fbpx

‘শিল্পের কোনো ধর্ম হয় না’- এক নৃত্যশিল্পীর অন্তর নিগড়ানো অনুভূতি

Pinterest LinkedIn Tumblr +
Advertisement

মাত্র তিন বছর বয়সে ভরত নট্যম শেখা শুরু করেন ভারতের নৃত্যশিল্পী মনিষা ভিপি। শত বছরের পুরোনো এই নাচের উৎপত্তি মন্দির থেকে।

কেরালার মালাপ্পুরাম জেলার মতো জায়গায় মুসলিম পরিবার থেকে এই নাচ শেখাটা বড় যুদ্ধ হয়ে উঠেছিল। তবে পথটা করে দিয়েছেন তার মা আমিনা। তিনি ভরত নট্যম ও ভারতীয় শাস্ত্রীয় নাচ ভীষণ পছন্দ করতেন। তাই সব বাধা ডিঙ্গিয়ে মেয়েকে নাচ শেখানোর জন্য লড়েছেন।

শুধু মনিষা নয় তার বোন রুবাইয়া ভরত নট্যম, কথাকলি ও মহিনিত্তমের মতো শাস্ত্রীয় নৃত্যে তালিম নিয়েছেন।

একেবারে সনাতন ধর্মের সাথে জড়িত এই নাচ মুসলমান পরিবারে থেকে শেখাটা সহজ ব্যাপার ছিলনা বলে জানান মনিষা। এমনকি পরিবার এই নাচের সাথে তাকে যুক্ত করেছে এটা শুনে কপালে চোখ উঠেছে অনেকেরই। হয়েছেন খবরের শিরোনামও।

আবারও খবরের শিরোনামে উঠে এসেছেন মনিষা। কারণ কেরালার একটি মন্দিরের বার্ষিক অনুষ্ঠানে নাচতে চেয়েছিলেন তিনি। কিন্তু মন্দির কর্তৃপক্ষ থেকে অনুমতি পাওয়া যায়নি। কারণ হিসেবে জানানো হয়েছে –ধর্ম। অর্থাৎ মনিষা মুসলমান হওয়ার কারণেই মন্দিরে নাচার অনুমতি দেয়া হয়নি। আর এই বিষয়টি নিজের ফেসবুক পোস্টে শেয়ার করেন তিনি। মুহূর্তেই এটি ভাইরাল হয়। চলে নানা রকম আলোচনা সমালোচনা।

মনিষা জানান, প্রথমে অনুষ্ঠানের আয়োজকরা তার আবেদনটি গ্রহণ করেছিল। তবে মন্দির কর্তৃপক্ষ ঐতিহ্যের কথা উল্লেখ করে তার আবেদন বাতিল করে দেয়।

সংবাদমাধ্যম বিবিসিকে মনিষা বলেন, ‌‌’আমি আরও তীব্র বৈষম্যের স্বীকার হয়ে এখানে পৌঁছেছি। এটা তো কিছুই নয়।’

তিনি জানান, ছোট বেলায় অর্থনৈতিক সংকটের মধ্য দিয়ে কেটেছে, তবুও জীবন ছিল সুখের।

২৭ বছর বয়সী এই শিল্পী এখন ভরত নট্যমের ওপর পিএইচডি করছেন।

তিনি জানান, টিভিতে মনিষার মা ভরত নট্যমের বর্ণিল সাজসজ্জা দেখেই এই নাচকে ভালবেসেছিলেন। তখন তার বাবা ভিপি আলাভিকুট্টি সৌদি আরবে কাজ করতেন। দুই মেয়েকে নাচ শেখাতে তিনি শুরুতে ভয় পাচ্ছিলেন। তবে আমিনার স্বামীও মেয়েদের নাচ শেখানোর জন্য সমর্থন করেন। সবচেয়ে মজার বিষয় হচ্ছে আমিনা খুব ধর্মপ্রাণ নারী ছিলেন। তিনি তার মেয়েদের শুধু শখের বসে নাচ শেখাননি। ছুটির দিনে বড় বড় গুরুর কাছে তামিল দেয়ার জন্য শতশত কিলোমিটার দূরেও ছুটে গেছেন। এক একদিন এমনও হয়েছে একাধিক গুরুর ক্লাস নিয়েছে তারা। মেয়ারা যাতে দক্ষ শাস্ত্রীয় নৃত্যশিল্পী হয়ে উঠতে পারেন সেই চেষ্টা করে গেছেন নিরলস ভাবে। নাচের সাথে এভাবেই জীবনকে ওতপ্রতোভাবে জড়িয়ে নিয়েছেন আমিনা ও তার দুই মেয়ে।

