শাঁখের ধ্বনি, ধূপের সুগন্ধি, ঢাক-করতাল-কাঁসার বাদ্যের তালে আরতির মাধ্যমে চলছে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব দুর্গাপূজা। কল্পারম্ভ ও বিহিতপূজার মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছে মহানবমীর আনুষ্ঠানিকতা। আনন্দের মাঝে বিষাদের ছায়াও পড়েছে ভক্তদের মনে। কেননা আর একদিন বাদেই দেবী ফিরে যাবেন কৈলাসে। বিজয়া দশমীর দিন প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে অশ্রুশিক্ত চোখে ভক্তরা দেবী দুর্গাকে বিদায় দেবেন।
মঙ্গলবার (০৪ অক্টোবর) সকালে কল্পারম্ভ ও বিহিতপূজা শেষে ভক্তরা দেবীর চরণে অঞ্জলি নিবেদন করেন। মণ্ডপে মণ্ডপে চলে পূজা অর্চনাও।
শাস্ত্রমতে, মহানবমীতে ভক্তদের দেওয়া ষোড়শ উপাচারের সঙ্গে ১০৮টি নীলপদ্ম দুর্গার চরণে অর্পণ করা হবে। এছাড়া নীলকণ্ঠ, নীল অপরাজিতা ফুল ও যজ্ঞের মাধ্যমে মহানবমীর বিহিত পূজা করা হবে। এছাড়া মহানবমীর দিনে যজ্ঞের মাধ্যমে দেবীদুর্গার কাছে আহুতি দেওয়া হবে। ১০৮টি বেল পাতা, আম কাঠ, ঘি দিয়ে এই যজ্ঞ অনুষ্ঠিত হয়।
নবমী তিথি শুরু হয় সন্ধিপূজার মধ্য দিয়ে। অষ্টমীর শেষ ২৪ মিনিট ও নবমীর প্রথম ২৪ মিনিট সর্বমোট ৪৮ মিনিটে সন্ধিপূজা হয়। এদিন দেবীদুর্গার এক রূপ, চামুণ্ডা দেবীর পূজা করা হয়। এ সময়েই দেবী দুর্গার হাতে বধ হয়েছিল মহিষাসুর; আর রাম বধ করেছিলেন রাবণকে।
রামকৃষ্ণ মিশনের নির্ঘন্টে বলা হয়েছে, মঙ্গলবার সকাল ৬টা ৩০ মিনিটে শুরু হবে নবমী পূজা। পুস্পাঞ্জলি সকাল ১০টা ৩০ মিনিটে। পরদিন বুধবার সকাল ৬ টা ৩০ মিনিটে দশমী পূজা আরম্ভ, পুস্পাঞ্জলি সকাল ৮টায় এবং পূজা সমাপন ও দর্পণ বিসর্জন হবে সকাল ৮টা ৫০ মিনিটের মধ্যে। সন্ধ্যা- আরাত্রিকের পর প্রতিমা বিসর্জন ও শান্তিজল গ্রহণের মধ্যদিয়ে শেষ হবে পাঁচদিনব্যাপি এ উৎসবের।
এ বছর দেবী দুর্গার আগমন গজে, যার অর্থ বসুন্ধরা শস্যপূর্ণ হয়ে উঠবে। অন্যদিকে দেবীর গমন নৌকায় যার অর্থ জল এবং শস্যবৃদ্ধি। বিগত দুটি বছর করোনার প্রকোপ পুজোর আনন্দকে কিছুটা হলেও ফিকে করে দিয়েছিল। কিন্ত এবার সেই চিরচেনা রূপে আবারও মণ্ডপে মণ্ডপে বেজে উঠেছে ঢাকের বাজনা।
গুলশান-বনানী সর্বজনীন পূজা ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে সন্ধ্যারতি, ধূনচী নাচসহ পূজার পাঁচদিনই থাকছে নানা আনুষ্ঠানিকতা। অপরদিকে, রামকৃষ্ণ মিশন, মিরপুর কেন্দ্রীয় মন্দির, শাঁখারী বাজার, রমনা কালী মন্দির, সিদ্ধেশ্বরী পূজামণ্ডপ, পশ্চিম ধানমণ্ডির দুর্গা মন্দির, আখড়া মন্দির, নিমতলা মন্দির, ফার্মগেট, বনশ্রীসহ রাজধানীর অন্যান্য এলাকাতেও জমকালোভাবে আয়োজন করা হয়েছে দুর্গাপূজার।
ঢাকেশ্বরী মন্দিরের পুরোহিত বিজয়কৃষ্ণ গোস্বামী বলেন, এ বছর উমার আগমন গজে এবং ফিরে যাবেন নৌকায়। মায়ের গজে আগমনের ফলশ্রুতি হচ্ছে শস্যপূর্ণ বসুন্ধরা। আর নৌকায় গমনের ফলশ্রুতি শস্যবৃদ্ধি এবং জলবৃদ্ধি। এ বছর দেশের অনেক স্থান বন্যা-জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হয়েছে, অনেক শস্যাদি নষ্ট হয়েছে। তারই একটা প্রভাব আসছে।
বাংলাদেশ পূজা উদ্যাপন পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক চন্দ্রনাথ পোদ্দার বলেছেন, সারা দেশে ৩২ হাজার ১৬৮টি মণ্ডপে পূজার প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। আগের তুলনায় এবারও কিছু পূজার আয়োজন বেড়েছে।