শীত ও শীতজনিত রোগে বছরে বাংলাদেশে গড়ে ১০৪ জন মানুষের মৃত্যু হয়। প্রতি ১০ লাখ মানুষের বিপরীতে মৃত্যুর হার বেশি রংপুর ও বরিশাল বিভাগে। আর সবচেয়ে কম মৃত্যু হয় ঢাকা বিভাগে। দেশে শীত বেশি থাকে ডিসেম্বর ও জানুয়ারি মাসে। এই সময়েই মৃত্যু বেশি হয়।
কানাডার ক্যালগারি বিশ্ববিদ্যালয় এবং খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) চারজন শিক্ষকের এক গবেষণায় এ চিত্র উঠে এসেছে। বাংলাদেশে ‘শীতের কারণে মৃত্যুর তথ্যভান্ডার গড়ে তোলা (ডেভেলপিং কোল্ড রিলেটেড মরটালিটি ডেটাবেজ ইন বাংলাদেশ) শিরোনামের গবেষণাটির ফলাফল গত ২৭ সেপ্টেম্বর এনভায়রনমেন্টাল রিসার্চ অ্যান্ড পাবলিক হেলথ নামের একটি আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান সাময়িকীতে প্রকাশ করা হয়।
২০০৯-২০১০ সালের শীত মৌসুম থেকে শুরু করে ২০২০-২০২১ সালের শীত মৌসুম পর্যন্ত ১২টি শীত মৌসুমের তথ্য বিশ্লেষণ করে গবেষণাটি করা হয়েছে। গবেষকেরা সংবাদপত্রে প্রকাশিত তথ্যকে গবেষণায় ব্যবহার করেছেন। আবহাওয়ার পরিস্থিতির তথ্য-উপাত্ত নিয়েছেন আবহাওয়া অধিদপ্তর থেকে। বিশ্বব্যাংকের উন্মুক্ত তথ্যভান্ডার থেকে নেওয়া হয়েছে মাথাপিছু আয় ও দারিদ্র্য পরিস্থিতির তথ্য। শীতে মৃত্যুর কারণ হিসেবে নিউমোনিয়া, ডায়রিয়া ও হাঁপানি এবং আগুনে পুড়ে যাওয়াকে বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে।
গবেষণায় দেখা যায়, ২০০৯ থেকে ২০২১ সালের শীত মৌসুমে মোট ১ হাজার ২৪৯ জন মানুষের মৃত্যু হয়। এ সময় সবচেয়ে বেশি মৃত্যু হয়েছে ২০১১-২০১২ সালের শীতে, ২১৪ জন। সবচেয়ে কম মৃত্যু হয় ২০১৬-২০১৭ সালের শীতে, ১৮ জন। ২০২০ ও ২০২১ সাল মিলিয়ে যে শীত মৌসুম, সে সময়ে মৃত্যু হয় ৫২ জনের।
গবেষকেরা জানান, সাধারণভাবে শীত বেশি পড়লে মৃত্যু বেশি দেখা যায়। শীত মৌসুম শুরুর পর ২১ থেকে ৩১ ডিসেম্বর এবং জানুয়ারির ১১ থেকে ২০ তারিখের মধ্যে শীত বেশি পড়ে। আর ওই সময় শীতে মৃত্যুর সংখ্যাও বেড়ে যায়। তবে বরিশাল বিভাগে শীত মৌসুমের মধ্যে তুলনামূলক উষ্ণ মাসে মৃত্যু বেশি ছিল। মৃত্যুর বেশির ভাগ, ৭৫ দশমিক ৫ শতাংশ ক্ষেত্রে কারণ শীত। ১০ দশমিক ৬৫ শতাংশ ক্ষেত্রে ঠান্ডায় রোগাক্রান্ত হওয়া মৃত্যুর কারণ। ৫ দশমিক ৮ শতাংশ ক্ষেত্রে মৃত্যুর কারণ আগুন পোহাতে গিয়ে অগ্নিদগ্ধ হওয়া।
গবেষকেরা তাদের গবেষণায় দু’ ভাবে মৃত্যুর চিত্রটি দেখিয়েছেন। প্রথমত, প্রতি ১০ লাখ মানুষের বিপরীতে ২০২১ সাল পর্যন্ত ১২টি শীত মৌসুমে মৃত্যু কত। এ হিসাবে সবচেয়ে বেশি মৃত্যু রংপুরে হয়েছে। দ্বিতীয় অবস্থানে বরিশাল। এর পরে রয়েছে রাজশাহী, খুলনা, সিলেট, চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহ ও ঢাকা। প্রতি ১ হাজার বর্গকিলোমিটারে মৃত্যুর সংখ্যাও রংপুরে বেশি। এর পরে রয়েছে বরিশাল, রাজশাহী, খুলনা, সিলেট, ঢাকা, ময়মনসিংহ ও চট্টগ্রাম।
গবেষণাপত্রে দেখা যায়, রংপুরে দারিদ্র্যের হার ৪২ শতাংশ। সেখানে হতদরিদ্র ২৫ শতাংশের কিছু বেশি মানুষ। ২০২১ সাল পর্যন্ত আগের ১২টি শীত মৌসুমে রংপুরের সবচেয়ে বেশি শীত পড়েছে। জানুয়ারি মাসে সেখানে গড় তাপমাত্রা ছিল ১০ দশমিক ৭৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এরপর শীত বেশি পড়েছে রাজশাহীতে। তুলনামূলক কম শীত দেখা গেছে চট্টগ্রাম বিভাগে।
গবেষকরা জানান, শীতে মৃত্যু বেশি হয় শিশুদের। ২০২১ সাল পর্যন্ত আগে ১২টি শীত মৌসুমে যত মানুষ মারা গেছে, তার অর্ধেকের বেশির (৬৩৩টি) বয়স ছয় বছরের কম। ৬৫ বছরের বেশি বয়সী মানুষ মারা গেছেন ২৫৫ জন।