সূর্যের আলো, বাতাসের মুক্ত আসা যাওয়া, চারিদিকে জলাশয়, পাখির ডাক এই সব মিলেই একটি হাসপাতালের পরিবেশ। গতানুগতিক চিত্র থেকে একদম আলাদা পরিবেশে নির্মাণ করা হয়েছে হাসপাতালের ভবন।
বলছি, সাতক্ষীরার শ্যামনগরের ফ্রেন্ডশিপ হাসপাতালের পরিবেশ বান্ধব নান্দনিক স্থাপনার কথা। যেটি জিতে নিয়েছে যুক্তরাজ্যভিত্তিক রয়্যাল ইনস্টিটিউট অব ব্রিটিশ আর্কিটেক্টস রিবা-২০২১ সালের বিশ্বসেরা ভবনের অ্যাওয়ার্ড। যুক্তরাজ্যের গণমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ানের তথ্যমতে, পরিবেশ বান্ধব নকশার কারণে জার্মানির বার্লিনের জেমস সিমন গ্যালারি ও ডেনমার্কের লিলে ল্যাঞ্জেব্রো সেতুকে পেছনে ফেলে রিবা পুরস্কার জিতে নিয়েছে সাতক্ষীরার এই হাসপাতালটির স্থাপনা।
এনজিও ফ্রেন্ডশিপ এর অর্থায়নে ৮০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালটির ডিজাইন করেছেন বাংলাদেশের স্থাপত্যশিল্পী কাশেফ মাহবুব চৌধুরী। শ্যামনগর উপজেলার সোয়ালিয়া গ্রামে ১৪ কোটি টাকা ব্যয়ে ২ একর জমির ওপর আধুনিক সুযোগ-সুবিধাসংবলিত এ হাসপাতালটির চারিদিকে আছে কৃত্রিম খাল। কোনওরকম সীমানা প্রাচীর ছাড়াই নির্মাণ করা এই হাসপাতালটির ২০টি ভবন, আউটডোর ও ইনডোরকে আলাদা করেছে মাঝে বয়ে চলা খাল।
বাতাস ও পানির চলাচলকে গুরুত্ব দেওয়া হাসপাতালটির নকশা অনুযায়ী সারাবছর বৃষ্টির পানি ধরে রাখতে কৃত্রিম এসব খাল ও জলাশয় ব্যবহার করা হয়। বর্ষা মৌসুমে বৃষ্টির পানি হাসপাতালের আঙিনা বা ছাদে না জমে খালে চলে যেতে পারে, এবং খালের পানি গিয়ে মিশে বড় জলাধারে। আর গ্রীষ্মের প্রচন্ড গরমে ধরে রাখা বৃষ্টির পানি কোনো জ্বালানির সাহায্য ছাড়াই লাল ইটের তৈরি করা এই হাসপাতালের ভেতর ও বাইরের পরিবেশকে রাখে ঠান্ডা ও শীতল।
৪ বছর নির্মাণ কাজ শেষ হবার পর ২০১৮ সাল থেকে রোগীদের সেবা দিয়ে আসা ভবনটিতে আরও আছে অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থা, অডিটোরিয়াম, কনভেনশন সেন্টার, ক্যান্টিন, নামাজের আলাদা ব্যবস্থা, ডাক্তারসহ ৫৬ কর্মকর্তা-কর্মচারীর থাকার ব্যবস্থা। এছাড়াও হাসপাতালটির আছে পরিবেশ বান্ধব নিজস্ব বর্জ্য ব্যবস্থাপনা।
হাসপাতালটির স্থপতি কাশেফ মাহবুব জানান, আধুনিক সুযোগ সুবিধা থাকলেও হাসপাতাল নির্মাণে সর্বোচ্চ প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে পরিবেশকে। কারণ, হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের মানসিক স্বাস্থ্যের উপর পরিবেশ অনেকটাই প্রভাব বিস্তার করে। অনেক সময় বিশুদ্ধ বাতাস ও প্রাকৃতিক পরিবেশ মানুষের সুস্থতা প্রাপ্তিতে সহযোগীতা করে।
হাসপাতালটির কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, এখানে ২৪ ঘণ্টা জরুরি সেবা দেওয়া হয়। পালাক্রমে ৬ জন চিকিৎসক ও ১২ জন নার্স কর্তব্যরত থাকেন। প্রতি মাসেই দেশের বাইরে থেকে আসেন একজন বিশেষজ্ঞ ডাক্তার। শুধু সাতক্ষীরাবাসী নয়, এই হাসপতাল থেকে চিকিৎসা নিতে পারেন দেশের যেকোন জেলার মানুষ।