বিএ, এমএ পাস করে শুধু চাকরির পিছে না ছুটে আত্মকর্মসংস্থানের চেষ্টা করতে বলেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, ‘আত্মকর্মসংস্থানের চেষ্টাটাই হচ্ছে সব থেকে বড় কথা। কারণ বিএ, এমএ পাস করে শুধু চাকরির পিছে ছুটলেই চলবে না। নিজেরা নিজেদের কাজ করতে হবে। নিজের মাস্টার নিজেকেই হতে হবে, নিজে কাজ দিতে হবে।’
মঙ্গলবার ‘জাতীয় যুব দিবস’ এর উদ্বোধন এবং ‘জাতীয় যুব পুরস্কার’ বিতরণ অনুষ্ঠানে গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে প্রধানমন্ত্রী যুবকদের উদ্দেশে এসব কথা বলেন।
দেশকে উন্নত করতে ‘যে কোনো কাজ’ করার জন্য নিজেদেরকে প্রস্তুত রাখতে যুব সমাজের প্রতি আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘যে কোনো কাজ করে নিজের অর্থ নিজে উপার্জন করে নিজের পায়ে দাঁড়ানো– এটা অত্যন্ত গর্বের বিষয়। কারণ কোনো কাজকে আমরা ছোট করে দেখি না। কোনো কাজকে আমরা ছোট করে দেখব না।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের যুবকদের কর্মসংস্থানের জন্য আমরা একশ অর্থনৈতিক অঞ্চল সমগ্র বাংলাদেশে গড়ে তুলছি। যদি যথাযথভাবে প্রশিক্ষণ নিতে পারে, এই অর্থনৈতিক অঞ্চল, এখানে যে বিনিযোগ হবে, বিনিয়োগ হচ্ছে, যত বেশি বিনিয়োগ হবে, আমাদের দেশের ছেলে মেয়েদেরই কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হবে।’
করোনাকালে কৃষকদের ধান কেটে দিতে ছাত্রদের সহযোগিতার কথা ‘গর্বের সঙ্গে’ স্মরণ করে সরকারপ্রধান বলেন, ‘ঠিক এভাবেই যুব সমাজ যে কোনো কাজ করবার জন্য নিজেদেরকে প্রস্তুত রাখবে। যেটা আমাদের দেশকে উন্নত করবার ব্যবস্থা নেবে।’
মহামারীর মধ্যে যুব সমাজ যেভাবে মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে নানাভাবে সহযোগিতা করেছে, সেজন্য তাদের ধন্যবাদ জানিয়ে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী বলেন, ‘যে কোনো সংকট সমাধানে যুবকরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। বিশ্ব এগিয়ে যাচ্ছে। প্রযুক্তির নতুন নতুন আবির্ভাব, বিজ্ঞানের নতুন নতুন আবিষ্কার। তার সঙ্গে আমাদের তাল মিলিয়ে চলতে হবে। আর সেই কাজটা আমাদের যুব সমাজই করবে। ছাত্র, তরুণ– তারাই করবে।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা মনে করি, একটা প্রশিক্ষিত যুব শ্রেণি গড়ে তোলা এটা একান্তভাবে অপরিহার্য। তবে আজকে আমাদের কতসংখ্যক প্রশিক্ষিত যুবক রয়েছে তার একটা ডেটাবেইস তৈরির পদক্ষেপ চলছে। সেটা হলে পরে আমরা জানতে পারব কর্মসংস্থান কাদের হয়েছে, আর কাদের হয়নি। যারা কর্মসংস্থানের সুযোগ পাচ্ছে না তারাও যেন কর্মসংস্থানের সুযোগ পায়, সেই ব্যবস্থাটা আমরা নিতে চাই।’
যুবসমাজকে দেশের সবচেয়ে বড় শক্তি হিসেবে চিহ্নিত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের সব থেকে বড় শক্তিই হচ্ছে যুবসমাজ। আজকে পৃথিবীর অনেক দেশ বয়োবৃদ্ধ দেশ হয়ে গেছে। কিন্তু এখনও বাংলাদেশ আমাদের কর্মক্ষম যুবশ্রেণি রয়ে গেছে, এটা একটি বিরাট শক্তি। এই শক্তিটাকে আমাদের যথাযথভাবে কাজে লাগাতে হবে।’
এসময় ৪০ হাজার দক্ষ চালক তৈরিতে প্রশিক্ষণের যে উদ্যোগ নেয়া হয়েছে, তার জন্য যুব মন্ত্রণালয়কে ধন্যবাদ জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের অত্যন্ত সুপ্রশিক্ষিত চালক প্রয়োজন। এখানে আমাদের বিরাট ঘাটতি রয়ে গেছে। মানুষের আর্থসামাজিক উন্নতি যত হচ্ছে, গাড়ি কেনারও প্রবণতা বাড়ছে। তবে আমাদের দেশে গাড়ি অধিকাংশ নিজে চালায় না। ড্রাইভার দিয়ে চালায়, তাতে আমাদের যুবকদের কর্মসংস্থান হয়, এটা ঠিক। কিন্তু সেই সঙ্গে আমি মনে করি, যদি দক্ষতা অর্জন করা যায় তাহলে তাদেরও ব্যাপক কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে।’
এ বছর আত্মকর্মসংস্থানে দৃষ্টান্ত স্থাপনের স্বীকৃতি হিসেবে ১৫ জন যুবককে এবং স্বেচ্ছাসেবায় অনন্য অবদান রাখায় ৬ যুবসংগঠককে দেয়া হয়েছে জাতীয় যুব পুরস্কার। প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে সবার হাতে পুরস্কার তুলে দেন যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল।