সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) সাবেক অধ্যাপক ও জনপ্রিয় লেখক অধ্যাপক মুহাম্মদ জাফর ইকবালের আশ্বাসে সাত দিন পর আমরণ অনশন ভাঙলের শিক্ষার্থীরা। বুধবার সকাল ১০ টা ২০ এর দিকে অধ্যাপক জাফর ইকবাল ও তাঁর সহধর্মিনী ইয়াসমিন হক শিক্ষার্থীদের পানি পান করিয়ে এ অনশন ভাঙান।
এসময় শিক্ষার্থীরা তাঁদের জড়িয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন। তবে অনশন ভাঙলেও উপাচার্য ফরিদ উদিন আহমেদ পদত্যাগ না করা পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার কথা বলেন।
এর আগে সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন আহমেদের পদত্যাগের দাবিতে আমরণ অনশন প্রত্যাহারের ঘোষণা দেয় আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। শাবিপ্রবির সাবেক অধ্যাপক মুহম্মদ জাফর ইকবালের দেয়া আশ্বাসের পরিপ্রেক্ষিতে তারা এ অনশন ভাঙতে রাজি হন।
তারা জানান, হাসপাতালে যে সব শিক্ষার্থী চিকিৎসাধীন আছেন, তারা ক্যাম্পাসে এলে জাফর ইকবালের উপস্থিতিতে বুধবার সকাল ৮টার দিকে একযোগে অনশন ভাঙবেন।
মঙ্গলবার গভীর রাতে ঢাকা থেকে স্ত্রী সাবেক অধ্যাপক ইয়াসমিন হককে নিয়ে শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ে যান জনপ্রিয় এই লেখক। ভোর ৪টার দিকে অনশনস্থলে গিয়ে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনা করেন জাফর ইকবাল।
তিনি জানান, উচ্চপর্যায়ে তার আলোচনা হয়েছে। তাদের কাছ থেকে দাবি পূরণের প্রতিশ্রুতি পেয়েছেন। এ কারণেই তিনি ক্যাম্পাসে ছুটে এসেছেন। অনশন না ভাঙিয়ে তিনি ফিরে যাবেন না বলেও জানান। অবশেষে তাঁর অনুরোধে অবস্থান থেকে সরে আসে শিক্ষার্থীরা অনশন ভাঙার প্রতিশ্রুতি দেন।
প্রিয় শিক্ষককে কাছে পেয়ে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন শিক্ষার্থীরা। তার কাছে উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন আহমদের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ তুলে ধরেন।
তিনি শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে বলেন, ‘তোমরা কেন তোমাদের জীবন অপচয় করবা? তোমাদের বাঁচতে হবে। তোমরা ইতিমধ্যেই বিজয়ী হয়ে গেছ। সারা দেশের মানুষ তোমাদের পক্ষে দাঁড়িয়েছে। দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসিদের ঘুম হারাম করে দিয়েছ।‘
‘জীবন অনেক মূল্যবান। তুচ্ছ বিষয়ে জীবন অপচয় করা যাবে না।’
তিনি আরও বলেন, ‘আজ উচ্চপর্যায়ের এক প্রতিনিধিদলের সঙ্গে আমার বাসায় আলোচনা হয়েছে। তারা বাসায় এসেছিল। তারা প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। তোমরা যা চাইছ, যে দাবি তোমাদের সেটা পূরণ হবে। তোমাদের অছিলায় বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ঠিক হবে।
‘তাদের সঙ্গে আলোচনার পর আমরা দেরি করিনি, সরাসরি এখানে চলে এসেছি। আমরা তোমাদের অনশন না ভাঙিয়ে যাব না।’
শিক্ষার্থীদের তিনি জানান, নিশ্চিত হয়েই এসেছেন যে তাদের দাবি পূরণ হবে।
এ বিষয়ে অনশনকারী শিক্ষার্থী আবদুল্লাহ আল রাফি বলেন, ‘স্যার বলেছেন, তাকে আশ্বাস দিয়ে পাঠানো হয়েছে। উপাচার্যের জন্য অনশন করে নিজের ক্ষতি করা ঠিক না। তাই আমাদের অনশন ভাঙার অনুরোধ ও আহ্বান জানান তিনি। তবে আমাদের আন্দোলন চলমান থাকবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা যেন নিজেদের ক্ষতি না করি এবং যারা অসুস্থ অবস্থায় হাসপাতালে আছেন, যাদের অবস্থা খুব সংকটাপন্ন, সব বিষয় বিবেচনা করে আমরা যাতে অনশন ভেঙে ফেলি, সেই আহ্বান তিনি জানিয়েছেন। পরবর্তী সময়ে সিদ্ধান্ত নিয়েছি, স্যারের ওপর বিশ্বাস রেখে সবাই মিলে অনশন ভেঙে ফেলি।’