গোটা বিশ্বজুড়ে কোভিড এর প্রভাব ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের জেরে অর্থনীতিতে মন্দা দেখা গেছে। এর প্রভাব দেখা গেছে বিদেশি মুদ্রার বৈশ্বিক মজুতেও। এমন পরিস্থিতিতে ভারত থেকে শুরু করে চেক রিপাবলিক পর্যন্ত বিভিন্ন দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক নিজ নিজ মুদ্রার সুরক্ষায় বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করছে। এই সংকটময় পরিস্থিতি সামনে আরও খারাপ হতে পারে, এমনটি জানিয়েছেন বিশ্লেষকেরা।
সম্প্রতি সিঙ্গাপুরভিত্তিক সংবাদমাধ্যম বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, এ বছর রিজার্ভ প্রায় ১ লাখ কোটি ডলার বা ৭ দশমিক ৮ শতাংশ কমে ১২ ট্রিলিয়ন ডলারে নেমেছে। ২০০৩ সালে ব্লুমবার্গ বৈশ্বিক রিজার্ভের ডেটা সংকলন শুরু করার পর এটাই সর্বোচ্চ পতন বলেও প্রতিবেদনে জানানো হয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, এই রিজার্ভ কমার পেছনে সবচেয়ে বড় কারণ মূল্যায়নের পরিবর্তন। ইউরো ও ইয়েনের মতো বিদেশি মুদ্রার বিপরীতে ডলারের দাম বাড়ায় এসব মুদ্রা অ্যাকাউন্টে থাকা সম্পদের মূল্যও কমেছে। রিজার্ভের এই পতন চলমান মুদ্রা বাজারের অস্থিরতাকেও প্রতিফলিত করে। পরিস্থিতি এমন যে, বেশ কয়েকটি দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক মুদ্রার অবমূল্যায়ন ঠেকাতে লড়াইয়ে নেমেছে।
চলতি বছর ভারতের রিজার্ভ ৯ হাজার ৬০০ কোটি ডলার কমে ৫৩ হাজার ৮০০ কোটি ডলারে নেমেছে। দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলছে, এপ্রিল থেকে পুরো অর্থবছরে তাদের হিসাব যতটা কমেছে, তার ৬৭ শতাংশই সম্পদের মূল্য কমার ফল। আর বাকি রিজার্ভ কমেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হস্তক্ষেপের কারণে। ভারতে এবছর ডলারের বিপরীতে রুপি ৯ শতাংশ দর হারিয়েছে। শুধু তাই নয়, গত মাসে কমতে কমতে সর্বোচ্চ পর্যায়েও নেমেছিল।
অন্যদিকে ইয়েনের পতনের গতি কমাতে সেপ্টেম্বরে জাপান ২ হাজার কোটি ডলার ব্যয় করেছে। ১৯৯৮ সালের পর মুদ্রার সমর্থনে এটাই জাপানের প্রথম পদক্ষেপ। এজন্য এবার ১৯ শতাংশ রিজার্ভ হারিয়েছে। একইভাবে চেক রিপাবলিকের মুদ্রা নিয়ন্ত্রণের কারণে সেখানে ফেব্রুয়ারির পর ১৯ শতাংশ রিজার্ভ কমেছে।
এ প্রসঙ্গে মার্ক ইনভেস্টমেন্টের প্রধান বিনিয়োগ কর্মকর্তা অ্যাক্সেল মার্ক বলেন, এটা উপসর্গমাত্র, এখন ফাটল দেখা দিচ্ছে। বিপদ দেখা দেবে তীব্র গতিবেগে।
অর্থনীতিতে রিজার্ভ দিয়ে মুদ্রার মান রক্ষার চর্চা নতুন নয়। সাধারণত বিদেশি মুদ্রার অতিমূল্যায়নের কারণে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ডলার কিনে তাদের মজুত বাড়াতে থাকে। আর যখন দেশ যে কোনো অর্থনৈতিক মন্দার মধ্য দিয়ে যায়, তখন সেই ধাক্কা সামলাতে দেশটি তার রিজার্ভ ব্যবহার করে থাকে।
প্রতিবেশী দেশ ভারতে যে রিজার্ভ আছে, তা দিয়ে তাদের নয় মাসের মতো আমদানি ব্যয় মেটানো সম্ভব। তবে অন্য দেশগুলোর অবস্থা বেশ শোচনীয়। যেমন- পাকিস্তানের রিজার্ভ চলতি বছর ৪২ শতাংশ কমার এখন ১ হাজার ৪০০ কোটি ডলারে ঠেকেছে। যা দিয়ে দেশটির তিন মাসের আমদানি দায় মেটানোও সম্ভব নয়।