fbpx

৩০ বছর বনবাসে থাকা ওহ গো সেঙ্গ

Pinterest LinkedIn Tumblr +
Advertisement

সিঙ্গাপুরকে বলা হয় বিশ্বের সবচেয়ে নগরায়িত দ্বীপরাষ্ট্র। চোখ ধাঁধালো আকাশচুম্বী ভবন, বিলাসবহুল অ্যাপার্টমেন্টে তাক লাগিয়ে দেয় গোটা বিশ্বকে।

এই ঝাঁচকচকে সভ্যতাকে তুড়ি মেরে এই দেশেরই এক ব্যক্তি বেছে নেন বন্য জীবন। দীর্ঘ ত্রিশ বছর বনের মধ্যে খুপরি ঘরে থাকেন ওহ গো সেঙ্গ নামের এই ব্যক্তি। ৭৯ বছর বয়সী এই মানুষটি স্বেচ্ছায় বেছে নিয়েছিলেন এই নির্বাসন।

ওহ গো তার জীবনের পুরোটা সময়ই কাটিয়েছেন খুব সাধারণ ভাবে। ৭৯ বছর বয়সেও তার সুস্থ ও সতেজতা চোখে পড়ার মতো। সংবাদমাধ্যম বিবিসি জানিয়েছে, তার থেকে অর্ধেক বয়সীদের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে পারেন ওহ গো।

চলতি মাসের শুরুর দিকেই, ওহ গোর বনের জীবন গণমাধ্যমে উঠে আসে। ওহ গোর তারুণ্যে হতবাক হয় গোটা বিশ্ব।

অনেকেই প্রশ্ন করেন, কেন তাকে সাহায্য করা হয়নি? কিভাবে তিনি লোকোচক্ষুর আড়ালে ৩০ বছর পার করলেন? এমন শত প্রশ্ন নিয়ে কৌতূহলের শেষ নেই মানুষের।

ওহ গোকে খুঁজে পাওয়া গিয়েছিল বড় দিনে। বনের কাছে লোকালয়ে লাইসেন্স ছাড়া সবজি ও মরিচ বিক্রি করছিলেন তিনি। এগুলো তার নিজের ফলানো সবজি। এই নিয়েই চোখে পড়েছিলেন তিনি। গণমাধ্যম জানায়, মহামারির আগে এই বাজারে এসে তিনি ফুল বিক্রি করতেন। আর সেই টাকা দিয়েই দরকারি জিনিস কিনে নিয়ে যেতেন।

৩০ বছর বনবাসে থাকা ওহ গো সেঙ্গ

বনের মধ্যে নিজের বাগানে ওহ গো। ছবি: বিবিসি

ওহ গো ধারণা করছেন, বাজারে সবজি বিক্রির সময় এক ক্রেতার সাথে দরাদরিতে না বনায় তিনি তার সম্পর্কে অভিযোগ করেন। আর এতেই রাস্তার পাশে অবৈধভাবে সবজি বিক্রির জন্য সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা তাকে চার্জ করেন। এই ঘটনার সময় সেখান দিয়ে যাচ্ছিলেন ভিভিয়ান পান নামের এক দাতব্য কর্মী । তিনি বিষয়টি ভিডিও করে রাখেন। এবং এটি তার ফেসবুকে পোস্ট করেন। আর নিমিষেই তা ভাইরাল হয়ে যায়। এরপরই ওহ গো স্থানীয় সংসদ সদস্য লিয়াং ইং হাওয়ার নজরে আসে। তিনিই আবিষ্কার করেন ওহর ৩০ বছরের বনের জীবনের কাহিনী।

অর্থাৎ, লোকালয়ে এসে পণ্য বিক্রি করে গেলেও কেউ জানতেনই না, ওহ ত্রিশ বছর ধরে একা বনে থাকছেন।

বিবিসি জানায়, ওহ গো বড় হয়েছিলেন তার পরিবারের সাথে সুনগেই তেনহা গ্রামে। ১৯৮০ সালের দিকে বহুতল ভবন নির্মাণের জন্য বাসিন্দাদের সাময়িকভাবে সরিয়ে নেয়া হয়েছিল। সরকারি ভবনেই বাসিন্দারা ঘর পেয়েছিল। কিন্তু ওহ গো ঘর পাননি। যদিও তার ভাই সরকারি একটি ফ্লাট পেয়েছিলেন। এবং সেখানেই তাকে থাকার জন্য অনুরোধ করা হয়েছিল। কিন্তু ওহ গো সেখানে ওঠেননি। জানিয়েছিলেন তার ভার পরিবারকে বহন করতে দিতে চান না তিনি।

এরপরই তিনি পুরোনো বাড়ির কাছে একটি বনের মধ্যে চলে যান। আর সেখানেই কাঠখড় দিয়ে বানিয়ে নেন মাথা গোঁজার ঠাই। খোলা আকাশের নিচেই চলতো তার রান্না-বান্না। খুপরি ঘরের কাছেই করেন বাগান। সেখানেই ফলান নানান রকম ফুল, ফল আর সবজি।

বন্য জীবনে কতটা অসুবিধা পড়তে হয়েছিল তাকে, এই প্রশ্নের উত্তের তিনি বলেন, ‘সবচেয়ে অসুবিধার কারণ ছিল ইঁদুর। এগুলো আমার ঘরে ঢুকতো। এবং ঘর ও কাপড়-চোপড় খেয়ে টুকরো করে ফেলতো’।

ওহ গো অনেক সময় জীবিকার জন্য প্রতিবেশী ইন্দোনেশিয়ার বাতামে যেতেন। সেখানেও সবজি বিক্রি করতেন। সেখানেই তার সাথে পরিচয় হয়েছিল ম্যাডাম তাচিহর সাথে। এক সময় তাকেই বিয়ে করেন ওহ। তাচিহ ও ওহর ১৭ বছর বয়সী একটি মেয়েও আছে। এবং প্রতি সপ্তাহে তিনি তাদের সাথে দেখা করতে যেতেন।

৩০ বছর বনবাসে থাকা ওহ গো সেঙ্গ

নতুন ঘরে ওহ গো। ছবি: বিবিসি

গণমাধ্যমকে তার মেয়ে জানান, বাবার বন্য জীবন সম্পর্কে তাদের কোনো ধারণাই ছিল না।

সিঙ্গাপুরে ঘর নেই এমন মানুষ খুব কমই আছেন। ওহ গোর ঘটনা সামনে আসার পর চলতি মাসেই তাকে একটি ঘর উপহার দিয়েছে স্থানীয় কর্তৃপক্ষ। এক বেডের সেই ঘরে তার সাথে রয়েছে আরও এক ব্যক্তি। এই ফ্লাটে তাকে টেলিভিশন, ফার্নিচারসহ নানা রকম জিনিস দিয়ে সাহায্য করেছেন অনেকে। ওহ জানান, ত্রিশ বছর পর প্রথম তিনি টিভি দেখেছেন।

তিনি জানান, স্থানীয় কর্তৃপক্ষ পরবর্তীতে তার স্ত্রী ও কন্যাকে সাহায্যের জন্যও এগিয়ে আসবে বলে জানিয়েছে।

শুধু ঘর নয়, নতুন চাকরিও পেয়েছেন ওহ গো সেঙ্গ। বিদেশী শ্রমিকদের গাড়ির চালক হিসেবে কাজ করছেন তিনি। সেই সাথে করছেন বাগানও। প্রথমবারের মতো এবারই তিনি পরিবারের সাথে চন্দ্র বর্ষ ( লুনার নিউ ইয়ার) উদযাপন করেন।

নতুন করে নগর জীবনকে উপভোগই করছেন তিনি। নতুন বছর উদযাপন করে তিনি বলছেন, ‘আমি অনেক খেয়েছি। এখানে নানা রকম খাবার ছিল যা অনেক বছর খাইনি। খুব সুন্দর। ত্রিশ বছরের মধ্যে প্রথম টেলিভিশন দেখিছি।’

তবে ওহ এখনও সেই বন্য স্বাধীনতা মিস করেন। বলেন, ‘অনেক বছর ওখানে থেকেছি আমি। স্বাভাবিক ভাবেই মায়া পড়ে গেছে।’

ওহ গো সেঙ্গ বলেন, ‘এখনও আমি প্রতিদিন বনে যাই। কাজ শুরু হওয়ার আগেই রাত তিনটায় ঘুম থেকে উঠি। পোশাক পরি। তারপর বনের মধ্যে আমার বাগানটা দেখে আসি।’

 

Advertisement
Share.

Leave A Reply