fbpx

নীল নদের উৎসব 

Pinterest LinkedIn Tumblr +
Advertisement

পিরামিড, সমাধি এবং মন্দির দেখতে  লক্ষ লক্ষ পর্যটক  প্রতি বছর মিশর যায় । কিন্তু  মিশর কি শধুই তাদের কিছু উঁচু উঁচু কিছু পিরামিড আর আশ্চর্যজনক স্থাপত্য দেখিয়েই বিদায় জানায় পর্যটকদের ? না এর বাইরেও রয়েছে মিশরের অন্য এক গল্প।। মিশরের এই  স্মৃতিস্তম্ভগুলির পেছনে রয়েছে মিশরীয় সভ্যতার হাজার হাজার বছরের প্রাচীন সব গল্প।

প্রাচীন মিশরীয়রা তাদের জন্মভূমিকে কেমেট নামে অভিহিত করে। যার অর্থ  কালো ভূমি । এটি নীল নদের বন্যায় রেখে যাওয়া উর্বর কালো মাটিকে বোঝায় ।

নীল নদের উৎসব এই  নীল নদ এবং মিশরীয় ঐতিহ্য নিয়ে আজও মিশরে  কিছু প্রাচীন উৎসব প্রচলিত আছে। এই উৎসবগুলো মিশরকে  একটি অসাধারণ  ধর্মনিরপেক্ষ  শহর  হিসেবে পরিচয় করিয়ে দেয়। ইতিহাস ঘাটলে দেখা যায়, সারা বছর বিভিন্ন  উৎসব পালন করা মিশরীয়রা এতটাই আমুদে ছিল যে, তারা ভাবত স্বর্গ আসলে অতো আহামরি কোন জায়গা হতে পারে না।  মানব জন্ম  নিয়েই তারা খুশি ছিল। উৎসবে ভরা সেই প্রাচীন মিশর  আজকেও  অনেকটা তেমনই আলো ঝলমলে। আজকে এমন কিছু  প্রাণবন্ত মিশরীয় উৎসবের সাথে আপনাদেরকে পরিচয় করিয়ে দিব। যদি কোনদিন মিসর ভ্রমণে যান তাহলে এই  মিশরীয় উৎসবগুলোতে যোগ দিতে ভুলবেন না!

লেলেথ এন নোকতাহ(Leylet en Nuktah)

নীল নদের উৎসব 

লেলেথ এন নুক্কতাহ (Leylet en Nuktah) হচ্ছে নীল নদীর বন্যাকে কৃতজ্ঞতা জানানোর একটি প্রাচীন উৎসব । নীল নদের বার্ষিক বন্যা  তাদের  যে পানি, খাবার এবং উর্বর মাটি এনে দেয় সেটাই উৎযাপন করা হয় এই উৎসবে।

কালের বিবর্তনে এখন  অনেকটা পিকনিকের মত করে মানুষ এই উৎসব পালন করে থাকে।তাবার  উদযাপন চলতে থাকে রাস্তায়ও। উৎসবের ঐতিহ্যগুলির মধ্যে একটি হচ্ছে , মহিলারা বাড়ির প্রতিটি ব্যক্তির জন্য সূর্যাস্তের সময় বাড়ির উঠোনে ময়দার একটি নরম বল রেখে দেয়। সকালের মধ্যে বলগুলি রোদে শুকিয়ে  ফেটে যায় । আর ময়দার বলের এই ফাটল রেখাগুলোকেই  প্রতিটি ব্যক্তির  জীবনের ভবিষ্যত সম্ভাবনা, স্বাস্থ্য এবং সম্পদ সম্পর্কে ভবিষ্যদ্বাণী হিসেবে ধরে নেয়া  হয়।

মিশরীয়দের কাছে নীল নদ সবসময়ই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ । নীল নদের পাড়ে  প্রথম কৃষকরা ৫০০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে  বসতি স্থাপন করেছিল।  প্রাচীন মিশরীয়রা নদীটিকে আর নামে অভিহিত করেছিল। যার অর্থ হচ্ছে কালো । মিশরীয়রা বিশ্বাস করে নীল নদের দেবতা হাপি বন্যার সময় মিশরের  অনুর্বর ভূমিতে কালো পলি বয়ে আনত। তাই  দেবতা হাপিকে শ্রদ্ধা জানিয়ে আজও প্রতি বছর  তারা  এই উৎসব পালন করে থাকে ।

ফারাওনিক বিয়ের উৎসব

নীল নদের উৎসব 

এটি একটি বিয়ের অনুষ্ঠান যেখানে এলাকার অসংখ্য দম্পতি প্রাচীন ফারাওদের ঐতিহ্যবাহী পোশাকে  মানত করে।  নীল নদী উপত্যকার এই  উৎসব  বছরে কয়েকবার  হয়। সাধারণত ফারাওনিক বিয়ের  উৎসব মে এবং নভেম্বর মাসে লুক্সরে অনুষ্ঠিত হয়। অনেক সময় গির্জায় অল্প পরিসরে  ফারাওদের মতো এই বিয়ের অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়। আবার কখনও  ফ্যারাওনিক গ্রামে জাকজমক অনুষ্ঠান করে  মিশরীয় “জাফ্ফা” বা বিয়ের  মিছিল করে  একটি স্মরণীয় বিয়ের অনুষ্ঠান  করা হয়।

কপটিক ক্রিসমাস

নীল নদের উৎসব 

মিশরীয়দের ধর্মনিরপেক্ষতা এবং সাম্যের এক অনন্য উদাহরণ হচ্ছে এই কপটিক ক্রিসমাস।  ইস্টার এবং বড়দিনের খ্রিস্টীয় ছুটির দিনগুলো মিশরের জাতীয়  ইসলামী ঈদের ছুটির মতোই ধুমধাম করে পালন করা হয় । কপ্টিক ক্রিসমাস ৭ জানুয়ারি পালিত হয় । এবং ধর্ম ও বিশ্বাস নির্বিশেষে সারা মিশরে পালিত হয়। বিশেষ করে মিশরের কায়রো এবং কপটিক অঞ্চলে খুব জাকজমকভাবে এই দিনটি  উদযাপন করা হয়। সন্ধ্যায়  প্রার্থনার পর মানুষ  ভাত, রসুন এবং মাংসের স্যুপের ঐতিহ্যবাহী কিছু  খাবার খেতে সবাই এক জায়গায় জড়ো হয়। কায়রো এবং মিশরের অন্যান্য কপটিক অঞ্চলগুলোতে খাবার ভাগাভাগি করে এবং একে অপরকে অভিবাদন জানিয়ে মিশরীয়রা দিনটি উৎযাপন করে।

সূর্য উৎসব

নীল নদের উৎসব 

প্রাচীন মিশরীয় পুরাণ অনুসারে, সূর্য দেবতা ছিলেন প্রাচীন মিশরীয়দের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দেবতা। আবু সিম্বেলে প্রাচীন বিশ্বের সবচেয়ে বড় মন্দিরে  ফেব্রুয়ারি এবং অক্টোবর মাসে  এই উৎসবটি  পালন করা হয় । ফেব্রুয়ারি এবং অক্টোবরে  সূর্যের রশ্মি মন্দিরের সবচেয়ে গভীরে  পৌঁছায় এবং সেখানকার অন্ধকারের দেবী পতাহর মূর্তিটি অন্ধকারে ডুবে যায়। অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ দেবতা যেমন রা, রামসেস এবং আমুন সবাই সেই আলোয় আলোকিত হন। মন্দিরে উপস্থিত সবাই এই দৃশ্য দেখার জন্য অপেক্ষা করে। এই উতসবটি  প্রাচীন মিশরের সবচেয়ে সম্মানিত উতসবগুলোর মধ্যে একটি ।

স্ফিং দ্য ব্রিজ উৎসব

নীল নদের উৎসব 

এই উৎসব  স্ফিং দ্য ব্রিজ উৎসব নামে পরিচিত। কিন্তু শাম আল নাসিম উৎসব  নামে বসন্তের আগমন  হিসেবেও পালন করা হয়।  নীল নদের পাড়ে বসন্তকে স্বাগত জানানো এই প্রাচীন উৎসব ধর্ম নির্বিশেষে সব  মানুষ উদযাপন করে। এই দিন  পরিবারগুলি একসাথে জড়ো হয় এবং ঐতিহ্যবাহী খাবারের আইটেম ভর্তি ঝুড়ি নিয়ে পার্ক, সমুদ্র সৈকত এবং ঐতিহাসিক স্থানগুলোতে পিকনিক করতে যায়। জোকার, ভাড়  এবং বিক্রেতারা রাস্তায় লাইন দিয়ে মানুষকে বিনোদন দেয়।

নীল নদের উৎসব 

ওয়াফা আল নীল

নীল নদের উৎসব 

সমগ্র মিশর জুড়ে সেপ্টেম্বর মাসে  নীল নদকে উৎসর্গ করার  আরেকটি উৎসব হল ওয়াফা আল নীল বা নীল নদের বিশ্বস্ততা । প্রতি বছর সেপ্টেম্বর মাসে মিশরীয় জনগণ নীল নদীর গুরুত্ব উদযাপন করতে এই উৎসবের আয়োজন করে । মিশরের এই উতসবটি মূলত একটি সাংস্কৃতিক উৎসব। এই দিন আয়োজন করা হয় বিভিন্নরকম  কনসার্ট, কবিতা পাঠ এবং শিশুতোষ  অনুষ্ঠান।

Advertisement
Share.

Leave A Reply