আছে, সেজন্য মোট ছয়টি পত্রে তারা ৩০টি অ্যাসাইনমেন্ট করতে হবে। অর্থাৎ প্রতিটি পত্রে ৫টি করে অ্যাসাইনমেন্ট করতে হবে।
আবশ্যিক বিষয় এসএসসির ক্ষেত্রে যেমন- বাংলা, ইংরেজি, গণিত, আইসিটি, ধর্ম; এইচএসসির ক্ষেত্রেও বাংলা, ইংরেজি- সেই আবশ্যিক বিষয়গুলো বা চতুর্থ যে বিষয় সেই বিষয়গুলোর কোনো অ্যাসাইনমেন্ট দেয়া হবে না।
সাবজেক্ট ম্যাপিং গতবারের মতো একই পদ্ধতি অনুসরণ করে এই আবশ্যিক বিষয়গুলোর মূল্যায়ন করা হবে।
‘গতবছর এইচএসসি পরীক্ষার ফলাফল দিতে গিয়ে আমরা যেভাবে করেছি, সেই এছাড়াও উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে যেহেতু গ্রুপভিত্তিক বিষয়গুলোর মূল্যায়নের প্রয়োজন রয়েছে, সে কারণেও এই গ্রুপভিত্তিক বিষয়ের মূল্যায়ন করা জরুরি। যেমন- বিজ্ঞান গ্রুপের ক্ষেত্রে পদার্থ, রসায়ন, জীববিজ্ঞান।’
অ্যাসাইনমেন্টগুলোর মূল্যায়ন কতটা সঠিক হচ্ছে সেটিরও মূল্যায়নের ব্যবস্থা করা হবে বলে জানান শিক্ষামন্ত্রী। সেজন্য সারাদেশে দৈবচয়ন পদ্ধতিতে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মূল্যায়নের কপি এনে সেগুলো পুনঃমূল্যায়ন করা হবে।
এবার পরীক্ষার সময় থাকবে তিন ঘণ্টার পরিবর্তে দেড় ঘণ্টা। এছাড়া ১০০ নম্বর পরীক্ষা কমিয়ে ৫০ নম্বরের করা হবে।
প্রশ্ন তৈরিতেও শিক্ষার্থীদের বেশি বিকল্প রাখা হবে। আগে যেখানে ১০টি প্রশ্ন থেকে ৮টি প্রশ্নের উত্তর দিতে হত, এবার সেখানে হয়ত ৩/৪টি প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে।’
এছাড়া কারিগরির ক্ষেত্রে নবম ও একাদশ শ্রেণির পাবলিক পরীক্ষাগুলো সম্পন্ন হবে। অনিয়মিত পরীক্ষার্থীরা নিয়মিত পরীক্ষার্থীদের মত এসব পরীক্ষায় অংশ নিবেন।
আবশ্যিক বিষয়ের ক্ষেত্রে পরীক্ষার্থী হলে ফলাফল সাবজেক্ট ম্যাপিংয়ের মাধ্যমে হয়ে থাকবে। আর নৈব্যচনিক বিষয়ের ওপর হলে তারাও এই পরীক্ষায় অংশ নিবেন। মানোন্নয়নের পরীক্ষার্থীরা নৈব্যচনিক বিষয়ের ওপর অংশ নিতে পারেবেন।”
কোভিড-১৯ পরিস্থিতির অবনতি হলে পরীক্ষা গ্রহণ করা সম্ভব না হলে বিকল্প মূল্যায়ন করার পরিকল্পনাও জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী।