fbpx

প্রতি ৪ জনের ১ জন স্ট্রোকের ঝুঁকিতে

Pinterest LinkedIn Tumblr +
Advertisement

বিশ্বে প্রতি ৪ জনের মধ্যে একজন স্ট্রোকের ঝুঁকিতে আছেন। হৃদরোগের পর স্ট্রোকের কারণে সবচেয়ে বেশি মানুষ মারা যান। প্রতি ৬ সেকেন্ডে একজন মানুষের মৃত্যু হচ্ছে স্ট্রোকে। নারীর চেয়ে পুরুষের আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি দ্বিগুণ।

চিকিৎসকেরা বলছেন, উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, অস্বাস্থ্যকর জীবনযাপনের কারণে স্ট্রোকে আক্রান্ত হচ্ছে মানুষ। শারীরিক পরিশ্রম কমিয়ে দেওয়া স্ট্রোকের ঝুঁকিতে পড়ার অন্যতম কারণ। দেশে বছরে প্রায় ২০ লাখ মানুষ স্ট্রোকে আক্রান্ত হচ্ছে। পঙ্গুত্বের অন্যতম প্রধান কারণ স্ট্রোক। স্ট্রোকে আক্রান্ত হওয়ার পর সাড়ে চার ঘণ্টার মধ্যে চিকিৎসা শুরু করা গেলে রোগীকে বাঁচানো সম্ভব ও পঙ্গুত্ববরণের ঝুঁকিও কমানো সম্ভব।

‘প্রতি মিনিট জীবন বাচায়’, এই প্রতিপাদ্যে ২৯ অক্টোবর বিশ্বজুড়ে পালিত হচ্ছে বিশ্ব স্ট্রোক দিবস। মস্তিষ্ক স্বাভাবিকভাবে কাজ করার জন্য অক্সিজেন ও প্রয়োজনীয় পুষ্টির উপাদান প্রয়োজন হয়। এই প্রয়োজনীয় উপাদান রক্তের মাধ্যমে মস্তিষ্কে সরবরাহ হয়। যদি কোনও কারণে মস্তিষ্কে রক্ত সঞ্চালন বাধাপ্রাপ্ত হয়, তখন তাকে স্ট্রোক বলে। মস্তিষ্কের যে অংশে রক্ত সঞ্চালন বাধাপ্রাপ্ত হয়, সেখানে মস্তিষ্ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়, যার ফলে স্ট্রোকের লক্ষণগুলো দেখা যায়। একইভাবে স্ট্রোকের ফলে মস্তিষ্কের রক্ত সরবরাহ বন্ধ হয়ে মস্তিষ্কের কোষগুলো মারা যায়।

ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্সেস ও হাসপাতালের ২০১৮ সালের এক জরিপের তথ্য অনুযায়ী, দেশে প্রতি হাজারে স্ট্রোকে আক্রান্ত হচ্ছেন ১১ দশমিক ৩৯ জন মানুষ। প্রায় ২০ লাখ স্ট্রোকের রোগী রয়েছে বাংলাদেশে। স্ট্রোকের ঝুঁকি ৬০ বছরের বেশি বয়সী মানুষের মধ্যে ৭ গুণ বেশি। নারীর চেয়ে পুরুষের আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি দ্বিগুণ। স্ট্রোকের প্রকোপ শহরের চেয়ে গ্রামে কিছুটা বেশি।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্য বলছে, দেশে স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়ে ২০১৯ সালে মারা গেছেন ৪৫ হাজার ৫০২ জন। ২০২০ সালে এ সংখ্যা বেড়ে ৮৫ হাজার ৩৬০ জনে দাঁড়ায়। অর্থাৎ স্ট্রোকের রোগী এক বছরে দ্বিগুণ বেড়েছে।

ওয়ার্ল্ড স্ট্রোক অর্গানাইজেশন জানিয়েছে, স্ট্রোক হওয়ার তিন থেকে সাড়ে ৪ ঘণ্টার মধ্যে চিকিৎসা নিলে ৩০ শতাংশ রোগীর সম্পূর্ণ ভালো হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। স্ট্রোক হওয়ার ৬ ঘণ্টার ভেতরে রক্ত নালীর জমাট খুলে দিলে ৫০ শতাংশ রোগীর সম্পূর্ণ ভালো হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। চিকিৎসকেরা বলছেন, স্ট্রোক হওয়ার পরে রিং পরানোর মাধ্যমে রক্ত নালীর ব্লক খুলে দেওয়া সম্ভব। স্ট্রোকে আক্রান্ত রোগীরা স্ট্রোক সেন্টারে চিকিৎসা নিলে ভালো হওয়ার সম্ভাবনা ১৪ শতাংশ।

