বাংলাদেশের স্বাধীনতার পরে অনেক যুদ্ধশিশু ও অনাথকে বিদেশে পুনর্বাসনের জন্য অনেক শিশুকে নেদারল্যান্ডসে নিয়ে যাওয়া হয়। যারা আদতে যুদ্ধশিশু বা অনাথ ছিল না। সে সময় তাদের বাবা-মাকে না জানিয়ে কিংবা তাদের সম্মতি ছাড়াই সন্তানকে দত্তক হিসেবে পাঠিয়ে দেওয়া হয়।
প্রায় ৫০ বছর পরে সেসব ঘটনা খতিয়ে দেখতে তদন্ত শুরু করেছে বাংলাদেশ পুলিশ। বিবিসি বাংলা এই তথ্য প্রকাশ করেছে।
দরিদ্র বাবা-মাকে সন্তানদের বোর্ডিং স্কুলে শিক্ষা ও নানান ধরণের সুবিধা দেওয়া হবে জানিনে কৌশলে ওই শিশুদের দত্তক হিসেবে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল বলে অভিযোগ উঠেছে। এ ধরনের পরিস্থিতিতে পড়েন কনা ভেরহেউল নামে একজন। তিনি এখন ডাচ নাগরিক। জীবনের দীর্ঘ সময় পার করে তিনি জেনেছেন তাঁর আসল বাবা-মায়ের পরিচয়। জেনেছেন তাঁর নিজের নাম ছিল নাসিমা।
তারপর তিনি নিজের শিকড়ের কাছে পৌঁছেছেন। তিনি বলেন আমি ভাগ্যবান, নিজের পরিবারকে ফিরে পেয়েছি। আর কাউকে যেন এসবের মধ্য দিয়ে যেতে না হয়। তাতে জীবনটা নড়বড়ে হয়ে যায়।
ব্রিটিশ সংবাদপত্র দ্য গার্ডিয়ানের এক অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে উঠে আসে, বাংলাদেশের স্বাধীনতার পরে ঢাকার টঙ্গী এলাকার একাধিক নারীকে প্রলোভন দেখানো হয়েছিল তাদের সন্তানের উন্নত ভবিষ্যতের। তবে সেটা বাংলাদেশেই ভালো থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করার মাধ্যমে। কিন্তু সন্তানদের পাঠানোর কয়েকদিন পর খোঁজ নিতে গিয়ে অভিভাবকরা আর তাদের দেখা পাননি।
এ ধরনের হতভাগ্যদের স্বজনকে খুঁজে বের করতে কনা ভেরহেউল গড়ে তোলেন শাপলা কমিউনিটি। ভেরহেউল বলছিলেন, এই প্রতিষ্ঠানটির মাঠকর্মীরা গ্রামগঞ্জে ঘুরে সেই সত্তর দশকে দত্তকের নামে সন্তান হারানো কেউ আছে কিনা, তাদের খুঁজে বেড়ান। তথ্য পাওয়ার পর নিশ্চিত হওয়ার জন্য ডিএনএ টেস্ট করতে হয়।
সংস্থাটির পক্ষ থেকে জানানো হয়, এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ইতোমধ্যে ৪০ জন মানুষ তাদের পরিবারকে খুঁজে পেয়েছেন। মিলিত হয়েছেন তাদের সঙ্গে। আরও ১৫০ জন আছেন অপেক্ষমাণ তালিকায়।
সপ্তাহ তিনেক আগে এই ঘটনার প্রথম পুলিশি তদন্তে প্রত্যক্ষদর্শী হিসেবে কনা ভেরহেউলের সাক্ষাৎকার নেয় বাংলাদেশ পুলিশের ডিপ্লোম্যাটিক অ্যান্ড প্রোটোকল উইং অব দ্য স্পেশাল ব্রাঞ্চ। বাহিনীটির স্পেশাল সুপারিনটেনডেন্ট মাশরুফ হোসেন মাশফি জানান, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে কয়েক মাস আগে এ তদন্তটি করার জন্য নথি পাঠানো হয়।
তিনি বলেন, ঘটনাটি যত আগেই হোক না কেন, পুরো বিষয়টিকে আইনের আওতায় নিয়ে আসার চেষ্টা করা হবে।
শাপলা কমিউনিটির তথ্যমতে, সত্তরের দশকে নেদারল্যান্ডসে ৫০০, ডেনমার্কে ১৭০, সুইডেনে ২০০ ও নরওয়েতে ১০০টির মতো শিশুকে বাংলাদেশ থেকে নেওয়া হয়েছিল। যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, জার্মানি এবং সুইজারল্যান্ডও কিছু শিশুর গন্তব্য হয় তখন।