বগুড়া বাফার গুদামে খালাসের জন্য নিয়ে আসা সাত ট্রাক সার ভেজালের অভিযোগে ১৩ জনকে গ্রেফতার করেছেন র্যাব-১২ সদস্যরা। বৃহস্পতিবার রাতে অভিযান চালিয়ে বগুড়া বাফার গুদাম এলাকা থেকে ১৩ জনকে গ্রেফতার করে র্যাব। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃতরা জানিয়েছেন, ঢাকার সাভার এলাকায় যাত্রাবিরতিতে সাতটি ট্রাক থেকে আসল সার নামিয়ে নকল সার তুলে বগুড়ায় নিয়ে আসা হয়েছে।
গতকাল সকাল ১১টায় র্যাব-১২ বগুড়া ক্যাম্পে সংবাদ সম্মেলন করে এসব তথ্য জানান কোম্পানি কমান্ডার স্কোয়াড্রন লিডার তৌহিদুল মোবিন খান।
বগুড়া কমান্ডার জানান, গত ২৭ আগস্ট চট্টগ্রামের পতেঙ্গা টিএসপি কমপ্লেক্স থেকে এমএইচআর এন্টারপ্রাইজের ১২ ট্রাক টিএসপি সার নিয়ে বগুড়া আসছিল। আসার পথে ঢাকার সাভার এলাকায় যাত্রা বিরতিতে সাতটি ট্রাক থেকে আসল সার নামিয়ে নকল সার তোলা হয়েছে। ২৯ আগস্ট সকালে সাত ট্রাক টিএসপি সার বগুড়ার বাফার গুদামে আসে। ট্রাকগুলোয় ভেজাল সার আছে—এমন সংবাদের ভিত্তিতে জেলা প্রশাসন পরীক্ষা ছাড়া সার খালাস বন্ধ করে দেয় এবং ওইদিন সন্ধ্যায় জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে সারের নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য রাজশাহীতে মৃত্তিকা সম্পদ উন্নয়ন ইনস্টিটিউটে পাঠানো হয়েছে।
বৃহস্পতিবার ইনস্টিটিউটের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা শহিদুল ইসলাম নমুনাগুলো পরীক্ষার পর জানান, ওই সাত ট্রাকের সার ভেজাল বা ভিন্ন মিশ্রণ রয়েছে। এ খবরে বৃহস্পতিবার রাতে ওই সাত ট্রাকের চালক ও হেলপারদের আটক করেছে র্যাব। আটককৃতরা হলেন ঢাকার সাভার বনিয়ারপুর এলাকার হাসেন আলীর ছেলে নুর হোসেন (২৬), আব্দুল হাইয়ের ছেলে আবুল বাশার (২৮), আনিছের ছেলে জসিম (২৬), মৃত সুলতান মিয়ার ছেলে সোহেল (৩৫), শাহব উদ্দিনের ছেলে আসাদুল (২৬), মুন্নাফের ছেলে বাবু (২৫), একই এলাকার মৃত আব্দুল হকের ছেলে আব্দুল আউয়াল (৫০), সাভার নগরকোন্ডা এলাকার আজগর আলীর ছেলে তারেক (১৯), একই এলাকার আব্দুল আজিজের ছেলে শাকিল (৩২), কান্দর আলীর ছেলে শাকিল (৩১), মোহাম্মদ আলীর ছেলে হানিফ (৩২), রংপুর মিঠাপুর এলাকার পায়রাবতী গ্রামের আনছার আলীর ছেলে জাহাঙ্গীর আলম (১৮) এবং মানিকগঞ্জ জেলার দৌলতপুর এলাকার আরশাদ শেখের ছেলে শাহ্ আলম (৪৩)। গ্রেফতার ট্রাকচালক ও তাদের সহকারীরা সবাই এমএইচআর এন্টারপ্রাইজের কর্মচারী। ভেজাল সন্দেহে বগুড়ায় খালাস না করা আরো ১০ ট্রাকের সার তাদের নজরদারিতে রয়েছে।
চট্টগ্রাম টিএসপি কমপ্লেক্সের ব্যবস্থাপক (প্রশাসন) মাজহারুল ইসলাম জানান, বগুড়া বাফার গুদামে আসা ১৮ ট্রাক টিএসপি সার পরীক্ষার জন্য তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি বগুড়া থেকে নমুনা সংগ্রহ করেছেন। এর মধ্যে সাত ট্রাকে ভেজাল মিশ্রণ পাওয়া গেছে। অন্যান্য নমুনা পরীক্ষার অপেক্ষায় রয়েছে।
বগুড়া সদর থানার ওসি সেলিম রেজা জানান, সাত ট্রাকের সারে ভেজাল মিশ্রণ পাওয়ায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স এমএইচআর করপোরেশনের মালিক মোয়াজ্জিন হোসেন, ১৩ জন চালক ও হেলপারসহ ১৪ জনের বিরুদ্ধে সদর থানায় মামলা হয়েছে।
উল্লেখ্য, চট্টগ্রাম টিএসপি কমপ্লেক্স থেকে বগুড়া বাফার গুদামে আসা ১৮ ট্রাক টিএসপি সার ভেজাল সন্দেহে খালাস বন্ধ রেখেছে বাফার গুদাম কর্তৃপক্ষ। সারগুলো পরীক্ষার জন্য তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি বগুড়া এসে নমুনা সংগ্রহ করেছে। এর মধ্যে তারা সাত ট্রাকে ভেজাল মিশ্রণ পেয়েছেন। ১৮ ট্রাকে ৫ হাজার ৪০ বস্তায় ২৫২ টন সার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স এমএইচআর করপোরেশনের মাধ্যমে বগুড়া বাফার গুদামে আসে।