বিদেশে স্ট্রোক সেন্টারে চিকিৎসা ব্যবস্থা অনেক আগে থেকেই চালু থাকলেও বাংলাদেশে এটি নতুন ধারণা। সম্মিলিত সামরিক হাসপাতাল, ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্সেস ও হাসপাতাল এবং বিএসএমএমইউ’তে এই চিকিৎসা ব্যবস্থা চালু হয়েছে। এছাড়া কয়েকটি বেসরকারি হাসপাতালেও এই চিকিৎসা চালু হয়েছে।

চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, স্ট্রোক সেন্টারে চিকিৎসার সুযোগ হলে স্ট্রোকে আক্রান্ত ব্যক্তির সুস্থ হয়ে ওঠার এবং পঙ্গুত্ব বরণ না করার সম্ভাবনা বেশি থাকে। একিউট স্ট্রোক ম্যানেজমেন্ট বাংলাদেশে নতুন শুরু হয়েছে। যদিও এটি বেশ আগে যুক্তরাষ্ট্রে শুরু হয়। একজন রোগী স্ট্রোকে আক্রান্ত হওয়ার পর সাড়ে ৪ ঘণ্টার মধ্যে স্ট্রোক সেন্টারে এলে চিকিৎসকরা তার সিটিস্ক্যান করার পর ওষুধ দেন। সেটি একটি ইনজেকশন, যার একটি ভায়েলের বাজারমূল্য ৫০ হাজার টাকা। এ ওষুধ দেওয়ার ফলে স্ট্রোকের জন্য যে পঙ্গুত্ব হয়ে যায়, একদিক দুর্বল হয়ে যায়, সেসব ঠিক হয়ে যায়। ফলে রোগী সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে যান।

বিএসএমএমইউ’র নিউরোলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. মো. শহীদুল্লাহ বলেন, ‘এই চিকিৎসা দিতে হবে সাড়ে ৪ ঘণ্টার ভেতরে। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে রোগীরা সাড়ে ৪ ঘণ্টার ভেতরে আসেন না। কারণ, রোগীরা জানেন না স্ট্রোক হয়েছে। সচেতনতার জন্য আমাদের প্রথম দায়িত্ব রোগীদের জানানো। আবার অনেকে জানেন যে, এটা স্ট্রোক। কিন্তু তারা জানেন না যে, চিকিৎসা করার সময় হচ্ছে সাড়ে ৪ ঘণ্টা। এই সাড়ে ৪ ঘণ্টার মধ্যে চিকিৎসা করা না হলে, প্রতি মিনিটে প্রায় ২০ লাখ কোষ মারা যায়। অর্থাৎ সাড়ে ৪ ঘণ্টার মধ্যে যদি চিকিৎসা করা যায়, তাহলে ২০ লাখ কোষ বেঁচে যায়।’

বিএসএসএমইউ’র সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ডা. কনক কান্তি বড়ুয়া বলেন, ‘আমাদের মাথা পিছু আয় বেড়ে যাওয়ার কারণে জীবনযাপন উচ্চাভিলাষী হয়ে গেছে। এতে মানুষ আরামপ্রিয় হয়ে গেছে। শারীরিক অ্যাক্টিভিটিজ নেই। এখান থেকে ওখানে গাড়িতে চড়ে যায়। এখন রিচ ফুড, ফাস্ট ফুড মানুষ খায় বেশি। এতে ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপের রোগী বাড়ছে, কোলেস্টেরল বাড়ছে, মদ খাওয়া, ধূমপায়ী বাড়ছে। এতে কিন্তু ঝুঁকি বাড়াচ্ছে। পাশাপাশি অতিরিক্ত ওজন যাদের তাদেরও ঝুঁকি বেশি। এই ঝুঁকি যত বেশি কমানো যাবে, তত বেশি স্ট্রোকের সংখ্যা কমবে।’

Advertisement
Share.

Leave A Reply