‘শিল্পের কোনো ধর্ম হয় না’- এক নৃত্যশিল্পীর অন্তর নিগড়ানো অনুভূতি

বাবা-মায়ের সাথে মনিষা। ছবি: বিবিসি

ছোটবেলা থেকে মনিষা ও রুবাইয়া মন্দিরের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে নাচ করেছে। আর শাস্ত্রীয় নৃত্যশিল্পীদের কাছে মন্দিরে নাচ করা বেশ আকর্ষণীয় কেরালাতে।

মনিষা জানান,  সমস্যার শুরু হয়েছিল মনিষা ও রুবাইয়া যে এলকায় থাকেন সেখানকার মসজিদ থেকেই। সেখান থেকেই প্রথমে মুসলমান মেয়ের মন্দিরে নাচ করাটা নিয়ে অভিযোগ তোলা হয়।

কিশোর বয়সে পরিস্থিতি বুঝতে পেরে একসময় নাচ ছেড়েও দেন তিনি। তবে রুবাইয়া খুব ছোট থাকায় নাচ করার জন্য কান্নাকাটি করতেন। এরপর তাদের বাবা-মা আবার সিদ্ধান্ত নেন মেয়েদের নাচ শেখানোর জন্য।

মনিষা বলেন, ‘আমি জানি না কীভাবে তারা এমন সিদ্ধান্ত নিলেন, তবে তাদের উদ্বেগ আমাদের কখনও দেখাননি।’

মনিষার বাবা আলভিকুট্টি ছোট বেলায় পথ নাটকে অভিনয় করেছেন। এবং তিনি বিশ্বাস করেন মেয়েদের নাচ শিখিয়ে তিনি কোনো ভুল করেননি।

তবে পরিস্থিতি উল্টে যায়, ২০০৬ সালে আমেনা যখন ক্যান্সারে আক্রান্ত হন। স্ত্রীর চিকিৎসার অর্থ যোগার করতে হিমশিম খাচ্ছিলেন আলভিকুট্টি। মনিষা জানায়, বিদেশি একটি সাহায্যের প্রস্তাব পেয়েছিল তারা। তবে মসজিদ কমিটি বিরোধীতা করলে তা বাতিল হয়ে যায়। মনিষা-রুবাইয়া নাচ করে এটাই ছিল ওই কমিউনিটির চোখে বড় অপরাধ।

‘শিল্পের কোনো ধর্ম হয় না’- এক নৃত্যশিল্পীর অন্তর নিগড়ানো অনুভূতি

বাবার সাথে মনিষা। ছবি: বিবিসি

এরপর ২০০৭ সালে মারা যান আমিনা। তখন স্থানীয় কবরস্থানে তাকে কবরও দিতে দেয়া হয়নি।

একটা সময় মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন মনিষা। শক্তি হয়ে পাশে দাঁড়ায় বাবা। রুবাইয়া পাশের রাজ্য তামিল নাড়ুতে পড়াশোনার জন্য চলে যায়। আর মনিষা নতুন উদ্যমে আবার নাচ শুরু করেন।

মনিষা জানান, মালাপ্পুরাম জেলার অনেক মন্দিরেই নাচ করেছেন তারা দুই বোন। সে সব মন্দির থেকে প্রশংসা ও ভালবাসাও পেয়েছেন। তবে বহুকষ্টে অর্জিত এই বিদ্যা চর্চায় আবার নতুন করে বাধা হয়ে উঠলো ধর্ম।

মনিষা তার পোস্টে লিখেছেন, ‘যদি একজন ব্যক্তিও এটি পড়ে বুঝতে পারেন যে শিল্পের আসলে কোনো ধর্ম হয় না। তাহলেই আমি খুশি হব।’

Advertisement
Share.

Leave A Reply