ইশরাত জেরিনের জন্ম ২৪ অক্টোবর। বেড়ে উঠেছেন খুলনায়। পড়াশোনা শুরু খুলনা রোটারি স্কুলে। এমবিএ শেষ করেছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। এখন একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত। সমসাময়িক কিছু বিষয় নিয়ে ইশরাত জেরিন তার ভাবনা লিখেছেন বিবিএস বাংলা’র মতামত বিভাগে।
বাসের দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা নানা পেশার নানা বয়সী মানুষের ভিড়ে কিছু মুখ তাদের অনিশ্চিত জীবনের কথা বলে। যেন সহজেই দৃশ্যমান হয়ে উঠে, বাসের লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা প্রতিটা জীবনের গল্প ভিন্ন এক জীবন গল্প। এটা হচ্ছে আমাদের রাজধানী ঢাকার রোজকার জীবনের এক অংশ। জীবিকার তাগিদে এই শহরের এই লাইন দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হয় রোজ। এই জীবনেই মানিয়ে চলার চেষ্টা সবার।
আমাদের রোজকার জীবনে গত এক বছরের বেশি সময়ে একটা অনাকাঙ্খিত শব্দ এসে যোগ হয়েছে। এই শব্দকে ঘিরে অনিচ্ছাকৃত জীবন চলা আমাদের। ‘কোভিড ১৯’ – এই শব্দ এখন জীবন জুড়ে। ঘরে বাইরে যেখানেই আমরা থাকছি অস্থিরতা, অনিশ্চয়তা আর আতঙ্ক প্রতি মুহূর্তে।
অনেক দেশের মতো আমাদের দেশও আবার লকডাউনে যাচ্ছে বা যেতে হচ্ছে।করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা আর মৃত্যু সংখ্যা রোজ যাচ্ছে বেড়ে। স্বজন হারানোর সংখ্যা বাড়ছে। জীবন এখন অনাকাঙ্খিত কারাবাস। লকডাউনের এই সময়ে পাবলিক যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকবে। খোলা থাকবে জরুরি সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান, ঔষধ আর নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের দোকান।
লকডাউনের সময়সীমা যদি বাড়তে থাকে, কেমন থাকবো আমরা সবাই? একই রকম জীবন সংগ্রামে সবাই হয়তো থাকবো না, তবে কোনো না কোনোভাবে এই লকডাউনে স্বাভাবিক জীবন থেমে যাবে সবার। কেউ তার চাকরি হারাবে। জীবিকার খোঁজে তখন নতুন যুদ্ধ। কেউ হয়তো স্বল্প আয়ের শেষ অবলম্বনটুকু হারানোর ভয়ে থাকবে। কেউ খাবারের অনিশ্চয়তায়, এভাবে কোনো না কোনোভাবে সবাই প্রভাবিত হবো। এই অস্বাভাবিক জীবন আরও অস্বাভাবিক হবে।
লকডাউন আমাদের মাঝে সামাজিক দূরত্ব তৈরি করে। এই মহামারি অবরুদ্ধ করুক তবে সেই সাথে আমাদের মানসিক দূরত্ব যেন না বাড়ে। এটি আমার প্রত্যাশা। আমরা অনেক বেশি যেন মানবিক হই আরও। লকডাউনে মানবিকতা যেন তালাবদ্ধ না হয়। আমরা সচেতন হই, সংবেদনশীল হই – যেন এই মহামারির বিরুদ্ধে যুদ্ধে আমরা জয়ী হতে পারি। জয় হোক মানবতার! এখন কামনা শুধু মুক্তির এই অনিশ্চিত জীবন থেকে। গণ্ডি পার হোক আমাদের ভালোবাসার, আমরা মানবিকতায় যেন বাঁচি।