মমতা মন্দ্যোপাধ্যায়, পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যন্ত্রী ও সর্বভারতীয় তৃণমূল কংগ্রেসের প্রতিষ্ঠাতা-সভানেত্রী। দীর্ঘ চড়াই উৎরাই পার করে রাজনৈতিক অঙ্গনে করে নিয়েছেন তার শক্ত অবস্থান। আর তার জেরেই টানা তৃতীয়বারের মতো ক্ষমতায় তাঁর দল তৃণমূল।
আত্মপ্রত্যয়ী এই মানুষটির জন্ম ১৯৫৫ সালের ৫ জানুয়ারি, কলকাতায়। খুব সাধারণ একটি পরিবারে তাঁর বেড়ে ওঠা।
রাজনৈকিত চর্চার শুরু কলেজ জীবন থেকে। সে সময় কংগ্রেস দলের এক সাধারণ কর্মী হিসেবেই যোগ দেন তিনি। ১৯৭৬ সালে মাত্র ২১ বছর বয়সেই তিনি পশ্চিমবঙ্গের মহিলা কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক হন। কয়েক বছরের মধ্যেই হন নিখিল ভারত যুব কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক।
মমতা ছিলেন ইন্দিরা গান্ধীর অনুরাগী। তার প্রাথমিক রাজনৈতিক জীবন কাটে সাবেক রাষ্ট্রপতি ও কংগ্রেস নেতা প্রণব মুখার্জির ছায়ায়।
কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমএ ও যোগেশচন্দ্র কলেজ থেকে আইনের ডিগ্রি নেবার পর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রথম পেশা ছিল স্কুল শিক্ষকতা।
১৯৮৪ সালে লোকসভা নির্বাচনে জয়ী হন মমতা। ওই বছরেই তিনি দক্ষিণ কলকাতা থেকে প্রার্থী হিসেবে দাঁড়ান। তবে সে যাত্রা উৎরে উঠতে পারেননি। ১৯৮৯ সালেও একই এলাকা থেকে হয় ভরাডুবি। তবে থেমে থাকেননি তিনি। রাজনৈতিক অঙ্গনের তাঁর অক্লান্ত পরিশ্রম ১৯৯১ সালের লোকসভা নির্বাচনে তাকে ফিরিয়ে দিয়েছিল হারানো আসন। জয়ের এই ধারাবাহিকতা তিনি ধরে রেখেছিলেন ২০০৯ সালের সাধারণ নির্বাচন পর্যন্ত।
শুরুতে কট্টর কংগ্রেস সমর্থক থাকলেও ১৯৯৭ সেলে সেই ভাবমূর্তিতে কিছুটা বদল আনেন মমতা। ওই বছরই কংগ্রেস থেকে বেরিয়ে যান। ১৯৯৮ সালে গঠন করেন নতুন দল ‘তৃণমূল কংগ্রেস’। কিছুকালের মধ্যেই এটি পরিণত হয় বামফ্রন্ট-শাসিত পশ্চিমবঙ্গের অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক দলে।
এরপর আর থেমে থাকতে হয়নি তাঁকে। ২০১১ সালে পশ্চিমবঙ্গের প্রথম নারী মুখ্যমন্ত্রী হন মমতা। ২০১৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে বাম-কংগ্রেস জোটের বিরুদ্ধে ২১১টি আসনে জিতে তৃণমূল নেত্রী মমতা দ্বিতীয়বার রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী হন।
২০২১ সালে শক্ত প্রতিপক্ষ কেন্দ্রীয় ক্ষমতাসীন দল বিজেপির বিরুদ্ধে লড়েও নিজেদের অবস্থান অটুট রাখে তৃণমূল কংগ্রেস। টানা তৃতীয়বারের মতো মহানগর ছেয়ে দেয় সবুজ ঘাস ফুলে।
সাধাসিধে জীবনযাপনে অভ্যস্ত লড়াকু এই নেত্রী পরিচিত বাংলার ‘দিদি’ হিসেবেই। এ নিয়ে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর কটাক্ষের কারণও হয়েছেন তিনি। তবে ভোটের ফলেই তার জবাব দিয়েছেন মমতা।
২০১২ সালে টাইম ম্যাগাজিনের করা বিশ্বের ১০০ জন প্রভাবশালী ব্যক্তির তালিকায় তার নাম উঠে আসে। একই বছর ব্লুমবার্গ মার্কেটস তাকে বিশ্ব অর্থনীতিতে প্রভাবশালী ৫০ ব্যক্তির তালিকায় রেখেছিল। ২০১৮ সালে স্কচ বর্ষসেরা মুখ্যমন্ত্রী সম্মাননা লাভ করেন মমতা মন্দ্যোপাধ্যায়।