করোনাভাইরাসের কারণে গত বছরের ১৭ মার্চ থেকে প্রায় এক বছরেরও বেশি সময় ধরে দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ রয়েছে। এর ফলে, দেশের ৫৯ লাখ ২০ হাজার প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষার্থী ন্যূনতম শিক্ষা থেকেও বঞ্চিত এখন।
শহর ও গ্রামের প্রায় ৬ হাজার ৯৯ জন অভিভাবকের ওপর জরিপের ভিত্তিতে যৌথভাবে গবেষণাটি করেছে পাওয়ার অ্যান্ড পার্টিসিপেশন রিসার্চ সেন্টার (পিপিআরসি) এবং ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অব গভর্নেন্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (বিআইজিডি)।
আজ সোমবার (১০ মে) অনলাইনে এক অনুষ্ঠানে গবেষণার ফলাফল পিপিআরসি’র নির্বাহী চেয়ারম্যান হোসেন জিল্লুর রহমান এবং বিআইজিডি’র নির্বাহী পরিচালক ইমরান মতিন সাংবাদিকদের সামনে তুলে ধরেন।
গবেষণার ফলাফলে বলা হয়েছে, বর্তমানে দেশে প্রাথমিকের ১৯ শতাংশ ও মাধ্যমিকের ২৫ শতাংশ শিক্ষার্থী লেখাপড়া শিখতে না পারার ঝুঁকিতে রয়েছে। আর পড়াশোনার ক্ষতি এড়াতে দেশের ৫১ শতাংশ প্রাথমিক ও ৬১ শতাংশ মাধ্যমিক শিক্ষার্থী কোচিং ও গৃহশিক্ষকের মাধ্যমে পড়ালেখা চালিয়ে নেওয়ার সুযোগ পেয়েছে।
গবেষণায় আরও বলা হয়, মহামারির এই সময়ে শিক্ষার ব্যয় গ্রামীণ পরিবারে ১১ গুণ ও শহুরে পরিবারে ১৩ গুণ বেড়েছে।
জরিপে অংশ নেওয়া ৯৭ দশমিক ৭ শতাংশ প্রাথমিক শিক্ষার্থীর অভিভাবক এবং মাধ্যমিকের ৯৬ শতাংশ অভিভাবকের দেওয়া তথ্যে ইতিবাচক দিকও উঠে এসেছে। এসব অভিভাবকরা বলেছেন, আবারও স্কুল খুললে তারা সন্তানদেরকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পাঠাবেন। আর তাই গবেষণায় করোনাভাইরাসের গতিবিধি দেখে আবারও স্কুল খোলার ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়েছে।
গবেষণাটি ২০২০ সালের এপ্রিল থেকে ২০২১ সালের মার্চ পর্যন্ত জরিপের ভিত্তিতে করা হয়। এর পাশাপাশি, মহামারির মধ্যে দেশে দারিদ্র্যের রূপ কিভাবে পরিবর্তিত হচ্ছে, তা জানতে পিপিআরসি এবং বিআইজিডি যৌথভাবে দেশজুড়ে তিন ধাপে টেলিফোন জরিপ করে।
পিপিআরসি’র চেয়ারম্যান ড. হোসেন জিল্লুর রহমান বলেন, শিক্ষার্থীদের পড়ালেখার যে ক্ষতির কথা গবেষণায় উঠে এসেছে, বাস্তবে ক্ষতি হয়েছে তার চেয়ে অনেক বেশি। তাদের সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া না হলে শিক্ষার্থীরা ড্রপআউটের ঝুঁকিতে পড়বে বলে আশংকা প্রকাশ করেন তিনি।
বিআইজিডি’র নির্বাহী পরিচালক ইমরান মতিন এ বিষয়ে বলেন, স্কুল খোলার পর ঝুঁকিতে থাকা শিক্ষার্থীদের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে অবশ্যই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে।
সরকারের সর্বশেষ ঘোষণা অনুযায়ী, ২৩ মে থেকে স্কুল–কলেজ এবং ২৪ মে থেকে বিশ্ববিদ্যালয় খোলার কথা রয়েছে। কিন্তু করোনাভাইরাসের বর্তমান পরিস্থিতি একইরকম থাকলে ঘোষিত সময়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলবে কি না, তা এখন প্রশ্নের মুখে।