অযোধ্যায় হিন্দুদের জনপ্রিয় দেবতা রামের নামে তৈরি করা বিশাল মন্দিরের উদ্বোধন করেছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। সোমবার জমকালো এক অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে দেশটির উত্তরপ্রদেশের অযোদ্ধায় নির্মিত এই মন্দিরের উদ্বোধন করবেন তিনি।
সোমবার সকাল থেকেই অযোধ্যায় আসতে শুরু করেন বিশিষ্ট ব্যক্তিরা। আকর্ষণের কেন্দ্রে ছিলেন অমিতাভ বচ্চন, যিনি কিছুদিন আগে সরযূতীরে থাকবেন বলে জমি কিনেছেন। উপস্থিত সিনেমাজগতের অন্য নামীরাও, যাঁদের মধ্যে রয়েছেন মুকেশ অম্বানী এবং তাঁর স্ত্রী নীতা অম্বানী, আকাশ অম্বানী এবং তাঁর স্ত্রী শ্লোকা মেহতা, হেমা মালিনী, অভিষেক বচ্চন, অনুষ্কা শর্মা, মাধুরী দীক্ষিত, রণবীর কাপুর, আলিয়া ভাট, রজনীকান্ত, ধানুশ, আয়ুষ্মান খুরানা, জ্যাকি শ্রফ, অনুপম খের, রণদীপ হুদা, ভিকি কৌশল, ক্যাটরিনা কাইফ, রোহিত শেট্টি, দক্ষিণী অভিনেতা রাম চরণ, বলি গায়ক সোনু নিগম, খ্যাতনামী সঙ্গীতনির্মাতা শঙ্কর মহাদেবন, অনুপম খের কঙ্গনা রনৌতের মতো পরিচিত মুখ। অযোধ্যায় এসেছেন শচীন টেন্ডুলকার, রবিন্দ্র জাদেজা, ব্যাডমিন্টন খেলোয়াড় সাইনা নেহওয়ালও।
অভিজিৎ মুহূর্তে প্রাণ প্রতিষ্ঠার পর প্রধানমন্ত্রী উদ্বোধন করবেন নির্মাণাধীন মন্দিরের। তারপর সমবেত অতিথিদের সামনে তিনি ভাষণ দেন।
মন্দির প্রতিষ্ঠার অনুষ্ঠান সারা দেশের জনগণকে দেখাতে কেন্দ্রীয় সরকার বিভিন্ন নির্দেশ দিয়েছে। সরকারি গণমাধ্যম তো বটেই, বেসরকারি টেলিভিশনেও আজ সকাল থেকে অযোধ্যা ছাড়া অন্য কিছু নেই। কেন্দ্রীয় সরকারের সব প্রতিষ্ঠানে বেলা আড়াইটা পর্যন্ত ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে, যাতে সরকারি কর্মীরাও এই মাহেন্দ্রক্ষণের সাক্ষী থাকতে পারেন। সেই ছুটির আওতায় ‘এইমস’-এর মতো সরকারি হাসপাতালও রাখা হয়েছিল। যদিও প্রবল জনরোষের কারণে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সেই ছুটি বাতিল করে দিতে বাধ্য হয়।
১০ হাজার সিসিটিভি ক্যামেরা বসানো হয়েছে। ড্রোন দিয়ে নজরদারি করা হচ্ছে সবার ওপর। যেকোনো ধরনের আক্রমণ প্রতিহত করতে যা যা করা দরকার, সে ব্যবস্থাও রাখা হয়েছে। অনুষ্ঠান বানচাল করতে বিদেশি শিখ সন্ত্রাসবাদীদের হুমকি সরকার গুরুত্বের সঙ্গে মোকাবিলা করতে বদ্ধপরিকর। মন্দির চত্বর ঘিরে প্রতিটি গৃহে রাখা হয়েছে নিরাপত্তারক্ষী। প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের মোকাবিলায়ও প্রস্তুত প্রশিক্ষিত বাহিনী।
ভারতীয় মহাকাব্য রামায়ণে অযোধ্যার কথা উল্লেখ আছে। ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লি থেকে প্রায় ৭০০ কিলোমিটার পূর্বে উত্তরপ্রদেশ রাজ্যের এই শহরে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের দেবতা রামের জন্মস্থান বলে কথিত আছে। রামকে হিন্দুরা ভগবান বিষ্ণুর অবতার বলে বিশ্বাস করেন।
১৫২৮ সাল থেকে ভারতের প্রথম মুঘল সম্রাট বাবরের শাসনামলে বাবরি মসজিদের স্থানে রাম জন্মগ্রহণ করেছিলেন বলে অনেক হিন্দু বিশ্বাস করেন। রাম যে স্থানে জন্মগ্রহণ করেছিলেন সেখানে একটি মন্দির ছিল বলেও তারা দাবি করেন। তাদের বিশ্বাস, বাবরের শাসনামলে সেই মন্দির ভেঙে ফেলার পর সেখানে মসজিদ নির্মাণ করা হয়।
১৯৪৯ সালের ডিসেম্বরে হিন্দুত্ববাদী আন্দোলনকারীরা বাবরি মসজিদের ভেতরে রামের মূর্তি স্থাপন করার পর কর্তৃপক্ষ মসজিদটির নিয়ন্ত্রণ নেয়। আদালতের নির্দেশে মসজিদ থেকে মূর্তি অপসারণে নিষেধাজ্ঞা এবং মসজিদ হিসেবে ভবনটির ব্যবহার কার্যকরভাবে বন্ধ করা হয়।
দেশটির হিন্দু ও মুসলিম গোষ্ঠীগুলো অযোদ্ধার ওই এলাকা এবং স্থাপনার ওপর পৃথক দাবি জানিয়ে আদালতের কাছে আবেদন করে। ১৯৮৯ সালে দেশটির সুপ্রিম কোর্ট মসজিদের স্থিতাবস্থা বজায় রাখার নির্দেশ দেয়।