তিস্তা নদীর পানিবণ্টন চুক্তি এবং সীমান্ত হত্যা বন্ধ করার বিষয়ে আবারও বাংলাদেশকে আশ্বাস দিয়েছে ভারত। বৃহস্পতিবার (১৭ ডিসেম্বর) প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ভার্চুয়াল বৈঠকে এ আশ্বাস দেয়া হয়।
দুই প্রধানমন্ত্রীর বৈঠক শেষে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় আয়োজিত সংবাদ সম্মেলন এবং বৈঠকের যৌথ ঘোষণায় এই তথ্য জানানো হয়।
শীর্ষ সম্মেলনের যৌথ এ ঘোষণায় ২০১১ সালে দুইপক্ষের সম্মতির ভিত্তিতে তিস্তার পানি বণ্টনে দ্রুত সময়ে অন্তর্বর্তী চুক্তির বিষয়টি তুলে ধরেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ওই সালের সেপ্টেম্বরে ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের ঢাকা সফরের সময় তিস্তার পানিবণ্টন চুক্তি সইয়ের কথা ছিল। কিন্তু, পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরোধিতায় তা আটকে যায়। নরেন্দ্র মোদীর বিজেপি সরকার ভারতের ক্ষমতায় আসার পর তিস্তা চুক্তি নিয়ে আশার কথা শোনা গেলেও মমতার মত বদলায়নি।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এক্ষেত্রে ভারত সরকারের আন্তরিক প্রতিশ্রুতি এবং অব্যাহত প্রচেষ্টার বিষয়টি পুনর্ব্যক্ত করেছেন।
তিস্তা সম্পর্কে আলোচনা প্রসঙ্গে বৈঠকের পর সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন জানান, এই বিষয় নিয়ে ভারত সরকার আগেই রাজি হয়ে গিয়েছিল। সব কিছু প্রস্তুত থাকলেও এখনো তা বাস্তবায়ন হয় নি। তাই আবারো বিষয়টি তোলা হয়েছে।
তিনি আরো জানান, এটি বাংলাদেশের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এর পাশাপাশি আরও ছয়টি নদীর কথাও আলোচনায় এসেছে। তিস্তা নিয়ে তারা বলেছেন, সকল পক্ষকে একত্র করার জন্য তারা আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছেন।
ঢাকায় নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার বিক্রম কুমার দোরাইস্বামী এ বিষয়ে বলেন, ’দুই প্রধানমন্ত্রী তিস্তা নিয়ে আলোচনা করেছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশের দিক থেকে এ ইস্যু সমাধানের ওপর গুরুত্ব দেন। এই চুক্তির বিষয়ে আমরাও সমান গুরুত্ব দিয়ে থাকি। দুই প্রধানমন্ত্রী এক্ষেত্রে প্রেক্ষাপট সম্পর্কে তাদের বোঝাপড়া তুলে ধরেছেন। আমাদের প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, সংবিধান অনুসারে সব পক্ষকে একসঙ্গে নিতে হয় আমাদের।’
এছাড়া, সীমান্ত হত্যার বিষয়ে বাংলাদেশের উদ্বেগ নিয়ে আলোচনা হওয়ার কথা উঠে এসেছে শীর্ষ সম্মেলেনের এ যৌথ বিবৃতিতে। সেখানে বলা হয়েছে, দুই নেতাই একমত হয়েছেন, সীমান্তে বেসামরিক লোকজনের প্রাণহানি একটি উদ্বেগের বিষয় এবং সংশ্লিষ্ট সীমান্তরক্ষী বাহিনীকে নির্দেশনা দিয়েছেন, যাতে এ ধরনের ঘটনা শূন্যতে নামিয়ে আনা সম্ভব হয়।
পাশাপাশি, দুই প্রধানমন্ত্রী বিডিআর এবং বিএসএফের সমন্বিত সীমান্ত ব্যবস্থাপনা কার্যক্রমের পূর্ণ বাস্তবায়নের উপরও জোর দিয়েছেন বলে উল্লেখ করা হয় যৌথ এ বিবৃতিতে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরো জানান, ভারত, থাইল্যান্ড ও মিয়ানমারের মধ্যে যে আঞ্চলিক সড়ক হচ্ছে, সেটাতে যুক্ত হওয়ার জন্য বাংলাদেশের পক্ষ থেকে বৈঠকে প্রস্তাব দেয়া হয়েছে।
এর আগে, দুই দেশের প্রধানমন্ত্রীর ভার্চুয়াল বৈঠকের অংশ হিসেবে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে সাতটি সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) সই করা হয়েছে। যা দুই দেশকে বাণিজ্য, জ্বালানি, কৃষিসহ সাতটি খাতে সহযোগিতা করবে।
এর মধ্যে, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্মৃতি জাদুঘর এবং ভারতের জাতীয় জাদুঘরের মধ্যে একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়েছে। নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে এতে স্বাক্ষর করেন, বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘরের কিউরেটর সাবেক সচিব নজরুল ইসলাম খান ও ভারতের জাতীয় জাদুঘরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক সুব্রত নাথ।