সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গায়ক আসিফ আকবর বরাবরই বেশ সরব। নিজের ক্যারিয়ার তো বটেই, ব্যক্তিগত জীবন নিয়েও তিনি ফেসবুকে লেখালেখি করেন। নিজের পরিবার নিয়ে আসিফ প্রায়ই আবেগঘন পোস্ট দেন নিজের ফেসবুক ওয়ালে।
৮ জনুয়ারি একটি পোস্ট দিয়েছেন আসিফ। পোস্টে তিনি লিখেছেন, ‘প্রচন্ড দূঃসময়ে বড় ছেলে শাফকাতের জন্ম। বেগমকে সঙ্গে নিয়েই নিষ্ঠুর পৃথিবীর সঙ্গে অসম যুদ্ধে লিপ্ত হয়েছি। মহান আল্লাহ সফলতা দিয়েছেন, সফলতা পেলে পৃথিবীকে আর নিষ্ঠুর মনে হয়না, ভালই লাগে। শান্তশিষ্ট সত্যবাদী সৎ মানবিক ছেলে রণ। দেশের ক্যারিকেচার মূলক সংস্কৃতির সাথে সে বড্ড বেমানান। বাংলাদেশ আর্মীতে জয়েন করাই ছিল তার মূল লক্ষ্য, আমারও ইচ্ছে ছিল তাই। ক্লাস সিক্সে বেগমের একক সিদ্ধান্তে তাকে পাঠিয়ে দেয়া হয় খুলনা মিলিটারী কলেজিয়েট স্কুলে। অনেক কষ্ট হতো তখন। আমার এলোমেলো উশৃঙ্খল জীবনযাপন দেখে বেগম আর রিস্ক না নিয়ে তাকে যোগ্য ক্যাডেট হিসেবে তৈরী করেছে। তবে আর্মীতে যাওয়ার স্বপ্ন পূরণ না হওয়ায় তার গন্তব্য নির্ধারিত হয় দেশের বাইরে, কানাডায়। ব্র্যাক ইউনিভার্সিটি থেকে সিএসই’তে গ্র্যাজুয়েশন শেষে বিয়েটা করিয়ে দিলাম। এমএস করার জন্য চলে গেল কানাডার টরন্টোয়, ভর্তি হলো লয়্যালিস্ট কলেজে, সাবজেক্ট আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স এবং ডাটা সাইন্স। ডিসেম্বরের পঁচিশ তারিখ ফ্লাই করে ভালভাবে পৌঁছেছে আলহামদুলিল্লাহ্। তিন অক্টোবর রণ’র বিয়ের পরদিন থেকে আমি অসুস্থ্য হয়ে যাই, আবার বাম পায়ের লিগামেন্টেও চিড় ধরে একটা দূর্ঘটনায়। একটু সুস্থ্য হলেই কাজে ঢুকে যাই, আবারও অসুস্থ্য হই। কমিটমেন্ট খুব গুরুত্বপূর্ণ, আমার জবান আর জীবন একই সমান্তরালে চলে। এতো বছর ইন্ডাষ্ট্রীতে কাজ করি, এই বিষয়ে কেউ কখনো আঙ্গুল তুলে কথা বলতে পারেনি। সুস্থতা আর অসুস্থতার মেঘরোদ্দূর খেলায় এখনো আছি। বৌমা ঈশিতাও জার্মানীতে তার ইউনিভার্সিটির পাঠ চুকিয়ে মাস্টার্স করতে দ্রুততম সময়ে রণ’র কাছে চলে যাবে, এখন ঢাকায় একটা জব করছে। শ্বশুর হবার পর আমার আসল হুঁশ ফেরত এসেছে, সমস্ত উশৃঙ্খলতা থেকে নিজেকে গুটিয়ে এনেছি, এখন নিজের পরিবর্তনে নিজেই হতবাক, তবে শিড়দাঁড়া টানটান থাকবে সবসময়ের মত। সব ঠিক থাকলে ছোট ছেলে শাফায়াত রুদ্রও গ্র্যাজুয়েশন শেষে একবছরের মধ্যে চলে যাবে কানাডায় এমবিএ করতে। বাকী রইলাম আমি, বেগম আর আমার আটমাস বয়সী হাসিখুশী মেয়ে আইদাহ্। এখন মনে হয় শুরুতেই যদি মেয়ের বাবা হতাম তাহলে আমি বেতের মত সোজা হয়েই থাকতাম, রংবাজী রকবাজীর সুযোগই পয়দা হতোনা। এখন নিজেকে সত্যিই গুড বয় মনে হয়। মেয়ের বাবা হওয়ার সৌভাগ্য পৃথিবীতে আল্লাহর অনেক বড় নেয়ামত। আমার আম্মা সবসময় বলতেন- বাবা না হলে বাবার মর্যাদা বোঝা অসম্ভব। আসলেই তাই, বাবা হওয়ার আগে আব্বাকে ভিলেনই মনে হতো, আর এখন কান্নাকাটি করেও কোন লাভ হচ্ছেনা। ভরসা শুধুই- রাব্বির হামহুমা কামা রাব্বা ইয়ানিসাগীরা।’
এরপর তিনি লিখেছেন, ‘জানুয়ারির দশ তারিখ থেকে শাফকাতের ক্লাস শুরু হবে, আপাতত কানাডিয়ান ঠান্ডার তোপে আছে। ওখানে শুভাকাঙ্খীর অভাব নেই, সবাই তার খোঁজখবর রাখছে এটা একটা প্রশান্তির ব্যাপার। দেশেও আটক, বিদেশে যাওয়ার লাইসেন্সও নেই আমার। সারাজীবন চাকরী নামক শৃঙ্খলকে এভয়েড করে চলেছি। এখন উপায়ও নেই, শিক্ষাগত যোগ্যতাকে কাজে লাগানোর জন্য শীঘ্রই একটা চাকরীতে জয়েন করতে যাচ্ছি সম্ভবত। ব্যবসা বানিজ্যের তিপ্পান্ন গলিতে আমার সোজা মস্তিষ্কের কোন গ্রহনযোগ্যতা যে নেই সেটা বহু আগেই বুঝে গেছি। জীবনকে আমূল বদলে ফেলেছি, আরো বদলে ফেলার চেষ্টায় আছি, শুধু আল্লাহর কৃপা আর আনুকূল্যে বাকী জীবন কাটানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আমার পরিবারের সব সদস্যের জন্য বরাবরের মত সবার দোয়া চাই। সবাই ভাল থাকুন সুস্থ্য থাকুন সুন্দর থাকুন। ভালবাসা অবিরাম।’