এই পৃথিবীতে মানুষের তৈরি ঘরসহ ব্যবহৃত নানা জিনিসপত্র ভাড়া দেওয়ার কথা শুনেছেন ! কিন্তু পাখিরা ভাড়া ঘরে থাকে এমন কখনো শুনেছেন? হ্যাঁ, এমনটাই হয়েছে রাজশাহীতে। রাজশাহীর বাঘা উপজেলার খোর্দ্দ বাউসা গ্রামে পাখির বাসা ভাড়ার অর্থের চিঠি হাতে পেয়েছেন স্থানীয় বাগান মালিকরা।
২ফেব্রুয়ারি মঙ্গলবার বাগান মালিক ও ইজারাদারদের ক্ষতিপূরণের টাকার চিঠি হাতে পেয়েছেন বাগান মালিকরা। এই ভাড়ার টাকা পাবেন ৩৮টি আমগাছের পাঁচজন মালিক।
জানা যায়, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের বন-২ শাখার উপসচিব দীপক কুমার চক্রবর্তী ২০২০ সালের ১ নভেম্বর স্বাক্ষরিত চিঠিতে ক্ষতিপূরণের টাকা দেয়ার নির্দেশ প্রদান করেন। ৩৮টি আমগাছের পাঁচজন মালিককে বন অধিদপ্তরের অনুন্নয়ন খাত হতে বার্ষিক তিন লাখ ১৩ হাজার টাকা দেয়ার চিঠি দেয়া হয়েছে।
তবে চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে, আমবাগানের শামুখখোল পাখি বিগত তিন বছর যাবত আছে। প্রাকৃতিক কারণে যে কোনো সময় পাখি ওই স্থান ত্যাগ করে অন্য কোনো নতুন স্থানে চলে যেতে পারে। সেহেতু আগামী কয়েক বছর পর্যবেক্ষণে রেখে এ বিষয়ে পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তবে যে বছর পাখি বসবে না, সে বছর কোনো ক্ষতিপূরণ দেয়া হবে না।
পাখির বাসা ভাড়া বাবদ যারা ক্ষতিপূরণ পাচ্ছেন তারা হলেন- মুঞ্জুরুল হক মুকুল, সানার উদ্দীন, সাহাদত হোসেন, শফিকুল ইসলাম মুকুট ও ফারুক হোসেন।
সরকারীভাবে পাখি সুরক্ষায় এমন উদ্যোগ নেওয়ায় খুশি বাগান মালিকরা। তারা মনে করছেন এভাবে টাকা পেলে বীগত দিনের বাগানের ক্ষতি পুষিয়ে উঠতে পারবেন তাঁরা। এছাড়া গাছগুলো যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সেজন্য নিয়মিত পরিচর্যার দাবি জানান বাগান মালিকরা। পাশাপাশি সরকারকে ধন্যবাদ জানান তারা।
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী প্রজ্ঞা পারমিতা রায় পাখির অভয়ারণ্য হিসেবে ঘোষণা করার জন্য আদালতে রিট পিটিশন করেন। পরে পাখির বাসা ভাঙা যাবে না বলে হাইকোর্ট নির্দেশ দেন। পাশাপাশি কী পরিমাণ ক্ষতি হবে তা জানতে চেয়ে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। তারপর আমবাগানের ক্ষতির বিষয়ে জরিপ করে ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণ করে প্রতিবেদন দেন।
উপজেলা কৃষি অফিসার শফিউল্লাহ সুলতান বলেন, ৩৮টি আমগাছে পাখি বাসা বেঁধে আছে। সেই আমগাছের সম্ভাব্য দাম ও পরিচর্যার ব্যয় নিরূপণ করে ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণ করে প্রতিবেদন দেয়া হয়। সেই মোতাবেক বাগান মালিকরা টাকার চিঠি হাতে পেয়েছেন।
এদিকে গত চার বছর থেকে স্বেচ্ছায় পাখি পাহারা দিয়ে আগলে রেখেছেন খোর্দ্দ বাউসা গ্রামের রফিকুল ইসলাম, শাহাদত হোসেন।